দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: সরকারি প্রাথমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে পুলভুক্ত প্রায় আড়াই হাজার জনকে নিয়োগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে উচ্চ আদালতে আসা প্রায় আড়াই হাজার প্রার্থীর নিয়োগের পথ খুলল বলে তাদের আইনজীবী জানিয়েছেন।বুধবার এ-সংক্রান্ত ৭২টি রিট আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম।
রিট আবেদনকারীদের আরেক আইনজীবী ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, ২০১১ সালে দেশের ৬১টি জেলায় সরকারি প্রাথমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এই পদে লিখিত পরীক্ষায় প্রায় ১১ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২৭ হাজার ৭২০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। এঁদের মধ্য থেকে ওই সময় ১২ হাজার ৭০১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাকি ১৫ হাজার ১০৯ জনকে পুলভুক্ত করে ছয় মাসের জন্য ছয় হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়।২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আবার নতুন করে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। তখন পুলভুক্ত প্রায় আড়াই হাজার সহকারী শিক্ষক ৭২টি রিট আবেদন করেন। এসব আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত আজ এ আদেশ দেন। ২০১১ সালের বিজ্ঞপ্তির আওতায় নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের করা ৭২টি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করা হলো ।পুলভুক্ত এই আবেদনকারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে নতুন করে কাউকে নিয়োগ না দিতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, শেখ মোহাম্মদ মুরশেদ, ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া ও খায়রুল আলম।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি খান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১১ সালের ৪ অগাস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ২৭ হাজার ৭২০ জন উত্তীর্ণ হন।তাদের মধ্য থেকে ১২ হাজার ৭০১ জনকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাকি ১৫ হাজার ১৯ জনকে রাখা হয় পুলভুক্ত হিসেবে। শিক্ষক পুল গঠনের জন্য ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে পরিপত্র জারি করে এবং দুই বছর পর ‘শিক্ষক পুল’ নীতিমালা করে। ওই নীতিমালায় ছয় মাসের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীদের সইও নেওয়া হয়।কিন্তু উত্তীর্ণ প্রার্থীদের স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবারও বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
ওই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ৫২ জন আবেদনকারী ওই বছর রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর হাই কোর্ট রুল দেয় এবং নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে।পরে একই বিষয়ে আরও ৭১টি রিট আবেদন ও রুল হয়। এসব রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার রায় দিল আদালত।রিট আবেদনকারীদের আরেক আইনজীবী ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া বলেন, হাই কোর্ট ২০১১ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পুলভুক্তদের মধ্যে রিট আবেদনকারীদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। তাদের নিয়োগের আগে নতুন করে অন্যদের নিয়োগ না দিতে বলেছে।অন্যদিকে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি খান বলেন, তারা আপিল বিভাগে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।