দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬: শীতের শুরুর দিকে বাজারে শাক-সবজির দাম চড়া থাকলেও এখন এসব শাক-সবজির দাম হাতের নাগালে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। বাজারে সবজির সরবরাহও প্রচুর। শীতের এই পুরো সময়ে তরিতরকারির সরবরাহ ঠিক থাকলে বাকি সময়টাও দাম সাধ্যের মধ্যে থাকবে বলে জানান তাঁরা। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া যায়। এদিকে, মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম প্রতি কেজিতে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আমদানিকারকেরা জানান, মন্দা আবহাওয়ার কারণে এবার ভারত, নেপাল ও অস্ট্রেলিয়ায় মসুর ডালের ফলন কম হওয়ায় দেশের বাজারে প্রয়োজনীয় এই ভোগ্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়েছে।
তবে ভোক্তাদের জন্য ভালো খবরও আসছে।সেটি হলো, আগামী মাসের শেষ দিকে দেশের কৃষকেরা ঘরে মসুর ডালের ফলন তুলবেন। এ কারণে পাইকারি বাজারে দাম এখন কিছুটা পড়তির দিকে রয়েছে।দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি চিকন দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৩৪ টাকা। আর মানভেদে প্রতি কেজি মোটা দানার মসুর ডাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা ও মাঝারি দানা ১০৩ থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিকন দানার খোলা মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৪২ টাকা এবং প্যাকেটজাত মসুর ১৪৫ েেথকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। মোটা দানার দর ছিল ১০০ টাকার নিচে। আর মাঝারি দানার মসুর বিক্রি হয় ১১০ টাকা দরে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজার ও কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ১৫-২৫ টাকা, বাঁধাকপি ১৫-২০ টাকা, গাজর ১৫-২০ টাকা, শিম ১৫-২০ টাকা, টমেটো ২০-২৫ টাকা, মুলা ১৫-২০ টাকা, চিচিঙ্গা ২৫-৩০ টাকা, বরবটি ৩০-৩৫ টাকা, বেগুন ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পালং শাক প্রতি আঁটি ১০ টাকা, লাল শাক পাঁচ টাকা, লাউ শাক ১০ টাকা, কচু শাক ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা রাসেল হোসেন বলেন, সবজির দাম বেশি বাড়ে নাই, অহনও কম আছে। দেখেন না, সক্কল সবজিই সস্তা।ফার্মগেটের বাসিন্দা সরকারি চাকুরে গোলাম ফারুক কিনছিলেন সবজি। তিনি বলেন, শীতের শুরুর দিকে যেমন সব সবজির দামই অনেক বেশি ছিল, এখন তা নেই। হাতের নাগালেই আছে। তিনি এই সময় প্রতি বেলার খাবারের তালিকায় সবজি রাখেন বলে জানান।
বাজার থেকে লাউ কিনছিলেন নিউ ইস্কাটনের বাসিন্দা ওবায়দুর রহমান। পেশায় ব্যবসায়ী এই ব্যক্তি জানালেন, কিছুদিন আগেও এই লাউ তিনি প্রতিটি কিনেছেন ৪০-৪৫ টাকায়। এখন দুটি কিনলেন ৬০ টাকায়। তিনি বলেন, সব সবজির দামই ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। বেশির ভাগ সবজির দাম কমলেও কিছু সবজির দাম এখনো বেশি। করলা বেচাকেনা নিয়ে কারওয়ান বাজারের এক সবজি বিক্রেতার সঙ্গে তর্ক লেগেছে ঢাকা পলিটেকনিকের চাকুরে খগেন্দ্র নাথ সরকারের। খগেন্দ্র বলেন, এই করলা চাইছে ৫০ টাকা কেজি। এটা তো আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিক্রেতার দাবি তাঁর করলা বাজারের সেরা বলে দামও বেশি। রাজধানীর খুচরা বাজারে এক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী রসুনের দাম। এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে চিনির দাম।খুচরা বাজারভেদে একমাসের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।রসুনের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগে দেশি রসুনের দাম ছিল প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকা। বর্তমানে তা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গত মাসের শেষের দিকে আমদানিকৃত রসুনের দাম ছিল কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। যা বর্তমানে বাজারভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বাজারে দেশি রসুনের মজুদ কম ও বিদেশি রসুন বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে এ কারণে দাম বেশি বলে জানান কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সালাউদ্দিন।রসুনের দাম বৃদ্ধির পেছনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলেও রসুনের একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন।তবে শান্তিনগর বাজারের রসুন বিক্রেতা আলম বলেন, পাইকারি বাজার থেকে অনেক বেশি দামে কোনো কিছুই খুচরা বাজারে বিক্রি করা সম্ভব নয়। দেশি রসুন বাজারে আসবে আগামী মাসে, তখন দাম কমে যাবে।
রাজধানীর বাজারে কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা দাম কমেছে পেঁয়াজ ও আলুর। নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৮ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকায়।অপরিবর্তিত দামে রাজধানীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগি, ডিম ও সবজি। বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। বাজার ও আকারভেদে ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।গত সপ্তাহের তুলনায় ৫ টাকা দাম কমেছে ফুলকপি, পাতাকপি। প্রতিপিস ২০-২৫ টাকা, টমেটো কেজি ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে কাঁচামরিচ ও শালগমের দাম। কাঁচামরিচ কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, শালগম ২০ টাকা, বেগুন জাতভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কিছুটা দাম বেড়েছে ধনেপাতার। শুক্রবার সকালে রাজধানীর বাজারে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। শিম প্রতিকেজি ১০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা। চলতি সপ্তাহে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।চিনি আমদানিতে শুল্কারোপ করায় খোলা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে একাধিক ব্যবসায়ী জানান। ২২ ডিসেম্বর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যারিফ মূল্য বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে পূর্বের মজুদকৃত থাকলেও দেশের বাজারে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকেই চিনির দাম বাড়তে থাকে ।