01নিজের সহযোগীদের কাছেই প্রতারিত হয়েছিলেন এটিএম জাতিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা শজেপ্যান মাজুরেক ওরফে পিওটর! এ যেন রীতিমতো ‘চোরের ওপর বাটপারি’। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ছাড়ার আগে হোটেল হলিডে প্লানেটে পিওটরকে মাতাল করে তার ২১ লাখ টাকার ব্যাগ হাতিয়ে নেয় তার দুই সহযোগী বুলগেরিয়ান রোমিও ও ইউক্রেনের নাগরিক এন্ডিয়ারসন ওরফে এন্ডি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে ছয় দিনের রিমান্ডে থাকা পিওটর এ দাবি করেছেন। অন্যদিকে, পিওটরের বাসা থেকে জব্দকৃত ল্যাপটপটি রবিবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবরেটরিতে পাঠাবেন তদন্ত কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার জানান, পিওটরের কাছ থেকে অনেক তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে। তবে তার দেওয়া তথ্যগুলো কতটুকু সঠিক তা যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তে অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুলশান-২ এর ১১৩ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাসায় পিওটরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি অত্যাধুনিক মডেলের চার চাকার মোটরসাইকেল, সাদা রঙের একটি জি-প্রিমিও প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৪৯৫৯), একটি ল্যাপটপ ও ৪টি ব্যবহূত কার্ড জব্দ করে পুলিশ। বিলাসবহুল ওই মোটরসাইকেলটি নিয়ে পিওটর মাঝেমধ্যেই বের হতো রাজধানীর সড়কে। তবে বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে পিওটরের কোনো একাউন্ট নম্বর নেই। জালিয়াতির টাকাগুলো হুন্ডির মাধ্যমেই বিদেশে পাচার করে আসছিল সে। শেষ কিছুদিন প্রতিদিনকার খরচের টাকাগুলো দেশীয় ব্যাংকের গ্রাহকদের সঞ্চিত টাকা জালিয়াতি করেই সংগ্রহ করত পিওটর। সর্বশেষ জব্দকৃত কার্ড কোন গ্রাহকের ছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট বিদেশি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে যথাযথ চ্যানেলে অবহিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা আশা করছি, ল্যাপটপ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। প্রত্যেক মানুষই তার ব্যক্তিগত সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিজের ল্যাপটপে সংরক্ষণ করে রাখে। সিআইডির ওই বিশেষায়িত স্ক্যানার মেশিনে ল্যাপটপটি প্রবেশ করানো হলেই বোঝা যাবে পিওটর কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তিনি আরও বলেন, পিওটর অনেক ধূর্ত প্রকৃতির, একেক সময় সে একেক কথা বলছে। এসব তথ্যের কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা তাও বোঝা যাচ্ছে না। ল্যাপটপ থেকে যদি কোোন তথ্য পাওয়া যায় তাহলে সে তা অস্বীকার করতে পারবে না। তবে বিপুল পরিমাণ টাকা যে সে জালিয়াতি করে তুলে নিয়েছে এ বিষয়টি সে শুরু থেকেই স্বীকার করে আসছে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত বেসরকারি তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয় চক্রটি। টাকা হাতিয়ে নিতে তারা স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকদের গোপন তথ্য চুরি করে। এরপর ঘটনার শিকার ২১ জন সাধারণ গ্রাহক ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল), সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে টনক নড়ে। এ সেক্টরের কড়া নিরাপত্তা সুরক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকও দ্রুত এগিয়ে আসে। ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শাহ্জাহানের নেতৃত্বে একটি দল পিওটরসহ সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে গত সোমবার গ্রেফতার করে আদালতের নির্দেশে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয়।