1453803106_20694_1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬: শীতের তীব্রতা কমলেও এখনো কাটেনি গ্যাসের সংকট। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে বাসা বাড়িতে কিছুটা দেখা মিললেও সংকট ছিলো সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে । রাজানীর অধিকাংশ স্টেশনে গ্যাস না পেয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে গ্রাহকদের। আবার অনেক স্টেশনে সামনে গিয়ে দেখা গেছে গাড়ি দীঘর্ং লাইন। আর এ সংকটের কারণে সিএনজি চালিত অটো রিকসা চলাচল প্রায় বন্ধ । ফলে চরম বিপাকে পড়েছে যাত্রীরা ।প্রতিবারের মতো এবার শীতের রাজধানীসহ সারাদেশে গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবার সঙ্কটের তীব্রতা যেন অনেকটাই বেশি। পরিস্থিতি এতই নাজুক হয়েছে যে, ভোর থেকেই গ্যাস উধাও হয়ে যাচ্ছে। আসতে আসতে সন্ধ্যা লেগে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও গভীর রাত ছাড়া গ্যাস মিলছে না। ফলে অনেক এলাকায় দৈনন্দিন রান্নার কাজ একেবারেই থেমে গেছে। কেউ কেউ খাবারের জন্য হোটেলে ছুটছে। রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকায় এ পরিস্থিতি। অন্যদিকে সিএনজি স্টেশনগুলোতেও নেই গ্যাস। কোনো গাড়িই প্রয়োজনমত গ্যাস পাচ্ছে না। সিএনজি স্টেশনগুলোতে পড়ছে গাড়ির দীর্ঘ সারি। সব মিলিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা।

গ্রাহকরা বলছেন, গত কয়েকসপ্তাহ ধরে এ সংকটের কারণে ব্যক্তিগত গ্যাস চালিত গাড়ি এখন জ্বালানি তেলে চালাতে হচ্ছে । সিএনজি পাম্প কর্তৃপক্ষ বলছে শীতের তীব্রতার কারণে গ্রাস সংকটের কথা বলা হলেও শীতের তীব্রতা কমার পরও সংকট কাটেনি । এর সুনিদিষ্ট কারণও জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ । রাজধানীর গ্যাস সংকট কিছুটা কমেছে গত কয়েকদিনের তুলনায় ফিলিং স্টেশন গুলো আগের চেয়ে কিছুটা ভাল এখন আর আগের মত দীর্ঘ লাইন ধরে দাড়িঁয়ে থাকতে হয়না । নেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি ।তারপরও অনেককে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে গ্যাস নিতে ।এদিকে বাসাবাড়িতে এখন স্বাভাবিক হয়নি গ্যাস । রাজধানীর ব্যস্ততম অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি । নাগরিক জীবনের বহু মানবিক সংকট এখানকার আভিজাত্যকে র্স্পস কওে না তবে গত কয়েকসপ্তাহের গ্যাস সংকট বেশ ভাল ভাবেই ভোগাচ্ছে এই ধানমন্ডিতেই গেল ২ দশক ধরে থাকা শারমিন হককে । রান্না-বান্না এখন খুব একটা করেননা ,তবে রসুইঘরের সমস্যাগুরো ভাল বোঝেন তিনি । চুলায় ভাত চড়িয়েছেন ঘন্টা পেরিয়েছে তবে গ্যাস সংকটে চাল আর সিদ্ধ হয়না ।এরকমে ভোগান্তি গত এক সপ্তাহে ধরে রাজধানীর অনেক এলাকায়।

ঢাকার উত্তর থেকে দক্ষিণ থেকে সব খানেই এমন গ্যাস সংকট। এখন গ্যাসের ধারণাকৃত মজুদ আছে ১৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। আগামিতে মজুদ ও চাহিদা দুটোর কোনটিই আর না বাড়লে যা শেষ গহতে আর বাকী হয়ত এক যুগ । একনো চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি আছে তবে কিছুটা উন্নত হওয়ার রাজধানীর মানুষের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নগরবাসীর। অবৈধ সংযোগ ও সরবরাহের তুলনায় অধিক চাহিদার সমন্বয়ের কারণেই গ্যাস সংকট তৈরি হচ্ছে বলে অনেকের অভিমত । আর এ সমস্যা পুরো পরি সমাধানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো বেশী জোরালেঅ পদক্ষেপ নেওযার দাবিও তাদের। লালবাগ আজিমপুর, মালিবাগ বাড্ডা, মগবাজার, বনশ্রী, শান্তিনগর,মিরপুর, সবুজবাগ ও খিলগাঁওসহ বেশীর ভাগ এলাকায় এখন গ্যাসের সরবরাহ অনেক কম থাকায় গৃহণীতের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে । কোথাও কোথাও কিছুটা গ্যাস সংকট থাকলেও গত কয়েকদিনের তুলনায় এখন স্বস্তি¡ও কথাই জানালেন নগরবাসী।

