দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারিত সময়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সম্পন্নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।দেশে এই প্রথম এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সম্পন্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন।পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়নে মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে গঠিত জাতীয় কমিটির চতুর্থ বৈঠকে সভাপতিত্বকালে এ নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন, এই মেগা প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে। এতে পূর্ববর্তী বৈঠকের সিদ্ধান্তও পর্যালোচনা করা হয়।প্রকল্পটির ওপর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সিরাজুল হক খান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাঁর সরকার আন্তর্জাতিক আনবিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ক্ষমতা বদলের পর পরবর্তী সরকার এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি।তিনি বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার আন্তর্জাতিক আনবিক সংস্থার অনুমতি নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয়।শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্পটি গ্রহণের আগে তিনি রাশিয়ার সরকারের কাছে এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আশ্বাস পেয়েছেন। কারণ এ ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই।প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুতের ওপর বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের জ্ঞান অর্জিত হবে। এছাড়া এ প্রকল্পে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানও হবে।
অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান ও ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য গত বছর ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন এবং রাশিয়ার কোম্পানি জে এস সি এটোমস্ট্র্যোসপোর্ট’র সঙ্গে একটি সাধারণ নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আনবিক শক্তি সংস্থা রোস্টাম এই ঠিকাদার কোম্পানি নিয়োগ দেয়। এটি বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার।সরকার দেশের ইতিহাসে বৃহৎ এই প্রকল্পটির অর্থায়ন চূড়ান্ত করে ১৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির প্রকৌশল নকশার অর্থায়নে রাশিয়ার সঙ্গে ৫শ’ মিলিয়ন ডলারের একটি আন্তঃসরকার এবং ২০১১ সালে রোস্টামের সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়া সব ধরনের সহায়তা দেবে এবং জ্বালানি সরবরাহ ও ব্যবহৃত জ্বালানিও ফেরত নেবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর ২৬২ একর জমির ওপর ২ ইউনিটে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান গত ৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২০২১-২০২২ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।