নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের বিচার শুরু

দৈনিকবার্তা-নারায়ণগঞ্জ, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় করা দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন হয়েছে। সোমবার এই দুটি মামলায় জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে আসামি নূর হোসেন, তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ, এম এম রানাসহ ২৩ জন আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।মামলার ৩৫ জন আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি ওয়াজেদ আলী অভিযোগ পড়ে শোনান। ৩৫ জন আসামির মধ্যে ১২ জন পলাতক, যাঁর মধ্যে আটজন র‌্যাবের সদস্য।আদালত ২৫ ফেব্র“য়ারি সাক্ষ্য নেওয়ার দিন ধার্য করেছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের দিন পেছানোর ও কোনো কোনো আসামির জামিন চেয়েছিলেন। আদালত ওই আবেদন নাকচ করেন। সোমবার জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন ৩৫ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় শুনানি শুরু হয়। আদালতে ২৩ আসামি উপস্থিত ছিলেন বলে জানান জেলার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেএম ফজলুর রহমান।আগামী ২৫ ফেব্র“য়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।এর আগে ১১ জানুয়ারি ও ২৭ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। অসুস্থতার কারণে এক আসামিকে আদালতে হাজির না করায় অভিযোগ গঠন পেছানো হয় প্রথমবার।২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাসহ ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ফতুল্লা থানায় একটি এবং আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল আরেকটি মামলা দায়ের করেন।ওই দুটি মামলার তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।কিন্তু অভিযোগপত্র থেকে পাঁচ আসামিকে বাদ দেওয়ায় এবং প্রধান আসামি নূর হোসেনের জবানবন্দি ছাড়া অভিযোগপত্র আদালত আমলে নেওয়ায় ‘নারাজি’ আবেদন করেন সেলিনা ইসলাম বিউটি।

আবেদনটি বিচারিক হাকিম আদালত ও জজ আদালতে খারিজ হয়ে গেলে বিউটি উচ্চ আদালতে যান। হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, পুলিশ চাইলে মামলাটির ‘অধিকতর তদন্ত’ করতে পারে এবং ‘হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার’ ধারা যুক্ত করে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পরে।এ মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন।নূর হোসেন ছাড়া বাকিরা হলেন- সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, এম এম রানা ও আরিফ হোসেন, র‌্যাব সদস্য এসআই পূর্ণেন্দু বালা, এএসআই বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন ও বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন, সিপাহী আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।র‌্যাবের সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আব্দুল আলিম, মহিউদ্দিন মুন্সী, আল আমিন শরীফ, তাজুল ইসলাম ও কনস্টেবল হাবিবুর রহমান পলাতক।

এছাড়া নূর হোসেনের আরেক সহযোগী বন্দর উপজেলার কুড়িপাড়া এলাকার সেলিম ভারতের কারাগারে আটক রয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, আদালত দু’টি মামলার চার্জ গঠন করেছেন এবং আগামী ২৫ ফেব্র“য়ারি থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, সোমবার সকালে কঠোর নিরাপত্তায় ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সাতখুনের ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল পৃথকভাবে মামলা দু’টি করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামনুর রশিদ মন্ডল।আসামিদের মধ্যে ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন আরো ১২ জন। তারা হলেন র‌্যাবের সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কর্পোরাল মোখলেছুর রহমান,সৈনিক আব্দুল আলিম, মহিউদ্দিন মুন্সী, আল আমিন শরীফ, তাজুল ইসলাম ও কনস্টেবল হাবিবুর রহমান পলাতক। হত্যার দায় স্বীকার করে র‌্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এছাড়া ঘটনার সাক্ষী হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন র‌্যাব সদস্যসহ আরও ১৭ জন।