দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: প্রায় এক যুগ আগে সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আসামিদের সাজা বহাল থাকবে কি না তা জানা যাবে ১১ ফেব্র“য়ারি। ২০০৪ সালে সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় ফাঁসির আদেশ পাওয়া জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ অন্য আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শেষ হয়। ১১ ফেব্র“য়ারি রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ধার্য করেন হাইকোর্ট।বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ, মোহাম্মদ আলী ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাসনা বেগম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর। বুধবার নবম দিনের মতো এ মামলার শুনানি হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। এ হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন, আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।ঘটনার দিন সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করে পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তাঁর ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, শরীফ শাহেদুল আলম ও দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ৩১ জুলাই ওই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
পরে ২০০৮ সালের ১১ মার্চ মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ও দেলোয়ার হোসেনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং বাকি দুই আসামি হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ এবং মুফতি মঈন উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। এই পাঁচ আসামি বর্তমানে কারাগারে আছেন।মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন।ঘটনাস্থলে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক কামাল উদ্দিন নিহত হন। পুলিশ কনস্টেবেল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে।আনোয়ার চৌধুরী ও সিটেলের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।পুলিশ ওই দিনই সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন মুফতি আব্দুল হান্নান ওরফে আবুল কালাম, হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
যথাযথ ঠিকানা না থাকায় মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম প্রথমে বাদ দেওয়া হলেও পরে তাকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছর নভেম্বরে হয় অভিযোগ গঠন।৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন।এর মধ্যে মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।পাঁচ আসামিই বর্তমানে কারাগারে রয়েছে বলে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানিয়েছে। নিম্ন আদালতের রায়ের পর ২০০৮ সালে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মুত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) হাই কোর্টে শুনানির জন্য আসে। ২০০৯ সালে আসামিরা আপিল করেন।এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি হাই কোর্টে শুনানি শুরু হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে যায়। এ ছাড়া আসামিরা আলাদা আপিল করেন। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে এ মামলার শুনানি শুরু হয়, বুধবার তা শেষ হলো।