মোহাম্মদ নাসিম

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: দেশে কেউ মশাবাহিত জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সরকার তার চিকিৎসার ভার নেবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো আশঙ্কা নেই। তা সত্ত্বেও দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ‘জিকা ভাইরাস: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’-বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

বিভিন্ন দেশে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারির পরিপ্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।গণমাধ্যমের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খবর যেটুকু, সেটুকুই দেবেন। বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো আশঙ্কা নেই। এমন খবর পরিবেশন করবেন না, যাতে মানুষ আতঙ্কিত হয়। জিকা ভাইরাস ঠেকানোর প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক আবুল খায়ের মো. শামসুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী যেসব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তার সবকিছুই নেওয়া হয়েছে।শামসুজ্জামান বলেন, ডব্লিউএইচওর বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারির দিনই বাংলাদেশের সবগুলো নৌ, স্থল ও বিমানবন্দরে জিকা ভাইরাসের ব্যাপারে ব্যাপক নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আজ (৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বাংলাদেশে কারও দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মো. নুরুল হক বলেন, জিকার সংক্রমণ হয়েছে এমন দেশ থেকে কেউ যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন, তাহলে তাঁর প্রবেশস্থল থেকে থেকে বাড়ি পর্যন্ত নজরদারির ব্যবস্থা আছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,রোগটি প্রাণঘাতী নয়।এই ভাইরাসবাহী মশা দেশে আছে কি না, তা দেখার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চলছে।দশে জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, যে কোনো রোগী চিহ্নিত হলে সমস্ত চিকিৎসা ব্যয় আমরাই দেব। ডাক্তারের কাছে আমরা নিয়ে যাব। তারপর ফলোআপ করব।গতবছর ব্রাজিলে নতুন করে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মেলার পর মাত্র চার মাসের মধ্যে বহু দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। এর বাহক এডিস এজিপ্টি মশা।

জিকা ভাইরাসে সচরাচর মৃত্যুর ঘটনা দেখা যায় না। এর লক্ষণও সবসময় স্পষ্ট থাকে না। এই ভাইরাস সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হয়ে এসেছে নবজাতকদের নিয়ে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভবতী মা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি।এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম ও বেশি করে তরল খাবার খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়।জিকা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এক সপ্তাহ আগে বিশ্বময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।সংসদে জিকা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সর্বশক্তি নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণের প্রতি আহ্বান, আপনারা আশ্বস্ত থাকুন। এই ভাইরাস দেশে কোনোভাবেই সংক্রমিত হতে পারবে না। সরকার জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে।বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থা ঘোষণার দুইদিনের মধ্যে সব সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাকে ইমেইলের মাধ্যমে জিকা সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

নাসিম বলেন, এরই মধ্যে জিকা ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য ‘প্রিপেয়ার্ডনেস প্লান’ করা হয়েছে।সব আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বারে মেডিকেল টিমের কার‌্যক্রম নিশ্চিত করা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে জিকা ভাইরাস স্ক্রিনিং মনিটর করতে ওয়েব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং সম্ভাব্য জিকা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে এডিস মশা নিধনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে সমন্বিত কার‌্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে গণমাধ্যমে জিকা ভাইরাস সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মো. নূরুল হক বলেন, কুর্মিটোলায় (কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল) ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড করা আছে।আমি এরই মধ্যে পরিচালককে বলে দিয়েছি, জিকার জন্য সেম ওয়ার্ড ফাংশন থাকবে। কোনো লোক জ্বর নিয়ে দেশে আসলে তাকে এই ওয়ার্ডে আনতে হবে। সুস্থ না হওয়া পর‌্যন্ত সে এখানেই থাকবে। সুস্থ হলে তাকে নির্দিষ্ট সময় পর‌্যন্ত আমরা তা ফলোআপ করবে।ইতোমধ্যে জিকা ভাইরাস দেখা গেছে এমন দেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে আসলে এই ফলোআপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানান তিনি।