04-02-16-Babul Matubbar Death By Police_Mirpur-13_1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: রাজধানীর মিরপুরে চাঁদার টাকা না দেয়ায় পুলিশের আগুনে দগ্ধ চা দোকানি বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। পুলিশের বাড়াবাড়ি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন অত্যাচারী পুলিশ আমাদের প্রয়োজন নেই।বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবুল মাতুব্বর মারা যান। এর কিছুক্ষণ পর বার্ন ইউনিটে পৌঁছান ড. মিজানুর রহমান।এ সময় বাবুলের স্বজনদের সান্ত্বনা দেন তিনি।ড. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ যে বাড়াবাড়ি করছে তা চরম পর্যায়ে পৌছেঁছে। পুলিশের এ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে সমাজ তথা পুলিশ বাহিনীর ওপর প্রভাব পড়বে।তিনি বলেন, একজন সাধারণ চা বিক্রেতা বাবুল মাতুব্বর মারধর তথা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন। তিনি আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু তার পরিবারটি এখন কিভাবে চলবে?পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নিয়ন্ত্রণহীন পুলিশের এখন লাগাম টেনে ধরা দরকার।

তিনি আরো বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন পুলিশ মানুষের বন্ধু। তাহলে একজন সাধারণ চা বিক্রেতা কেন পুলিশের অত্যাচারের শিকার হলো। এমন পুলিশ আমাদের প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর শাহআলী থানাধীন গুদারাঘাটে চাঁদার টাকা না পেয়ে চা দোকানি বাবুল মাতুব্বরের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর দ্বগ্ধ অবস্থায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।ওই সময় বাবুল মাতুব্বরের ছেলে রাজু জানান, গুদারাঘাটে কিংশুক বহুমুখী সমিতির গেটের পাশে রাস্তায় বাবুল মাতুব্বরের চা দোকান। চুলা হিসেবে কেরোসিনের স্টোভ ব্যবহার করেন।বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহআলী থানা পুলিশের একটি টহল টিম মাইক্রোবাসে তার দোকানে যায়। রাস্তায় দোকান বসানোর জন্য পুলিশ তার কাছে চাঁদা চায়।

বার্ন ইউনিটে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসা নেয়ার সময় দগ্ধ বাবুল মাতুব্বর চিৎকার করে বলেন, আমি বলি টাকা দেব কেন? এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠি দিয়ে স্টোভের চুলায় আঘাত করে। স্টোভের কেরোসিন ছিটকে তার গায়ে পড়ে আগুন ধরে যায়। দোকানেও আগুন লাগে। এতে তিনি দগ্ধ হন।বাবুলের পুত্রবধূ মনি আক্তার বলেন, যার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তার গায়ে পুলিশের পোশাক দেখেছেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গাড়ি নিয়ে চলে যায়।তবে শাহআলী থানা পুলিশের দাবি, পুলিশ নয় পুলিশের সোর্সের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে স্টোভের চুলা পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়। এতে বাবুল মাতুব্বর দগ্ধ হন। শাহআলী থানার ওসি একেএম শাহীন মণ্ডল বলেন, বাবুল চা বিক্রির পাশাপাশি গাঁজা বিক্রি করে। রাতে থানার সোর্স দেলোয়ার ওই দোকানে যায়। তার সঙ্গে দেলোয়ারের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে স্টোভের চুলা পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়। এ সময় দেলোয়ার পালিয়ে যায়। আগুনের খবর পেয়ে পরে পুলিশ সেখানে যায়। এর আগে পুলিশ সেখানে চাঁদার টাকা নিতে যায়নি বলে দাবি করেন ওসি।

