বিচারপতি শামসুদ্দিন

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুখপাত্র হয়ে থাকলে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী কার মুখপাত্র ছিলেন, এটা গোটা দেশবাসী জানে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী আদালত প্রাঙ্গণকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বাস্তবায়নের কেন্দ্র বানানোর চেষ্টা চালিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি খালেদা জিয়ার মুখপাত্র বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর এ বক্তব্যের ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী এই মন্তব্য করেন।মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে ওই সংবাদ সম্মেলন হয়।

সাংবাদিকদের ওই প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যদি প্রধান বিচারপতি খালেদা জিয়ার মুখপাত্র হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কার মুখপাত্র ছিলেন, এটা দেশবাসী জানে। তিনি বলেন, দেশের উচ্চ আদালত মানুষের শেষ ভরসাস্থলকে আপনারা বানিয়ে তুলেছিলেন আওয়ামী শাসক গোষ্ঠীর কর্মসূচি বাস্তবায়নের কেন্দ্র। সেটা যখন সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছেন না, তাই খেদ হচ্ছে। মানুষের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বলেই এ আক্রমণ।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সত্য কথা বলা বন্ধের প্রথম ভূমিকা রেখেছিলেন, আদালতের মতো পবিত্র অঙ্গনকে কলুষিত করেছিলেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। তিনি আদালত প্রাঙ্গণকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বাস্তবায়নের কেন্দ্র বানানোর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আজ যখন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ন্যায্য কথা বলছেন, সত্য, সংবিধান এবং আইনের শাসনের কথা বলছেন, এখন তা সহ্য করতে পারছেন না।বিএনপির এই নেতা বলেন, এ দেশে ব্রিটিশ আমল থেকে উচ্চতর আদালত কখনো এত বিতর্কিত ও অশ্রদ্ধয় হয়নি। এটা করেছেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী আর খায়রুল হকরা (সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান)।বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর কথা শুনলে মনে হবে একজন কসাই কথা বলছে। কোনো বোধ, বুদ্ধি বিচারসম্পন্ন মানুষের কথা এগুলো নয়। এর কারণে তিনি বিভিন্ন সময়ে মানুষের রোষানলে পড়েন। এখন প্রধান বিচারপতি যখন ন্যায় ও আইনের পক্ষে কথা বলছেন, তখন তা সহ্য হচ্ছে না।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগে বলেছেন, বিচারবুদ্ধিহীন মন্তব্য করে আপিল বিভাগের সাবেক এই বিচারক উচ্চ আদালতকে বির্তকিত করছেন।প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে গত ১৭ জানুয়ারি এক বাণীতে বিচারপতি এস কে সিনহা অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখাকে সংবিধান পরিপন্থি বললে নানামুখি আলোচনার সূত্রপাত হয়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও বিএনপি নেতারা তাতে জোর সমর্থন দিয়ে বলে আসছেন, বিচারকের অবসরের পরে লেখা হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায়ও অবৈধ প্রমাণিত হয়েছে।

এরমই মধ্যে বিচারপতি শামসুদ্দিন তার অবসরের পর লেখা রায় ও আদেশ জমা দিতে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবে নাৃ এই কথা বহু আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন। উনি (প্রধান বিচারপতি) খালেদা জিয়ার মুখপাত্র হয়ে বিএনপির এজেন্ডা চরিতার্থ করার জন্য এটা বলেছেন। উনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, এই দেশে বৃটিশ আমল থেকে উচ্চতর আদালত এতো বিতর্কিত ও অশ্রেদ্ধয় হয়ে পড়েনি আর কখনো। একে বিতর্কিত করেছেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও খায়রুল হকরা।

আজ যখন তার নোংরা অপকর্মগুলো উদ্ভাসিত হচ্ছে, আজকে যখন মাননীয় প্রধান বিচারপতি আইনের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, আইনের শাসনের পক্ষে কথা বলছেন, তখন তিনি সহ্য করতে পারছেন না। পারছেন না বলেই এসব কথা বলছেন।বিচারপতি শামসুদ্দিনের মতো ব্যক্তিরা অসহায় মানুষের শেষ ভরসার স্থান আদালতকে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর কর্মসূচি বাস্তবায়নের কেন্দ্রে’ পরিণত করতে চান বলেও মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা। সেটা সম্পূর্ণভাবে করতে পারছেন না, তাই খেদ থেকে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন।প্রধান বিচারপতি যদি খালেদা জিয়ার মুখপাত্র হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কার মুখপাত্র ছিলেন? আপনি কার মুখপাত্র ছিলেন- এটা তো গোটা দেশবাসী জানে, বিচারপতি শামসুদ্দিনের উদ্দেশে বলেন রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনে দেশে একমাত্র মৃত মানুষ ছাড়া আর কারও কথা বলার স্বাধীনতা নেই।স্বাধীনভাবে কথা বলার জন্যই মাহমুদুর রহমানের মুক্তি হচ্ছে না, বলেন রিজভী। এমকে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, শওকত মাহমুদ, আবদুল মান্নান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপির কারাবন্দি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়ে তাদের মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনের মূল বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, বিএনপির নেতা এম কে আনোয়ার, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানিসহ কারাবন্দীদের মুক্তি দাবি করেন।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, কাজী আবুল বাশার, বেলাল আহমে, রফিক শিকদার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।