দুদকের করা নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১২ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে না আসায় তার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি আবার পিছিয়ে গেছে। আজ বুধবার ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ এম আমিনুল ইসলাম এই শুনানির জন্য ১২ এপ্রিল নতুন দিন ঠিক করে দিয়েছেন। মামলার ১১ আসামির মধ্যে খালেদাসহ সাতজন এদিন আদালতে না এসে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন করেন। খালেদার পক্ষে ওই আবেদন জানিয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও জয়নাল আবেদীন মেজবাহ। দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষে বিচারক সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের শুনানির নতুন তারিখ ঠিক করে দেন।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এই শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও খালেদার সময়ের আবেদনে তা পিছিয়ে যায়। ২০১৫ সালের ১৮ জুন খালেদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা নাইকো দুর্নীতি মামলা স্থগিত করে দেওয়া আদালতের আদেশ বাতিল করে দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতের এ রায় পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। জামিনের বিষয়ে সে সময় আদালত বলেন, নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর আদালত খালেদাকে পরবর্তী সময়ের জন্য জামিন দেওয়ার বিষয়ে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।
২০১৫ সালের ৩০ জুন হাইকোর্ট থেকে মামলার নথি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এ আসে। আদালত হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে ৩০ নভেম্বর আত্মসমর্পণ করতে দিন ধার্য করেন। ৩০ নভেম্বর আত্মসমার্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালতে তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিজস্ব দুটি আবিষ্কৃত গ্যাস ফিল্ডকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন উল্লেখ করে পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার।
নাইকো রিসোর্সেস বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি অদক্ষ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বিনা টেন্ডারে এবং সরকারি নিয়মনীতি বহির্ভূতভাবে ছাতক ও ফেনী গ্যাস ক্ষেত্রের গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে সেখানে মজুদ ২৭৬২ বিসিএফ গ্যাসের মধ্য থেকে উত্তোলনযোগ্য ১৭৪৪ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলনের অবৈধ সুযোগ দিয়ে রাষ্ট্রের ন্যূনতম ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিসাধন করে তৎকালীন বিএনপি সরকার। এ ঘটনায় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তৎকালীন দুদকের সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২০০৮ সালের ৫ মে তৎকালীন দুদকের সহকারী পরিচালক সাহিদুর রহমান খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং দুদকের ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র দাখিলের পর এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়।