এদিকে এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যই পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।মিরপুরে পুলিশের হামলায় অগ্নিদগ্ধ চা দোকানি বাবুল মাতুব্বরের (৪৫) মৃত্যুর ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশের বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এদের চিহ্নিত করে রোখা দরকার।রক্ষক এখন ভক্ষকের ভূমিকায় উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে পুলিশ অবহেলা করছে।তিনি বলেন, পুলিশের এসব কর্মকাণ্ড আগের মতো এবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে। তারা যদি ব্যবস্থা না নেন, তবে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে।বাবুল মাতব্বরের কাছে কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসী চাঁদা চাইতে যায়নি। পুলিশ ও পুলিশের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের এ চেয়ারম্যান বলেন, রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হাইকোর্টের আদেশ ছিল। এই আদেশের বিরুদ্ধে সরকারের রিট দুঃখজনক। কোনো রাষ্ট্র অপরাধীর পক্ষ নিতে পারে না।বুধবার রাত ১০টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর গুদারাঘাট এলাকায় নিজের দোকানে স্টোভের আগুনে দগ্ধ হন বাবুল মাতুব্বর (৪৫)। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তখন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বাবুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।বাবুলের পরিবারের অভিযোগ, চাঁদা চাইতে এসে দোকানের কেরোসিনের স্টোভে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন মিরপুর শাহ আলী থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এ সময় স্টোভের আগুনে দগ্ধ হন বাবুল। পরে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, আমার বাবার হত্যার বিচার চেয়েছি, দিলেন লাশ- ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বাবা বাবুলের মরদেহের পাশে এমনই আহাজারি করছিলেন বড় ছেলে রাজু।রাজধানীর শাহ আলী থানা পুলিশের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বর।বাবুলের পরিবারের অভিযোগ, শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের নেতৃত্ব পুলিশ সদস্য ও পুলিশের সোর্স গায়ে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করেন।বুধবার রাত ১০টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর গুদারাঘাট এলাকায় নিজের দোকানে স্টোভের আগুনে দগ্ধ হন বাবুল মাতুব্বর (৪৫)। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তখন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বাবুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।বুধবার বার্ন ইউনিটে ভর্তির পর থেকে এসআই শ্রীধামসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও সোর্সের বিচারের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবুলের পরিবারের লোকজন।

বাবুলের দুই ছেলে তিন মেয়ে। বৃহস্পতিবার মরদেহের পাশে বড় ছেলে রাজু চিৎকার করে বলতে থাকে, আমার বাবাকে মেরে ফেলেছেন শাহ আলীর পুলিশ ও পুলিশ সোর্সরা। আমার বাবার কি অপরাধ? ফুটপাতে চা বিক্রি করেন, পুলিশকে চাঁদা দিতে পারেননি?কান্নাজড়িত কন্ঠে রাজু বলেন, মাদক ব্যবসায়ী পারুল ওরফে পারুলী। আমরা পাশাপাশি থাকি। পারুলীর অনেক কাস্টমার আমাদের বাসায় এসে গাঁজা কিনতে চান। জিজ্ঞেস করেন, গাঁজা দেন, পারুলী কই? এতে আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে পারুলীর ব্যাপারে থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ করি। এ অভিযোগের সূত্র ধরে ও ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার আরো দুই পুলিশ কনস্টেবল ও পুলিশ সোর্স দেলোয়ারকে নিয়ে গতরাত সাড়ে নয়টার দিকে আমার বাবার দোকানে যান।রাজু বলেন, এগুলো আমাদের কথা নয়, আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের বলে গেছেন। তখন এসআই শ্রীধাম আমার বাবাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। বলেন, ফুটপাতে দোকান করিস, চাঁদা দে। পুলিশ সোর্স দেলোয়ার এ সময় আমার বাবার হাত ধরে টানছিলেন। অপর এক পুলিশ কনস্টেবল জলন্ত স্টোভের চুলায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেন। তখন স্টোভের চুলা ফেটে আমার বাবার গায়ে আগুন ধরে যায়। আগুন ধরা অবস্থায় আমার বাবা এক পুলিশ কনস্টেবলের কলার ধরে বলেন, ‘তুই আমার গায়ে আগুন দিলি’। তখন কনস্টেবল বলেন, আমি আগুন দেইনি, এটা একটা দুর্ঘটনা। এ বলে সবাই সেখান থেকে দ্রুত সটকে পড়েন’।এ বিষয়ে শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ওখানে যাইনি। শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শাহীন মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, এসআই শ্রীধাম ঘটনার সময় ছিলেন না। ঘটনার পর গিয়েছেন। তিনি আরো জানান, মাদক ব্যবসায়ী পারুলীকে আমরা আটক করেছি। একটি মামলা হয়েছে। পারুলীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে।