10জন্ম থেকেই তার ডান হাত অচল। এরপরও সেই অচল হাতেই চলে পড়াশোনা। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে দেখান কৃতিত্ব। এই ধারবাহিকতায় অর্জন করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। ভেবেছিলেন পড়াশোনা শেষে চাকরিতে প্রবেশ করবেন। কিন্তু স্বপ্ন আর সত্যি হয়ে উঠেনি। সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ বেশ কৃতিত্বের সঙ্গে পাড়ি দিয়েও চাকরি জোটেনি তার কপালে।

তাই বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর মাহাফুজার রহমান নামের এক প্রতিবন্ধী যুবক শিক্ষা জীবনের সকল সনদ ফেরত পাঠিয়েছেন। আবেদন করেছেন প্রতিবন্ধী কোটা থাকার পরেও কেন তার চাকরি হয়নি, বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।

জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজাউল আলম সরকার ওই আবেদন ও সনদগুলো গ্রহণ করেন।

সনদ ফেরত পাঠানোর পর মাহাফুজার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বিভিন্ন নিয়োগে প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক হলেও তার বেলায় সেই আইন মানা হয়নি। এই ঘটনার প্রতিবাদেই তিনি তার সনদগুলো জমা দিয়েছেন।

দেশের প্রায় এক কোটি ২০ লাখ প্রতিবন্ধীর ভবিষ্যত চিন্তা করেই এই প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

জানা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের রতিপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. সৈয়দ আলীর ছেলে মাহফুজার রহমানের ডান হাতটি জন্ম থেকেই সম্পূর্ণভাবে অক্ষম (অনুভূতিহীন)। তবে সকল প্রতিকূলতা পায়ে ঠেলে উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে তিনি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে সম্মান ও পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০১৩ সালে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগ পরীক্ষা দেন। তার রোল নম্বর ছিল- ১৩২০। লিখিত পরীক্ষায় জেলার ৫ উপজেলার ৪৫ জন প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র প্রতিবন্ধী হিসেবে তিনিও উত্তীর্ণ হন। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিলেও ওই নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হন মাহাফুজার।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, উক্ত নিয়োগে প্রতিবন্ধী ছাড়া অন্যান্য সকল কোটা পূরণ করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪৫ জনের মধ্যে ১৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তার কপালে চাকরি জোটেনি।

এছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেছেন। কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি নামের সোনার হরিণ জোটেনি তার কপালে।

বুধবার দুপুরে সনদপত্র হস্তান্তর করার পর মাহাফুজার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যে সনদ তার বেকারত্ব জীবন লাঘবের জন্য কোন কাজে আসছে না সেই সনদ রেখে কী হবে? তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তিনি একজন মা। তিনি প্রতিবন্ধী সন্তানের কষ্ট নিশ্চয়ই বুঝবেন।

এক সন্তানের জনক শারীরিক প্রতিবন্ধী মাহাফুজার রহমানের স্ত্রী নাছরিন নাহার লাকি অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। লাকি জানান, ‘তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পরও বেকার হয়ে বসে আছেন। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অর্থকড়ি আর উপরে ‘মামা খালুর’ অভাবেই তাদের এই বেকারত্ব জীবনের ঘানি টানতে হচ্ছে।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজাউল আলম সরকার বলেন, মাহাফুজার রহমানের আবেদন ও সনদগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হবে।