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার তেজকুনি পাড়া থাকেন সেলিনা জামান। চাকরিজীবী স্বামী আর স্কুলপড়–য়া মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। সকালে স্বামী অফিসে যাওয়ার পথে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে যান। তাই তাদের জন্য নাশতা বানাতে ঘুম থেকে উঠেই সেলিনাকে চুলার কাছে দৌঁড়াতে হয়। সকালের নাশতার পালা শেষ না হতেই শুরু হয় দুপুরের রান্নার জোগাড়। কিন্তু সম্প্রতি তার বাঁধাধরা কাজের ছন্দে ছেদ পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে এ অঞ্চলে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। ভোর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ থাকে না। নিভু নিভু উনুনে সকালের নাশতাও বানানো সম্ভব হয় না। রান্না করার মতো গ্যাস আসতে আসতে বিকেল হয়ে যায়। একই অবস্থা মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের বাসিন্দা সিমি জাহানের। গ্যাস নেই, উনুন জ্বলে না। ফলে সময়মত খাবার রান্না হয় না বাসায়, মাঝেমধ্যে অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, বাইরে থেকে আনা খাবারের ওপর নির্ভর করতে হয়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর, লালবাগ, পোস্তগোলা, বাসাবো প্রভৃতি অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস সংকট প্রায় প্রতিবছরের ঘটনা। কিন্তু এবারে নতুন করে সঙ্কট দেখা দিয়েছে শ্যামলী, কলাবাগান,

মতিঝিলের কোনো কোনো এলাকায়ও। প্রতিদিন আবার নতুন নতুন এলাকায় সংকট দেখা দিচ্ছে।তবে তিতাস গ্যাস সূত্র জানিয়েছে, ময়লা জমে যাওয়ায় বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ পাইপলাইনে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। দুয়েকদিনের মধ্যে এটি চালু হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে।অন্যদিকে গ্যাসের চাপ কম থাকায় রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় সিএনজি স্টেশনগুলোতেও প্রভাব পড়ছে। কোনো গাড়িতেই প্রয়োজনমত গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না। সময়ও লাগছে খুব বেশি। স্টেশনগুলোতে পড়ছে গাড়ির দীর্ঘ সারি। জানা গেছে, ঢাকা ও এর আশপাশের প্রায় ২০০ সিএনজি স্টেশনে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা পাঁচ কোটি ঘনফুট হলেও বর্তমানে অর্ধেকও পাচ্ছে না স্টেশনগুলো।সিএনজি স্টেশন মালিকরা জানান, স্টেশনে গ্যাসের চাপ থাকার কথা ১৫ পিএসআই। অথচ সেখানে চাপ নেমে আসছে পাঁচ পিএসআইয়ের নিচে। কর্মীরা জানান, কয়েকদিন ধরে গ্যাসের চাপ এত কম যে, স্টেশন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কল্যাণপুরের রহমান ফিলিং স্টেশন, মিরপুর দারুস সালামের পূর্বাচল ও যমুনা ফিলিং স্টেশন, এস এস ফিলিং স্টেশন, জয়কালী মন্দির রোডের সিএনজি স্টেশন, সাত মসজিদ রোডের সাউদার্ন সিএনজি স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ির দীর্ঘ সারি। চাপ কম থাকায় গ্যাস দিতে অনেক বেশি সময় লাগছে বলে দায়িত্বরত কর্মচারীরা জানান। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে সাভার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবার শীতে এমনিতেই পাইপ লাইনে কনডেনসেট (গ্যাসের উপজাত) জমে। এছাড়া শীতে গ্যাস ব্যবহার হয় বেশি। ফলে এ সময় গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হয়। কিন্তু এবারের সমস্যাটা কেবল এসব কারণে নয়। দিনের পর দিন অবৈধ সংযোগ বেড়ে যাওয়া, গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে এখন থেকে প্রতিবছর এ সংকট বাড়বে।সংশ্লিষ্টরা বলছে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি ঘটবে না। সে ক্ষেত্রে এখনি পাইপলাইনের গ্যাসের বিকল্প লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বা সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে হবে। আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে এলপিজি ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারের পর সাংবাদিকরা আবাসিকে বিদ্যমান গ্যাস সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আবাসিক খাতে গ্যাসের সমস্যা থাকবে। আমরা চাচ্ছি আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীরা ধীরে ধীরে এলপিজিতে চলে যান। এলপিজিকে সাশ্রয়ী করতে এবং এর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার চেষ্টা করছে। আগামী তিন বছরে আমরা চাচ্ছি, আবাসিকের ৭০ শতাংশ যেন এলপিজিতে চলে।

