দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬: বৃষ্টি সঙ্গে করেই সারা দেশে মাঘের শীত জেঁকে বসেছে। মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে, যা আরো তিন-চার দিন চলতে থাকবে। তবে সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রাও বাড়তে থাকবে। শীতের দাপটে শিশু ও বয়স্কদের রোগবালাই বাড়ছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন জেলায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক শ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মারা গেছে অন্তত আট শিশু। দেশের অন্তত ১৫ জেলা থেকে পাঠানো খবরে দেখা গেছে, মাঘের কনকনে শীতের সঙ্গে কুয়াশার কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।শীতবস্ত্রের কারণে কষ্ট পাচ্ছে দরিদ্র মানুষজন। সরকারি সহায়তা সেই তুলনায় অপ্রতুল।মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুস্ক থাকবে।সন্দ্বীপ, কুমিল্লা, সীতাকুন্ড, রাঙ্গামাটি ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।আবহাওয়া অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।ঢাকায় বাতাসের গতি ও দিক উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘন্টায় ৫ থেকে ১০)কি. মি. এবং বাতাসের আপেক্ষিক আদ্রতা ৯৬%।আবহাওয়া দৃশ্যপটের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাবা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ মৌসমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।এ ছাড়া টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

চুয়াডাঙ্গা: কনকনে শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা। গত কয়েকদিনের টানা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে এখানকার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।মঙ্গলবার এখানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (শ্রীমঙ্গলের সাথে যৌথভাবে)। এ নিয়ে গত ৬ দিন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে।শহরতলি ও গ্রামের মানুষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন দরিদ্র মানুষেরা। সরকারিভাবে জেলার দুস্থদের মধ্যে যে সংখ্যক কম্বল বিতরণ করা হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। শীতজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বহু সংখ্যক রোগি। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও নবজাতক।এদিকে ঠাণ্ডার কারণে এখানকার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়লেও সুখবর রয়েছে গম ও ভুট্টা চাষীদের জন্য। স্থানীয় কৃষি অফিসের মতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গম ও ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে। এছাড়া বোরো ধান রোপন শেষ পর্যায়ে হওয়ায় ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন নেই। তবে বিপাকে আছেন পানচাষীরা। কুয়াশার কারণে বরজে ঝরে পড়ছে অপুষ্ট পান।চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম জানান, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতজনিত রোগ : চুয়াডাঙ্গা সিনেমা হলপাড়ার গৃহণী সাজেদা ইসলামের পরিবারের লোকসংখ্যা চারজন। বাড়ির সবাই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। কাশি ও গলাব্যথা দেখা দিয়েছে। এই পরিবারের চারজনই বাড়িতে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাচ্ছে।

সাতটি জেলার হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা েেগছে, পাঁচ শতাধিক শিশু শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ার সমস্যা নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছে। সেই সঙ্গে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্করাও।চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ৫৯ শিশু রোগী। আর মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ২০ জন বয়স্ক রোগী। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ৫০০ শিশু ভর্তি আছে, যাদের মধ্যে অনেকেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। গত এক সপ্তাহে এখানে পাঁচ-সাতটি শিশু এ ধরনের রোগে মারা গেছে।প্রতিদিন গড়ে দিনাজপুরের জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে ৫০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। এদের মধ্যে জেলা সদরের গাবুরা গ্রামের নাজমুল হকের ১৮ মাসের শিশু ছেলে আজিম নিউমোনিয়ায় মারা গেছে গত শনিবার। গতকাল নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৬৪ শিশু। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে ২০০ শিশু চিকিৎসা নিতে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ভিড় করছে।

শিশু ওয়ার্ডগুলোতেও ভর্তি আছে প্রায় আড়াই শ শিশু। জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে গত তিন দিনে ৩০ রোগী ভর্তি হলেও চিকিৎসা নিয়েছে ৪০ জনেরও বেশি। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০টির বেশি শিশু এবং ২০ জন বৃদ্ধ ভর্তি হয়েছেন।রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শারমিন পারভীন বলেন, শিশুদের গরম কাপড় পরিধান করা এবং তাদের ঘরের বাইরে সকালে এবং সন্ধ্যার পর বের না করাই ভালো।শীতে কাহিল জনজীবন : শীতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ছিন্নমূল, গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের রিকশাচালক মজিবর রহমান বলেন, ‘আমি আজকে (সোমবার) সকাল ৬টায় রিকশা নিয়ে বাইরে এসে দেকি কুনু নোক (মানুষ) নেই। একেনে আগুন ধরিয়ে চুপ করি বইসলাম। সকাল ১০টা নাগাত একটা ভাড়া মারলাম। জারের (শীতের) জন্যি নোকজন বাইরি আসে না।’

