দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬: মাঘ মাসের শুরুতে রাজধানীতে হঠাৎ শীত বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে রাজধানীসহ সারাদেশ ।তবে এখন দিনের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। ফলে মধ্য মাঘেই শেষ হতে যাচ্ছে শীতের কনকনানি। দাপটও হারাতে শুরু করেছে কনকনে হাওয়া। তবে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ১০ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। আবারো শৈত প্রবাহের সম্ভবনা রয়েছে। গত এক দশকের সর্বনি¤œ তাপমাত্রার শৈত্য প্রবাহের পর পরই মেঘলা আকাশসহ হালকা কুয়াশায় কৃষি ও জনস্বাস্থের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। ইতোমধ্যে রংপুর রাজশাহী, বরিশাল ও ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের প্রকপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রার পারদ স্বভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে ৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যাবার কারণে অন্যতম প্রধান খাদ্য ফসল বোরো ধানের বীজতলাসহ রোপা ধানের ক্ষতির ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শীতকালীন সবজিসহ নানা রবি ফসল।
এদিকে, দেশের অনেক অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে স্থবিরতা রয়েছে ,বাড়ছে ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা । শীতের তীব্রতা বাড়ায় কষ্টে পড়েছে শ্রমজীবি সাধারণ মানুষ এবং বৃদ্ধ ও শিশুরা ।ঢাকা , ভোলা রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।আকাশ অস্থায়ীভাগে আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।ঠান্ডা জনিত রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা ।এঅবস্থায় চিকিৎকরা শিশুকে সবসময় গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে, দু একদিন ধরে রাজধানীতে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন আওহাওয়া। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাতাস বাড়ছে শীতের তীব্রতা । ঠান্ডা জনিত রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা । প্রতিদিনই বাড়ছে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা । রাজধানীতে সূর্যেও দেখা না পাওয়ায় কিছুতে অস্বিস্তিতে ছিন্নমূল মানুষ । ঢাকা শিশু হাসপাতালে সহকারি অধ্যাপক ডা: সালাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদেও হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন । এসময় বাচ্চাদেও ঠান্ডা থেকে নিরাপদ রাখতে হবে। এবং শীররটাকে গরম রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
নওগাঁ, দিনাজপুর ও নীলফামারী অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।আবহাওয়া দৃশ্যপটের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এ মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।আগামী সপ্তাহের রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার দেশব্যাপী হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ঢাকায় ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। একই ধারা বজায় থাকতে পারে শুক্রবারও। বৃষ্টি হতে পারে ফেব্র“য়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেও। এ বৃষ্টিপাতের ওপর ভর করে আবারও শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।
বছরের শুরুর দিন থেকেই শীতের আমেজ তেমন একটা ছিলই না। মাঘের মাঝামাঝি সেই শীতের পারদ ভেদ করে দেখা মিললো ঝলমলে রোদ। এর পরেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির পর টানা কয়েকদিন দেশজুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর কনকনে শীত। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছিল গোটা দেশ। আবারও সেই শীতের রেশ কেটে গিয়ে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। শীত জনিত কারণে অনেক মানুষ মারা গেছে আর রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা রোগে আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধরা । আর অসহায় দরিদ্র মানুষ গরম কাপড় এবং কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে । প্রশাসনের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকই ।মুন্সীগঞ্জ,শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি সার্ভিস সাত ঘন্টা বন্ধ থকার পর শুক্রবার সকাল ৮টায় আবার চালু হয়েছে ।এর আগে ঘন কুয়াশায় রাত ১টা থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়।কুয়াশার কারণে মাঝ নদীতে ১২টি ফেরি আটকা পড়ে। কনকনে শীতে নারী ও শিশুসহ সহ¯্রাধিক যাত্রী অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে। ফেরি চলাচলা বিঘিœত হওয়ায় দু’পাড়ে ২ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।শিমুলিয়ায় বিআইডব্লিউটিসির এজিএম মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, রাতে ঘন কুয়াশা পড়লে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখতে হয়। তবে ফেরি চালুর পর আবার স্বাভাবিক পারাপার শুরু হয়েছে।