অন্যদিকে, গ্যাসের রাজ্য সিলেটে বিরাজ করছে জ্বালানি গ্যাসের সমস্যা। সিলেট নগরীর বাসা-বাড়িতে ঠিকমতো জ্বলছে না গ্যাসের চুলা। নিভু নিভু করে সারাক্ষণ। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় দিনের অনেক সময় গ্যাসের দেখাও মিলছে না। ফলে গ্রাহকরা রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। গ্যাস সমস্যার কারণে ক্ষুব্ধ লোকজন ইতোমধ্যে মিছিল-সভাও করেছেন। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো দীর্ঘদিন ধরে সিলেটেও নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্যাস সংযোগ প্রত্যাশীদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। সংযোগ প্রাপ্তির জন্য তারা সংশ্লিষ্ট মহলে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। অথচ সিলেট অঞ্চল থেকে উত্তোলিত গ্যাসে চলছে সারা দেশব্যাপি। বিভিন্ন শহর-গ্রামে চুলা জ্বলছে বাসা-বাড়ির, চাকা ঘুরছে শিল্প-কারখানার।

বেশ কিছুদিন ধরে নগরীর কাজীটুলার একাংশ, কলবাখানি জালালী, রায় হোসেন, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, আরামবাগ, কুমারপাড়া ঝেরঝেরিপাড়া, ঝরণারপার, লালাদিঘীরপার, বড়বাজার আ/এ, বনকলাপাড়া, দাঁড়িয়াপাড়া, আখালিয়া হাওলদারপাড়া, মুন্সিপাড়া, খোজারখলা, ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ সমস্যা দেখা দিয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময়ই গ্যাসের চাপ পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনমতো। চাপ কম থাকায় চুলা জ্বলছে নিভু নিভু করে। কোনো কোনো এলাকায় চুলাতে আগুন ধরানো যায় না দিনের অনেক সময়। গ্যাসের এ সমস্যার কারণে গৃহিনীরা রয়েছে চরম ভোগান্তিতে। তারা সময়মতো করতে পারছেন না রান্নাবান্না। আর এর ফলে কর্মজীবী লোকজন যথাসময়ে যেতে পারছেন না নিজ নিজ কর্মস্থলে। দিনশেষে বাসায় ফিরে খাবার খেতে পারছেন না ঠিকমতো। গ্যাসের এ সমস্যার কারণে গ্রাহকদের মাঝে বিরাজ করছে অসন্তুষ। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভুক্তভোগী লোকজন প্রকাশ করেছেন নিজেদের ক্ষুব্ধ। তারা দ্রুত এসমস্যার সমাধান চান।ঝরণারপার এলাকার জাহানারা আক্তার জানান, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ কম থাকে। অনেক দিন সকালের নাস্তা যথাসময়ে তৈরি করা যায় না। দুপুরের খাবার রান্না হতে হতে গড়িয়ে যায় বিকেল।

কাজিটুলার আয়শা বলেন, রান্না এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবার রান্না করতে কেটে যায় কয়েক ঘন্টার সময়। এ সমস্যার কারণে অনেক দিন সন্তানদের স্কুলে যথাসময়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার গৃহিনী নাদিয় সুলতানা বলেন, গ্যাস সমস্যার কারণে ঠিকমতো রান্না না হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে যথাসময়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়াও যাচ্ছে না ঠিকসময়ে। দিনের বড় একটা সময় গ্যাস চুলায় থাকেই না।এদিকে, গ্যাস সমস্যার সমাধান দাবিতে গত ককেদিন নগরিতে মিছিল করেছেন ৫নং ওয়ার্ডস্থ ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার বাসিন্দারা।

সকালে তারা মিছিল নিয়ে নগরীর মেন্দিবাগস্থ জালালাবাদ গ্যাস অফিসে যান। জালালাবাদ গ্যাস অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল ইসলাম খান এসময় তাদেরকে গ্যাসের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে তারা নিজ নিজ বাসায় ফেরেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারী রায় হোসেন কলবাখানি সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহমদ বলেন, গত বছরের ফেব্র“য়ারি মাস থেকে এলাকায় সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার যোগাযোগ করেও সারা মিলেনি। তবে এ সমস্যা সমাধানে জালালাবাদ গ্যাস অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল ইসলাম খান আশ্বাস দিয়েছেন।