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে সন্ধ্যার পর পরই চারদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ১০ হাত দূরের কোনো কিছু দেখা যায় না। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও রাস্তায় যানবাহন চালাতে হচ্ছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। আর রাতের বেলায় ঝির ঝির করে কুয়াশা ঝরছে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে খুব একটা বের হচ্ছে না। একটানা তিন দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। সদর উপজেলার ভাঁদগাঁও গ্রামের দিনমজুর ভুলেশ বর্মণ বলেন, ‘প্রতিদিন শহরে আসচু কাজ মিলচে নি। মোর বাড়িত খাউনে ওয়ালা পাঁচজন। মোর বউও মানুষের বাসায় কামলা খাটে খাবার নিয়ে আসে সেলায় খাচি তিন দিন ধরে।গাইবান্ধায় রবিবার সারা রাত ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টির মতো শিশির পড়েছে। এ ছাড়া গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত হিমেল হাওয়া ও কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়েছিল সর্বত্র। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী পথে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর সঙ্গে জেলা ও উপজেলা সদরের নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় চরাঞ্চলের মানুষদের চরম বিপাকে পড়তে হয়।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলী জানান, গতকাল রংপুর অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।তিস্তাপারের ধামুর এলাকার এরশাদ আলী (৭০) বলেন, নদীপারের ঝুপড়ি ঘরোত হু হু করি বাতাস ঢোকে। ঠাণ্ডায় সারা রাইত নিন (ঘুম) ধরে না। একই এলাকার শহর বানু ও জাহানারা বেগম বলেন, মাঘের জারে (মাঘ মাসের ঠাণ্ডায়) বাঘ কান্দে সবায় কয়, তয় এবার মাইনসের কান্দন কাইও দ্যাকে না। শেরপুর জেলা সদর ও নকলা উপজেলার চরাঞ্চল এবং নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী জনপদের ছিন্নমূল-দরিদ্র মানুষের কষ্টের শেষ নেই। যশোরে দুপুর ১২টার আগে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ছিন্নমূল ও গরিব মানুষ শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাস্তার পাশে আগুন জ্বেলে বসে থাকছে।

সরকারি সহায়তা অপ্রতুল : ঠাণ্ডায় শ্রমজীবী, ছিন্নমূল মানুষের অবস্থা বেশি কাহিল। শীতবস্ত্রের অভাবে কাজের জন্য বাইরেও বের হতে পারছে না তারা। কেউ কেউ পুরনো কাপড়ের দোকান থেকে শীতবস্ত্র কিনছে। সরকারি সহায়তা অপ্রতুল বলে জানা গেছে। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর কম্বল বিতরণ করেছে। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, জেলার পাঁচটি উপজেলায় সরকারিভাবে ২১ হাজার ২৪২টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গাইবান্ধা সদরে আট হাজারসহ ৩১ হাজার কম্বল সাত উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। পিরোজপুর উপজেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মহিলা পরিষদ, মহিলা সংস্থা, অ্যাপেক্স ক্লাব, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। নীলফামারী সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভায় এবার পাঁচ হাজার ৪৮০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আর জেলায় এ পর্যন্ত ২৪ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। শেরপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সমিতির কার্যালয়ের সামনে দেড় শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ মো. মোজাম্মেল হক।

ফসল ও আবাদ নিয়ে শঙ্কা : নীলফামারীর পৌর এলাকার দক্ষিণ হাড়োয়া গ্রামের কৃষক হিরম্ব কুমার রায় (৫৫) প্রতিবছর বেরো আবাদ করেন পাঁচ বিঘা জমিতে। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে শীতের কারণে জমিতে কাজ করাচ্ছি না। ঠাণ্ডায় শ্রমিকরা কম কাজ করতে পারে। অন্যান্য বছর এ সময়ে বোরো আবাদের জমিতে চারা রোপণের কাজ শেষ করলেও এবার শীত কমার অপেক্ষায় বন্ধ রেখেছেন বলে তিনি জানান।দিনাজপুরে চলতি মৌসুমে পৌনে দুই লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কুয়াশার প্রভাবে বোরো চারা নষ্টের আশঙ্কায় লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে রোপণ করা সম্ভব হয়ছে। কুয়াশা, মেঘলা আকাশসহ হালকা বৃষ্টিতে নাভি ধস রোগে ফসলের ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কা কৃষি কর্মকর্তাদের। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে না আসা পর্যন্ত কৃষকদের বোরো চারা তোলা এবং রোপণ না করতে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। তবে গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী জানিয়েছেন, রাতে আবহাওয়া কমে গেলেও দিনের বেলায় রোদ থাকায় ওই জেলায় ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে না।

কুয়াশায় ফেরি চলাচলে বিঘœ :ঘন কুয়াশার কারণে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর আগে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান মাঝ নদীতে আটকে পড়ে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আবার ফেরি চলাচল শুরু হয়। এ কারণে পণ্যবোঝাই প্রায় তিন শতাধিক ট্রাক আটকা পড়ে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় শিমুলিয়া ঘাট থেকে শরীয়তপুরের কাওড়াকান্দি পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সকাল সাড়ে ৯টায় সচল হয়। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে ফেরি বন্ধ ছিল। সে কারণে দুই ঘাটে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। তবে দুপুরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।মহাসড়কে যানজট : ঘন কুয়াশা ও সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গজারিয়া অংশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গজারিয়া অংশের আনারপুরা ও ভাটেরচর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা এবং মেঘনা সেতুর ওপর যানবাহন বিকল হওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে মধ্য রাত থেকে মহাসড়কের উভয় দিকে প্রায় ২০ কিলিমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।

হবিগঞ্জজেলার সর্বত্র তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত শীতের প্রকোপে ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪ নবজাতক ও ১ বৃদ্ধসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।গত দুই দিনের ঠান্ডায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শতাধিক রোগী হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ২ নবজাতক, চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ নবজাতক, মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ নবজাতক ও রমজান আলী (৬০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।হবিগঞ্জে এখন তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে। শীতের কারণে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাঁপানিসহ ঠান্ডাজনিত অসুখের রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। শিশু ও বৃদ্ধরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত এক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। ঘন ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বেড়েছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ।নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনে বেড়েছে চরম দুর্ভোগ। এতে জেলা শহর ও আশপাশের এলাকার মানুষের জীবনে দেখা দিয়েছে ছন্দপতন। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। তবে অসহায় ও দরিদ্রের তুলনায় অনুযায়ী শীতার্তদের মধ্যে এখনও তেমন কম্বল বিতরণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।কৃষক তমিজ উদ্দিন জানান, কনকনে ঠাণ্ডায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে, বিশেষ করে এ ঠাণ্ডায় ইরি-বোরোর আবাদ করতে কৃষক পাওয়া যাচ্ছে। যদিও মজুরি বেশি লাগছে।গাড়ি চালক আব্দুস সাত্তার জানান, কয়েকদিনের ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার কারণে স্বাভাবিক দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যান চালাতে হচ্ছে। এছাড়া দুপুরের আগ পর্যন্ত বাসে তেমন যাত্রী হচ্ছে না। গণকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোহরা বেগম জানান, তীব্র শীতে জেলা শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার।

গৃহিণী আয়েশা বেগম জানান, বড়রা ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারলেও, বৃদ্ধ ও শিশুরা তা সহ্য করতে পারছেন না। ফলে শিশু ও বৃদ্ধরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছে। আধুনিক সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), ডা. বিপদভঞ্জন কর্মকার জানান, শীত বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। এ অবস্থায় সরচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া বিভাগে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।তবে এ সময় একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার কথা জানান। তিনি আরো জানান, পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে, ভয় পাবার কিছু নেই। গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে প্রায় তিন শতাধিক রোগী ভর্তি ও বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শীতপ্রধান এলাকা, দারিদ্র্যের হারের সংখ্যা বেশি। হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ায় ছিন্নমূল মানুষের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল না। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সাংসদ, ব্যাংক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিওদের উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে প্রায় ১৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো অতিরিক্ত কম্বলের চাহিদাপত্র দুর্যোগ মস্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।