দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনের উপনির্বাচনে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এই আসনে উপনির্বাচন হতে আর কোনো বাধা নেই বলে রুলের নিষ্পত্তি করেছেন আদালত। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। গত রোববার এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। এই রায়ের ফলে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের এই সভাপতি টাঙ্গাইল-৪ আসনে উপ-নির্বাচনে আর অংশ নিতে পারছেন না। সেই সঙ্গে ওই নির্বচন অনুষ্ঠানেও আইনগত আর কোনো বাধা থাকছে না বলে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জানিয়েছেন।
ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগের কারণে শূন্য কালিহাতীর ওই আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে কাদের সিদ্দিকীর দাখিল করা মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল ইসি।অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের কারণ দেখিয়ে প্রার্থিতা বাতিলের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী রিট আবেদন করলে হাই কোর্ট স্থগিতাদেশে উপ-নির্বাচন আটকে যায়। সাবেক সংসদ সদস্য কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে হাই কোর্টে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী।অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ইয়াসীন খান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন।আদালতের রায়ে বলা হয়, কাদের সিদ্দিকী যে রিট আবেদন করেছেন, হাই কোর্টে তা গ্রহণযোগ্য নয়।রায়ের পর ইয়াসীন খান বলেন, এর ফলে কাদের সিদ্দিকীর প্রার্থিতা থাকছে না। তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। উপ নির্বচন অনুষ্ঠানেও আইনগত কোনা বাধা থাকছে না।
হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এবং মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করলে ইসি গতবছর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ভোটের দিন ঠিক হয় ১০ নভেম্বর। কাদের সিদ্দিকীসহ মোট ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান বাছাই শেষে কাদের ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকীসহ চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। ঋণ খেলাপের কারণ দেখিয়ে কাদের ও নাসরিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন কাদের ও নাসরিন সিদ্দিকী। কিন্তু কমিশনের শুনানিতেও তাদের আবেদন টেকেনি। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, তাকে ঋণ খেলাপি বানাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ছলনার আশ্রয় নিয়েছে।প্রার্থিতা ফিরে পেতে ২০ অক্টোবর হাই কোর্টে তিনি রিট আবেদন করলে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পরদিন আদালত কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে নির্দেশসহ রুল দেয়।হাই কোর্টের আদেশে ২২ অক্টোবর সব প্রার্থীদের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীকেও প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর তার মনোনয়নপত্র নিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে ২৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন।
পরদিন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন এবং ওই সময় পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে বলা হয়।এর ধারাবাহিকতায় গতবছর ২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের আবেদনটি আপিল বেঞ্চে ওঠে। শুনানি শেষে আদালত তা নিষ্পত্তি করে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে দেওয়া রুল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়ে ওই সময় পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত করে।হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এবং মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করেন। এতে ওই শূন্য আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে কাদের সিদ্দিকী মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ঋণখেলাপির অভিযোগে গত ১৩ অক্টোবর তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে তা ১৮ অক্টোবর খারিজ হয়। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে ২০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন কাদের সিদ্দিকী।কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। ২ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ আদেশে বলেন, কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে দেওয়া হাইকোর্টের রুল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। ওই সময় পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।