বুধবার ভোরটাও আগের মতই ঢাকা পড়েছিল কুয়াশায়। তবে কুয়াশা মাড়িয়ে সূর্যের উঁকি দিতে একটুও দেরি হয়নি। ঝলমলে আলোভরা সূর্যের রেখা এসে কুয়াশা কেটে দিতে শুরু করে। অনেকটা বিদায়ের পথেই যেন হাঁটতে শুরু করেছে শীত। মৃদু থেকে হালকা হয়ে পরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে এ শীত। সর্বশেষ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমনটাই বলা হয়েছে। এবারের মৌসুমে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে। সেখানে বেড়েছে দিনের তাপমাত্রা।ঘনকুয়াশা শেষে রোদের হাসিতে মেতেছে শ্রীমঙ্গলের চা পল্লীসহ আশপাশের শীতপ্রবণ এলাকা। এছাড়া পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে,কোথাও কোথাও ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা। তবে শীতের আবহ পুরোপুরিভাবে কেটে যেতে একটু সময় লাগবে। আবহাওয়া পূর্বাবাস কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া পরিস্থিতি এখন কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের অনুকূল নয়। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনাসহ গত এক দশকের সর্বনি¤œ তাপমাত্রার শৈত্য প্রবাহের পর পরই মেঘলা আকাশসহ হালকা কুয়াশায় কৃষি ও জনস্বাস্থের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। ইতোমধ্যে বরিশাল ও ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের প্রকপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাপমাত্রার পারদ স্বভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে ৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যাবার কারণে অন্যতম প্রধান খাদ্য ফসল বোরো ধানের বীজতলাসহ রোপা ধানের ক্ষতির ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শীতকালীন সবজিসহ নানা রবি ফসল। মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে ২৪ জানুয়ারি বরিশালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের স্থির হয়। কিন্তু এর ২৪ঘন্টা পরেই তা সাম্প্রতিক কালের সর্বনি¤œ ৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পায়। ২৬জানুয়ারি ৮ডিগ্রি এবং ২৭ জানুয়ারি বরিশালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রীর ওপরে উঠলেও মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যধানে গতকাল তাপমাত্রার পারদ আরো ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠেছে। তবে উত্তর-পূবের হীমেল হাওয়ায় শীতের অনুভুতি ছিল যথেষ্ঠ বেশী। আবহাওয়া বিভাগের মতে পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের গঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
সাথে এ মওশুমের স্বাভাবিক লঘু চাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বরিশাল, ফরিদপুর ও মাদারীপুর অঞ্চল সহ উপকূলীয় এলাকায় হালকা বা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কথাও বলা হয়েছে। গত বুধবার দুপুর থেকেই বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের আকাশ হালকা মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। শুক্রবার ও দিনভরই সূর্যকে বার বারই আড়াল করেছে মেঘমালা। আবহাওয়া বিভাগ থেকে মেঘনা অববাহিকায় হালকা থেকে মাঝারী কুয়াশার কথাও বলা হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও মোংলা এলাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠলেও পূর্ব-উত্তরের মওশুমী বায়ুসহ দিনের বেশীরভাগ সময়ই সূর্যকে মেঘ আড়ালে রাখায় শীতের কাপুনী অব্যাহত ছিল পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। তবে এবারে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে নিকট অতীতের নিজরবিহীন শৈত্য প্রবাহের কারনে গমের উৎপাদন আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে পৌঁছার সম্ভবনা রয়েছে। শীত প্রধান দেশের প্রধান খাদ্য ফসলÑগম গত প্রায় এক দশকেরও কিছ বেশী সময় ধরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হচ্ছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে শীতের তীব্রতা কম থাকায় এর আবাদ ভাল হলেও উৎপাদন আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে পৌঁছছে না। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই গম আবাদে বিশ্বের ৮ম থেকে ১০ম স্থানে পৌঁছেছে।
তবে যে বছর শীতের তীব্রতা যত বেশী থাকে উৎপাদনও ততটা বৃদ্ধি পায়। যদিও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীগণ ইতোমধ্যে কম তাপমাত্রায় অধিক উৎপাদনক্ষম গম বীজ উদ্ভাবন করে তা কৃষক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেছে। কিন্তু বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদাশীনতায় তার আবাদ প্রযুক্তি ও বীজ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছ ভালভাবে পৌঁছেনি। তবে এবারের নজীরবিহীন শৈত্য প্রবাহে গমের ভাল উৎপাদন নিয়ে আশা থাকলেও বোরা বীজতলা, গোল আলু ও শীতকালীন সবজির বাগানকে ব্যাপাক ঝুঁকির কবলে ঠেলে দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। এ তিনটি ফসলই সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিÑঅর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী দু-এক দিনে তাপমাত্রার খুব একটা পরিবর্তনের সম্ভবনা নেই বলেও জানান হয়েছেএবার পুরো পৌষে শীতের দেখা না মিললেও হঠাৎ মাঝ মাঘে ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছিল রংপুর অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতো না। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলো ছিল চরম বিপাকে। তবে, দু একদিন ধরে সেই অবস্থা অনেকটা কেটে গেছে। আকাশে রোদ উঠেছে।
স্বাভাবিক হতে শুরু হয়েছে জনজীবন। গতি ফিরেছে মানুষের দৈনন্দিন কাজে।রংপুর আবহাওয়া অফিস বলছে, অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। দু চার দিনের মধ্যে পরিস্থিতি একে বারেই স্বাভাবিক হতে পারে। গত কয়েক দিনের তুলনায় পরিস্থিতি মানুষের অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসছে।আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কমকতা মোহাম্মদ আলী জানান, শুক্রবার সর্ব নিম্ম তাপমাত্রা দশ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৩ দশমকি ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে গেলো কয়েকদিনের শীতের কারণে স্থবির হয়ে পড়া নগরজীবনে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। ভোরের দিকে কিছুটা শীত অনুভূত হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরো দমে মাঠে কাজে নেমে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।