দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকনমিক জোন তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। যার ৩০টি বাস্তবায়নে কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রস্তাবিত কুষ্টিয়ার স্পেশাল ইকনমিক জোনে ভারতের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারেন। এখানে বিনিয়োগ ভারতের ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক হবে। রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে মতবিনিময় করে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে দূর করে এর পরিধি বৃদ্ধি করা হবে। বর্ডার হাট বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের মধ্যে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। উভয় দেশের মানুষ আরো বর্ডার হাট চাচ্ছেন। উভয় দেশের সরকার বর্ডার হাটের সংখ্যা ও পরিধি বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চলমান বাণিজ্য সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ৫ হাজার ৮১১ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। একই সময়ে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে ৫২৭ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। যাতে বাণিজ্য ঘাটতি আছে ৫ হাজার ২৮৪ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্যের অনেক কাঁচামাল ভারত থেকে আমদানি করে আমেরিকা, ইউরোপিয়ন ইউনিয়নসহ উন্নত বিশ্বে রপ্তানি করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তোফায়েল বলেন, ভারত বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করেছে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারত বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। দীর্ঘদিন পর হলেও দুদেশের মধ্যে সিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাওয়া গেছে।
এদিকে, রাষ্ট্রদূত কাঁচা পাট ভারতে রপ্তানির বিষয়ে সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘ভারতের অনেক শিল্পকারখানা বাংলাদেশের কাঁচা পাটের ওপর নির্ভরশীল, তাই দ্রুত সমস্যাটির সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’ জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানির উপর সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের নতুন হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শ্রিংলা বলেন, আমরা সকল বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখব, যার মধ্যে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর কিছু ইস্যু রয়েছে- যেমন, বাংলাদেশ থেকে পাট রপ্তানি।বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত এই পাটের উপর নির্ভরশীল ভারতীয় অনেক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরে পাট নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া অতিরিক্ত বাণিজ্য সচিব মনোজ কুমার রায় বলেন, এই নিষেধাজ্ঞাটি দিয়েছে পাট মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেকেই এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়েছেন।ব্রিফিংয়ের সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লা আল মামুনও উপস্থিত ছিলেন।
পণ্যে পাটের মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে গত ৩ ডিসেম্বর সব ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে ৬ ডিসেম্বর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছরের ৩ নভেম্বরের আগে ইস্যু করা ২৫১টি এলসির ( লেটার অব ক্রেডিট) বিপরীতে একচল্লিশটি প্রতিষ্ঠানকে ‘বিশেষ প্রক্রিয়ায়’ দুই লাখ ৭৭ হাজার বেল কাঁচা পাট রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে।