দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ভবিষ্যতে কেউ যেনো রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের সাহস না পায় সেজন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন। অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থি’ প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত।সোমবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের স্মরণে এই শোক সভার আয়োজন করা হয়।
সুরঞ্জিত বলেন, সাংবিধানীকভাবে তিনি (প্রধান বিচারপতি) দেশের প্রধান তিনজনের একজন। প্রধান বিচারপতিরা প্রধান বিচার করেন, প্রধান কথা বলেন না। এই বিচারপতি কথা একটু বেশি বলেন। এই পদে থেকে তিনি এমন কিছু কথা বলে ফেলেছেন যা জাতীয় রাজনীতিতে উৎকণ্ঠা এবং বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে কথা বলতে বলতে তিনি কেথায় চলে যাচ্ছেন এর সীমানা থাকছে না।আর এখন তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন যা সংবিধানের কেথায়ও নেই। সংবিধান রচনা করেছি আমরা। সংবিধানের কোন জায়গায় লেখা আছে বিচারপতিরা অবসরে গেলে রায় লেখা যাবে না? এ কথা সংবিধানের কোথাও লেখা নেই। নিজস্ব কোন্দলের জন্য জাতীয়ভাবে এতোবড় একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন, এটা আমরা আশা করি না। আপনার (প্রধান বিচারপতি) এ কথা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়, বললেন সুরঞ্জিত।
সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে সংযত হয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিদের প্রতি এমনিতেই আমরা সম্মান একটু বেশি দেখাই। তাদের কথাবার্তায় সাবধানতা থাকা উচিত। তাহলে সম্মান বোধটা কমবে না। উনি যা বলেছেন এটা তো কোনো আইন নয়। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু হলে এটা বাতিল করতে পারে হাইকোর্ট। বিচার বিভাগকে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে সুরঞ্জিত বলেন, এটা কোনো রাষ্ট্রীয় সহনশীলতার কথা নয়। এই সমস্ত পদে এগুলো কি? দুই বিচারপতির মধ্যে গুলমাল, আক্রোশ-বিক্রোশ করেন এটা বাইরে আসবে কেন? আমি এবং তুমি এটা জনগণ জানবে কেন? আপনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে- আর আপনি সেটা নিয়ে পাবলিকলি কথা বলেন।
অনেককে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে আমরা খুবই মর্মাহত। আপনি কথাবার্তা আরো সংযত হয়ে বলুন। এমন কোনো কথা বলবেন না যা জাতীয় জীবনে রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। সংঘাত পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে।তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কোন্দল বা আক্রোশের কারণে বিচার বিভাগকে জড়িয়ে কোনো মন্তব্য করা যায় না। এটা অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। বিচারপতিদের প্রতি আমাদের আলাদা সম্মানবোধ রয়েছে। তাই কথাবার্তা অত্যন্ত সংযত হয়ে বলতে হবে। যতো কম বলা যায় ততোই ভালো। একেবারে বাক সংযম। আপনার এখনো সময় আছে প্রতিষ্ঠানটির কথা চিন্তা করুন।
তিনি আরো বলেন, আপনাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর রাগ, অভিমান, বিদ্বেষ সব ভুলে গিয়ে দেশের জন্য, জাতির জন্য কাজ করে যাওয়ার কথা। আর আপনি বলে উঠলেন আপনার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আইনের শাসনের যুগ এখন, আপনরা তো স্বাধীন এবং আলাদা। সংবিধানে স্পষ্ট লেখা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি এই তিনটি অঙ্গনই একে অপরের পরিপূরক।প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পর বিএনপি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাফাচ্ছে মন্তব্য করে সুরঞ্জিত বলেন, বিএনপি বলছে- আওয়ামী লীগে নাকি ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগে ভূমিকম্প হওয়া এতো সহজ নয়। পেয়ে গেছি, পেয়ে গেছি বলে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাফানো শুরু করেছে তারা।বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার সভাপতিত্বে সভায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।