জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ থাকার কোনো ইঙ্গিত দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বা জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। এরপরও জল্পনা-কল্পনায় বিশ্ব সংস্থার পরবর্তী মহাসচিব পদে এই দুজনের নাম উঠে এসেছে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব বান কি মুনের দ্বিতীয় মেয়াদ। তার আগেই সংস্থার পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার কথা। আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হবে। মেরকেলের তৃতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২০১৭ সালে। জল্পনাকারীদের ভাষ্যে ওবামা বা মেরকেলের জন্য জাতিসংঘের নতুন মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ অবাস্তব কিছু নয়।
মেরকেলের কথা উঠেছিল গত বছর। লুক্সেমবুর্গের একটি পত্রিকা জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেরকেলের এক মুখপাত্র বিষয়টিকে ‘বাজে কথা’ বলে উড়িয়ে দেন। মেরকেল তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদত্যাগ করবেন না বলেও জোর দিয়ে বলেন ওই মুখপাত্র। কিন্তু তার পরেও কানাঘুষার অবসান হয়নি। জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে বারবার মেরকেলের নাম এসেছে। কারণ, সংস্থার পরবর্তী মহাসচিব পূর্ব ইউরোপ থেকে আসার কথা।
একজন নারীর এবার জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার সময় এসেছে বলে বান কি মুনসহ অনেকেই উল্লেখ করেছেন।
গত বছর জার্মানির পত্রিকা ডার স্পিগেল নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, মেরকেল চতুর্থবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। তিনি ২০১৭ সালের আগেই পদত্যাগ করবেন।
টানা ১০ বছর ক্ষমতায় আছেন মেরকেল। তিনি এখনো দারুণ জনপ্রিয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে নেতৃত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছেন তিনি। নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়। পূর্ব জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী মেরকেলের চেয়ে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ইউরোপীয় নারী নেত্রী আর কে হতে পারেন?
অন্যদিকে মহাসচিব হিসেবে ওবামার নামটি এসেছে ইসরায়েল থেকে। চলতি বছরের গোড়ার দিকে কুয়েতি পত্রিকা আল-জারিদা জানায়, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুনেছেন যে, ওবামা জাতিসংঘের মহাসচিব হতে চান। ওবামা ইরান ও কোনো কোনো আরব দেশের পক্ষাবলম্বন করেছেন। অতএব তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব হলে তা ইসরায়েলের জন্য মহাদুর্যোগ। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ওবামাকে যেকোনো মূল্যে ঠেকানোর উদ্দেশ্যে সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে সলাপরামর্শ চালাচ্ছেন নেতানিয়াহু।
এর কিছুদিন পর ইসরায়েলি দৈনিক জেরুজালেম পোস্ট জানায়, কুয়েতি পত্রিকার খবরটি ‘ডাহা গুজব’ নয়।
ব্যাপারটি এখানেই শেষ নয়। এ বছরের গোড়ার দিকে দক্ষিণপন্থী দৈনিক ওয়াশিংটন টাইমসের সম্পাদকীয় পরিষদ এক যৌথ নিবন্ধে প্রস্তাব রাখে, যেভাবে হোক ওবামার জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়া ঠেকাতে হবে। ওবামা যেখানে খুশি চাকরি খুঁজে নিন। কিন্তু জাতিসংঘে নয়।
ওবামাকে নিয়ে চলা এই গুজব আরও চাউর করেছেন সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান মিশেল বাখম্যান। সম্প্রতি একটি দক্ষিণপন্থী রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাখম্যান দাবি করেন, তিনি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জেনেছেন যে, ওবামা সারা বিশ্বে নিজের প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংস্থার পরবর্তী মহাসচিব প্রসঙ্গে এই প্রতিনিধির আলাপ হয়। এ থেকে জানা যায়, ওবামা বা মেরকেল—কারও নামই পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে প্রস্তাব করা হয়নি। তাঁরা কেউ মহাসচিব হতে আগ্রহী—এমন কোনো ইঙ্গিতও তাঁরা পাননি। ইতিমধ্যে যে কয়েকটি নাম তাঁরা পেয়েছেন, এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেসকোর বর্তমান মহাপরিচালক বুলগেরিয়ার ইরিনা বুকভা। বুলগেরীয় সরকার ইতিমধ্যে তাঁর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতির দপ্তরে পাঠিয়েছে।
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতায় সব শর্ত পূরণ করলেও বুকভার মনোনয়ন নিরাপত্তা পরিষদের এক বা একাধিক সদস্যের আপত্তির মুখে পড়তে পারে। একসময় তিনি কট্টর কমিউনিস্ট ছিলেন। মস্কোর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। গত বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ স্মরণে মস্কোয় আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজ বুকভা কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেন। বিষয়টি ওয়াশিংটনের নজর এড়ায়নি।