দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিবেকহীন ও অবিশ্বাস্যরকম বেপরোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।শুক্রবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।সম্প্রতি মিরপুরের ১ নং গুদারাঘাট এলাকায় পুলিশের আগুনে দগ্ধ চা দোকানি বাবুল মাতব্বরের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।রিজভী বলেন, আগামী ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের দিন ধার্য করা হয়েছে। সে তারিখ অনুযায়ী গণপূর্ত অধিদফতর থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিল করার অনুমতি পাওয়া গেলেও ডিএমপি থেকে এখনও কোনো অনুমতি পাওয়া যায়নি।
সরকার দেশকে চরম অরাজকতার লীলাভূমিতে পরিণত করেছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার বিগত কয়েক বছর বিচারবহির্ভূত হত্যা,বেআইনি গুম ও গুপ্তহত্যা সংঘটিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যে ছাড়পত্র দিয়েছিল তাতে তারা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।চা দোকানির মৃত্যু প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, চা দোকানি বাবুল মাতব্বরের কাছে চাঁদার টাকা না পেয়ে তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দগ্ধ করে পুলিশ। গুরুতর দগ্ধ বাবুল মাতব্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে কাতরাতে কাতরাতে ইন্তেকাল করেন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে দলের পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিরোধী দল নিমূল করার অভিযানে লেলিয়ে দিয়ে তাদের বুকের মাপটা বড় করে দেয়া হয়েছে। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সদা তৎপর র্যাব-পুলিশের সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করা এখন যেন গা সওয়া করে দেয়া হয়েছে।আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যরা এখন চাঁদাবাজি, জুলুম, প্রহার, নিরীহ মানুষকে আটক করে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে মামলা দেয়া কিংবা ভয় দেখানো, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, আদায় না হলে হত্যা করার মতো পৈশাচিক অপকর্মে লিপ্ত।এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বেআইনি ও দায়িত্বহীন আচরণের কারণে গত জানুয়ারি মাসে গড়ে প্রায় প্রতিদিন একজন করে শিশু নিহত হয়েছে। এ ছাড়াও রাজনৈতিক ও সামাজিক দুর্বৃত্তায়নে মানুষের গলা কাটা হচ্ছে, কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, এমনকি পেটের শিশু পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এদেশে সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ডিভাইসটা এখন আইনের রক্ষকরা ভক্ষকে পরিণত হওয়া’র ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার নিষ্ঠুর ও নির্দয় রক্তপাতের মাধ্যমে গোটা জাতিকে স্থির, নিস্তব্ধ গোরস্থানে পরিণত করতে চাচ্ছে। তবে দেশবাসী অপেক্ষা করছে, প্রধানমন্ত্রীর আত্মম্ভরী প্রগলভতার যবনিকাপাতের খবর শোনার জন্য। কারণ, গোটা দেশ এখন অগ্নিগর্ভ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি জনগণের মনের কথা, বেদনার কথা উপলব্ধি করতে না পারেন, তাহলে জনগণের ক্ষোভ যেকোনো মুহূর্তে সুনামীর ন্যায় আছড়ে পড়ে দস্যুদলের ন্যায় আচরণকারী বর্তমান সরকারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে পুলিশ বাহিনী অকারণে হয়রানি করছে। সাধারণ মানুষকে অকারণে মারপিট করায় পুলিশ বাহিনী আজ বেআইনি সংগঠনে পরিণত হয়েছে। শাসক গোষ্ঠী দেশকে অরাজতার লীলাভূমিতে পরিণত করছে।রিজভী বলেন, আইন প্রয়োকারী সংস্থার সদস্যদের বিরোধীদল নির্মূলে লেলিয়ে দিয়ে তাদের বুকের পাটা বড় করে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা সংঘটিত করার ছাড়পত্র দিয়েছে সরকার। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।তিনি বলেন, নীরিহ মানুষকে আটক করে পকেটে ইয়াবা, গাজা ঢুকিয়ে দিয়ে নানা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে পুলিশ ও র্যাব বাহিনী। মিরপুরের চা বিক্রেতাকে পুড়িয়ে মেরেছে। টাকার জন্য নীরিহ মানুষকে হত্যা করছে পুলিশ। আমরা এ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।
রিজভী বলেন, আগামী কাউন্সিলকে সফল করতে সারাদেশের দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েয়েছে। প্রতিটি থানা ও জেলা পর্যায়ে দুইজন করে নারী কাউন্সিল বানানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুছ তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, অ্যাডভোকে মাসুদ আহমেদ তালুদার, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া প্রমুখ।