দৈনিকবার্তা- চট্টগ্রাম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬: চিকিৎসকদের ধর্মঘটে টানা চারদিন ধওে ব্যাহত হচ্ছে চট্রগ্রামের চিকিৎসা কার্যক্রম। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও ডাক্তারের দেখা না পেয় ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা । চিকিৎসকদের ডাকা ধর্মঘটে সব বেসরকারি কিèনিকের পাশাপাশি নগরীরর ডায়াগস্টিক সেন্টাওগুলো বন্ধ রয়েছে ।তিন ডাক্তারের বিরুদ্ধে হয়রানি ও মানহানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পূর্বঘোষণা ছাড়াই বুধবার ডাক্তাররা নগরীতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ ও স্বজনদের ক্ষোভ দুটোই বাড়ছে। শনিবার টানা চতুর্থ দিনের মতো প্রায় অচল ছিল বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চেম্বারগুলো।
বিএমএর দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, আকস্মিকভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের মতো কঠোর কর্মসূচিকে অনেক চিকিৎসকই সঠিক মনে করছেন না। তারা আর্থিকভাবে যেমন লোকসানের মুখে পড়েছেন তেমনি রোগী হারানোর মতো আশঙ্কায়ও রয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, ফেসবুকসহ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ডাক্তারদের নেতিবাচক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তাই একটি পক্ষ সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের আশ্বাস পেলেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরুর ঘোষণা দিতে চাপ তৈরি করছেন নেতাদের ওপর। পেশাগত এথিকসের কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ বন্ধের সঙ্গে একমত হতে পারেননি বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন সার্জিস্কোপ হাসপাতালে সন্তান প্রসবোত্তর অস্ত্রোপচারে নিহত মেহেরুননেসা রিমার বাবা।
বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক, চমেক অধ্যক্ষ, ক্লিনিক মালিক সমিতির প্রতিনিধিসহ অর্ধশতাধিক ডাক্তারের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল বেসরকারি ক্লিনিকের আইসিইউ, সিসিইউর মুমূর্ষু রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দেবেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। ‘রোগীর চাপ বাড়ার’ কারণে চমেক হাসপাতালের সব ডাক্তারের ছুটি বাতিলের ঘোষণাও দিয়েছিলেন ডা. মুজিবুল হক খান।বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, আমরা এক দিনের জন্যই প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখতে চাই না। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সময় রোগীর স্বজনরা ডাক্তারদে গায়ে হাত না তুলতে পারে। যাতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে না পারে। যাতে ছবিতে ফাঁসির দড়ি পরিয়ে কোনো ডাক্তারের ছবি পত্রপত্রিকায় ছাপিয়ে সামাজিকভাবে হেয় ও মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করতে না পারে। এ সব ব্যাপারে আইন হওয়া দরকার।
কনজ্যুমার অসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বাংলানিউজকে শনিবার বলেন, সেবা ও পণ্য এ দুটি বিষয়কে ডাক্তাররা তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। শিগগির যদি অনৈতিক, অমানবিক এ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা না হয় তবে আমরা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের হয়রানি বন্ধে তীব্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো।তিনি বলেন, তিনজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এটিকে ইস্যু করে স্বাস্থ্যখাতে বিশৃঙ্খলা করা মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ থাকতে পারে না। মামলা হয়েছে আদালতে ফয়সালা হবে আদালতে। সাধারণ রোগীদের জিম্মি করা যাবে না। এমনিতে আস্থাহীনতার কারণে উচ্চবিত্তদের মধ্যে চিকিৎসা খাত নিয়ে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এখন মধ্যবিত্তরাও আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।