দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬: গত ১ জানুয়ারি শুরু হওয়া মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মেয়াদ বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। গত বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে স্টল-প্যাভিলিয়ন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেলার মেয়াদ নির্ধারিত সময়ের পর ১০ দিন বাড়ানো হয়েছিল।ইপিবির উপপরিচালক (অর্থ) ও মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব রেজাউল করিম বলেন, এবার মানুষ স্বচ্ছন্দে মেলায় আসতে পেরেছে। এজন্য খুশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন মালিকরা। এ কারণে এ বছর মেলার মেয়াদ বাড়ানো হবে না।
অবশ্য কারো কারো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে।এদিকে মেলায় স্টল ও প্যাভিলিয়ন মালিকরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, প্রত্যাশার তুলনায় বিক্রি কম, মেয়াদ বাড়ানো হলে ভালো হতো। আবার কেউ বলছেন, মেয়াদ বাড়ানো হলে প্রত্যেক স্টল ও প্যাভিলিয়ন মালিকের অতিরিক্ত খরচ রয়েছে। এই খরচ কাটিয়ে লাভবান হওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ আক্তারুজ্জামান অপু বলেন, মেলার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আমাদের কোনো দাবি নেই। মেলা মানেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিক্রি নয়। মেলার মাধ্যমে নিজেদের পণ্য সম্পর্কে দর্শনার্থীদের জানানোই মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, এটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা, এখানে পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে মানুষ আসছেন। আমাদের দেশীয় পণ্য সম্পর্কে জেনে যাচ্ছেন, এটাই তো বড় কিছু।
দু’দিন পরেই পর্দা নামছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। সে বিবেচনায় আজই মেলার শেষ শুক্রবার (আর তাই মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে।সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। এতে ফার্মগেট, খামারবাড়ি হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর রুট ও মহাখালী থেকে বিজয় সরণি হয়ে মিরপুর রুটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।এদিকে দুপুরের আগেই মেলার পার্কিং কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। বিশেষ করে মেলা সংলগ্ন ১ ও ২ নম্বর গেটে আর গাড়ি রাখার টোকেন দেওয়া হচ্ছে না। ফলে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ৩ নম্বর গেটে পার্কিং চলছে। মেলার ভেতরে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। শিশু থেকে শুরু প্রবীণ পর্যন্ত সব পেশার মানুষ প্যাভিলিয়ন ঘুরে ঘুরে পছন্দের পণ্যসামগ্রী ক্রয় করছেন।তবে এদের মধ্যে বেশ ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও দেখা গেছে। যারা ব্যস্ত রয়েছে সেলফি তুলতে। বাচ্চাদের বায়নায় কোনো কোনো বাবা-মাকে দেখা গেছে হকারদের কাছ থেকে আম ভর্তা, পেয়ারা, আচার কিনতে।সব মিলিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশেই চলছে বেচাকেনা। দোকানদাররা ব্যস্ত ক্রেতা-আকৃষ্টে। শেষের দিকে আয়োজন বলেই হয়তো তারা হাঁক ডেকে চলছেন।
মেলায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আহসান হাবীব নাতনিকে নিয়ে এসেছেন খেলনা কিনতে। তিনি বলেন, বায়না ধরেছে নাতনি। তাই বেশ কিছু খেলনা কিনতে এসেছি। রেবেকা আক্তার নামের এক গৃহিণী বলেন, ঘরের কিছু ফার্নিচার দেখতে এসেছি।বিসমিল্লাহ ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. আকাশ জানান, মেলার শুরু থেকে পণ্য কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিটি পণ্যে ১০০ থেকে ২০০ টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। তিন সেট প্রিন্টের থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ৯৯৯ টাকায়। মেলা শুরুর সময় এর দাম ছিল এক হাজার ২০০ টাকা। সাধারণ থ্রি-পিস, লোন থ্রি-পিস, আনস্টিচ থ্রি-পিসসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, মেলার শুরুতে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য আমাদের একটা ছাড় ছিল। কিন্তু অন্যান্য বছর মেলার শেষের দিকে ক্রেতা বাড়ে। এবার তার উল্টো চিত্র। মেলা শেষের দিকে হলেও ক্রেতার পরিমাণ কমছে।
তাই ছাড়ের পরও ছাড় দিচ্ছি। প্রত্যাশা ছিল মেলার মেয়াদ বাড়ালে বিক্রি বাড়বে। কিন্তু প্রত্যাশার অর্ধেকও বিক্রি নেই। আগামী রোববার ৩১ জানুয়ারি পর্দা নামবে মাসব্যাপী এই মেলার। শুক্রবার মেলার ২৯ তম দিনে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকেই মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলার সময় যত শেষ হয়ে আসছে ততই ক্রেতা সমাগম বাড়ছে। আর বিক্রেতারাও বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে। ফলে বিক্রিও বাড়ছে প্রতিদিন। মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় মিরপুর থেকে আসা রশিদ বাবুর সঙ্গে। স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় এসেছেন ফ্রিজ এবং এলইডি টিভি কেনার উদ্দেশ্যে। মেলার শেষের দিকে কেন আসলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেষের দিকে অনেক পণ্যে ছাড় থাকে সেই জন্যই আসা। বিশেষ করে আমরা যে পণ্য কিনব সেগুলোতে প্রথম দিকের চেয়ে এখন বেশি ছাড় পাচ্ছি।এদিকে ওয়ালটনের প্যাভিলিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলার শেষ মুহূর্ত উপলক্ষে আগের নগদ ছাড়ের পাশাপাশি এলইডি টিভিতে ৭ থেকে ১০ শতাংশ, ফ্রিজে ৫ শতাংশ, জেনারেটর ও এসিতে নগদ ৫ শতাংশ ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সে ৫ শতাংশ ছাড়সহ রয়েছে ফ্রি হোম ডেলিভারির সুযোগ দিচ্ছে দেশীয় এ ব্র্যান্ড ।