আগৈলঝাড়ায় দু’মাস আটকে রেখে ভারত প্রবাসীর সম্পত্তি লিখে নিয়েছে চেয়ারম্যান

অপহরন করে দু’মাস আটকে রেখে প্রাণনাশের হুমকির মুখে ভারতে বসবাস করা এক সংখ্যালঘুর (ভারত প্রবাসী) প্রাপ্ত প্রায় কোটি টাকার পৈত্রিক সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন প্রভাবশালী এক ইউপি চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় ভূক্তভোগীর বড় ভাই স্থানীয় সংসদ সদস্যর কাছে বিচার দাবি করেছিলেন। সাংসদ ইউপি চেয়ারম্যানকে পুরো সম্পত্তি ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া সত্বেও গত নয় মাসেও তা ফেরত দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের কোদালধোয়া গ্রামের। উল্টো অভিযোগকারীর সম্পত্তিও দখল করার হুমকি দেয়া হয়েছে। ফলে ওই গ্রামের মৃত অন্নদা চরণ মল্লিকের অসহায় পুত্র নারায়ন মল্লিক (৫২) তার ভাইয়ের ন্যায় চেয়ারম্যান কর্তৃক বাকি পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করার ভয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নারায়নের ভাই গৌরাঙ্গ লাল মল্লিক (৪৮) বুধবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তিনি বিগত ১৫বছর থেকে ভারতে বসবাস করে আসছেন। গত বছরের (২০১৪সালের) ২৬ এপ্রিল তিনি তার ভাইয়ের কাছে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। ওই বছরের ২৮এপ্রিল সকালে বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিপুল দাস তার সহযোগীদের নিয়ে নাটকীয়ভাবে তাকে অপহরণ করে বাকেরগঞ্জে তার (বিপুল) এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে আটকে রাখেন। টানা দু’মাস সেখানে তাকে আটক করে রাখা হয়। এসময় তার পৈত্রিক সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান বিপুল তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে তাকে জিম্মি করে বরিশাল নগরীর একটি বাসায় এনে একজন সাবরেজিষ্ট্রারের উপস্থিতিতে তার কাছ থেকে পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া বিভিন্ন দাগ ও খতিয়ানের ৩ একর ৬২ শতক সম্পত্তি লিখে নেয়া হয়।ওই সম্পত্তি চেয়ারম্যান বিপুল দাস তার স্ত্রী ঝুমা দাস ও নিকট আত্মীয় ঝালকাঠীর নলছিটির বিরাঠ গ্রামের সত্যজিৎ খাসকেল, বাকেরগঞ্জের মাকিন হেলেঞ্চা গ্রামের নিত্যরঞ্জন শীলের নামে দলিল করে নেয়। পরবর্তীতে তাকে কোন টাকাপয়সা না দিয়েই প্রাণনাশের হুমকির মুখে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

নারায়ন মল্লিক অভিযোগ করেন, ভারত থেকে তার কাছে গ্রামে বেড়াতে আসা ছোট ভাই গৌরাঙ্গকে না পেয়ে তিনি সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ভাইকে (গৌরাঙ্গ) অপহরনের অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন যার নং ৪৩২। পরবর্তীতে দীর্ঘ দু’মাস পর ভারতে পৌঁছে তার ভাই গৌরাঙ্গ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি তাকে জানায়। উপায়অন্তুর না পেয়ে তিনি বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে অবহিত করেন। তিনি (সাংসদ) পুরো ঘটনা শুনে চেয়ারম্যান বিপুলকে পুরো সম্পত্তি নারায়নের কাছে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। অভিযোগে আরও জানা গেছে, সাংসদের কাছে বিচার দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান বিপুল তাকে (নারায়ন) বিভিন্নধরনের ভয়ভীতিসহ গৌরাঙ্গর ন্যায় তার সম্পত্তিও দখল করার হুমকি প্রদর্শন করেন। এমনকি সাংসদের নির্দেশ উপেক্ষা করে সম্পত্তি ফেরত না দিয়ে ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান বিপুল গৌরাঙ্গর কাছ থেকে প্রতারণা করে রাখা সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

গৌরাঙ্গ লাল মল্লিক আরও অভিযোগ করেন, অতিসম্প্রতি তিনি স্ব-শরীরে বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যর কাছে জানাতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। এখবর পেয়ে চেয়ারম্যান বিপুল ও তার সহযোগীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভাইয়ের বাড়িসহ নিকট আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খুঁজতে থাকেন। এ কারণে প্রাণভায়ে তিনি নিজ এলাকা ছেড়ে এখন আত্মগোপন করেছেন। নারায়ন মল্লিক জানান, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী বিপুল দাস আগামী ২২ মার্চের নির্বাচনে জয়লাভ করার পর গৌরাঙ্গর ন্যায় তার প্রাপ্ত পৈত্রিক সম্পত্তিও লিখে নিয়ে ভারতে তাড়িয়ে দেয়ায় হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। প্রভাবশালী বিপুল ও তার সহযোগীদের অব্যাহত হুমকির মুখে পরিবার-পরিজন নিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি হারানোর আশংকায় অসহায় নারায়ন মল্লিক এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি (নারায়ন) স্থানীয় সংসদ সদস্যর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।গৌরাঙ্গকে অপহরনের পর তার সম্পত্তি লিখে নেয়া ও নারায়নকে হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান বিপুল দাস বলেন, গৌরাঙ্গ স্ব-ইচ্ছায় আমার কাছে তার প্রাপ্তসম্পত্তি বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তারা মনগড়া অভিযোগ দায়ের করছেন।