দৈনিকবার্তা-পাইকগাছা (খুলনা), ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: বিরল রোগের চিকিৎসার দায়ভার সরকার বহন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন বৃক্ষ মানব আবুল বাজনদার। একই সাথে চিকিৎসার সু-ব্যবস্থার পথ সুগম করে দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আবুল ও তার পরিবার।উল্লেখ্য, গত ২৯ জানুয়ারি থেকে আবুল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আবুলের সাথে দেখা করে তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন এবং তার চিকিৎসার ব্যায় ভার সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় কপিলমুনি ইউনিয়নের দক্ষিণ সলুয়া গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন আবুল। তবে আবুলের জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে পৌর সদরের সরল গ্রামে।পিতা মানিক বাজনদারের ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ে। ভাইদের মধ্যে আবুল সকলের ছোট। অভাব অনটনের সংসারে লেখা পড়া শিখতে পারেনি আবুল। প্রাথমিকের গন্ডি পার হওয়ার আগেই বড় ভাইয়ের মুদি দোকানে কাজ করতে হয় তাকে। পরবর্তীতে বেছে নেয় ভ্যান চালকের পেশা। ১৫ বছর বয়সে তার হাতে দেখাদেয় আঁচিল। যা আজ রূপ নিয়েছে বিরল রোগে। আঁচিল থেকে ধীরে ধীরে তার হাতের অঙ্গুলী গুলো গাছের শিকড়ের ন্যায় প্রসারিত হতে থাকে। দেশের অনেক নামিদামী ডাক্তার দেখিয়েও কোনো সুফল না পাওয়ায় চিকিৎসা করতে চলে যান ভারতের কলিকাতায়।
এ পর্যন্ত তিনি ৩ থেকে ৪ বার কলিকাতায় গেছেন। সেখানকার ডাক্তাররা প্রথমবার তাকে ভাল হওয়ার আসস্থ করলেও দ্বিতীয় বার তাকে অপারেশনের কথা বলে। যার ব্যায় ভার কয়েক লাখ টাকা যোগাড় করা হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে সম্ভাব না হওয়ায় রোগ মুক্তির আশা অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছিল আবুল ও তার পরিবার। তবে জ্বালা যন্ত্রনা কমানোর জন্য কলিকাতার ডাক্তারদের দেওয়া ঔষধ এখনো সেবন করেন আবুল।
গত ৪ বছর আগে আবুল বিয়ে করেন দাকোপের চুনকুড়ি গ্রামের পিতৃহারা হালিমাকে। বিরল রোগে আক্রান্ত আবুলের প্রতিবেদনটি বিভিন্ন মিডিয়ায় ঢালাও ভাবে প্রচার হওয়ার পর তার চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বার্ন ইউনিটের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের তত্বাবধানে গত ১ সপ্তাহ যাবৎ আবুল সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।আবুলের সাথেই সেখানে রয়েছেন তার মা আমেনা বেগম, স্ত্রী হালিমা ও আড়াই বছরের শিশু কন্যা তাহেরা। ইতোমধ্যে গত সোমবার তার ভ্যান চালক পিতা মানিক বাজনদারও তাকে দেখতে যান। মুঠোফোনে আবুল জানান, কিছুদিন আগেও অবহেলায় অনাদরে পড়ে ছিলাম অজপাড়া গায়ে। চিকিৎসার আশা অনেকটাই ছেড়ে দিয়ে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আমাকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। তিনি আমার অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে যান এবং আমার চিকিৎসার সকল ব্যায় ভার সরকার বহন করবে বলে আমাকে আশস্ত করেছেন।
ইতোমধ্যে ডাক্তাররা আমার রক্ত পরীক্ষার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছে। বর্তমানে ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে। শারীরিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় ডাক্তাররা বলেছেন সব গুলি অঙ্গুলি একসঙ্গে অপারেশন করা কঠিন হবে। রক্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর সম্ভবত একটা অঙ্গুলি করে অপারেশন করা হতে পারে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকেও ডাক্তার আনা হতে পারে বলে এখান কার ডাক্তাররা আমাকে আশস্ত করেছেন।দীর্ঘদিন পর হলেও তার চিকিৎসার সু-ব্যবস্থার জন্য প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আবুল ও তার পরিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে দেখতে আসবেন তেমনটি আশা করেন আবুল।