দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬: আগামী দিনে জাতির কর্ণধার হিসেবে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তিসম্পন্ন উন্নত শিক্ষা নিয়ে যোগ্য হিসেবে গড়ে ওঠতে কাব স্কাউট সদস্যসহ নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, আমরা তো বুড়ো হয়ে গেছি। এখনতো আমি বুড়ি দাদু হয়ে গেছি। কাজেই আমাদের ভবিষ্যৎ তোমরা, স্কাউটরা, বাচ্চারা। তোমাদের হাতেই তো দেশকে রেখে যাবো। তোমাদের হাতেই দেশটাকে দিয়ে যাবো, তোমরাই আগামী দিনে দেশকে পরিচালনা করবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোনোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বেলা ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অষ্টম জাতীয় কাব স্কাউট ক্যাম্পুরির উদ্বোধন ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ স্কাউটসের উদ্যোগে গাজীপুরে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অষ্টম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাব স্কাউটদের সবচেয়ে বড় শিক্ষামূলক এ সমাবেশে সারাদেশের সকল উপজেলা থেকে আট হাজার স্কাউট ও কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা শিশু, ভবিষ্যতে তোমরাইতো জাতির কর্ণধার হবে।তোমাদের মধ্যে থেকেই তো কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, সচিব, বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ হবে। সমাজের বিভিন্ন জায়গায় স্থান করে নেবে।নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি শিক্ষা নিয়ে, উন্নত শিক্ষা নিয়ে যুগোপযোগী হয়ে দেশকে তোমরা উন্নত করবে, সমৃদ্ধ করবে। তোমরা উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে।সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ভবিষ্যতের কারিগর শিশুদের উন্নত চরিত্র গঠন, আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি এবং দেশ ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ তৈরিতে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কাউটিং চালুর উপরও জোর দিয়েছেন সরকার প্রধান।তিনি বলেন, আমরা চাই প্রাথমিক স্তর থেকে প্রায় প্রতিটি স্কুলেই এই কাব স্কাউটিং শুরু হোক। তাতে ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে।
এটা শিশুদের চরিত্র গঠনের পাশাপাশি দেশের প্রতি ভালবাসা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টির একটি প্রশিক্ষণ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি। কাব স্কাউটসের আওতায় পড়ে ছয় থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা, স্কাউটসের আওতায় ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা এবং ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা রোভার স্কাউটসের আওতায়।বাংলাদেশ স্কাউটসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সাল থেকে এদেশে স্কাউটিং শুরু হওয়ার পর ২০১৩ সালে এর সদস্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ লাখ।ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নিজের সরকারের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণার কথা তুলে ধরতে গিয়ে কাব ক্যাম্পুরির থিম আমরা করবো জয় প্রসঙ্গও আনেন শেখ হাসিনা।ক্যাম্পুরির থিম অত্যন্ত যুগোপযোগী ও উদ্দীপনামূলক। কারণ বাংলাদেশ এখন আর্থ-সামাজিক দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলা করতে পারে না।অবশ্যই আমরা সর্বক্ষেত্রে জয় করব। তোমরা যারা ক্যাম্পে অংশ নিয়েছ, ভবিষ্যতে সবাই জয় করবে সেটাই আমি চাই।‘যথাসাধ্য চেষ্টা কর- কাব স্কাউটসের মূলমন্ত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থ্যাৎ কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাওয়া না। কখনও এটা মনে কর না যে এটা আমি পারব না। যে কোনো কাজ যে কোনো চ্যালেঞ্জ সামনে আসুক না কেন, সেটা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হব- এই আত্মবিশ্বাসটা সবসময় যেন নিজেদের মধ্যে থাকে।
দুর্যোগ বা জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানে স্কাউটসদের দায়িত্বশীল ভূমিকার কথা তুলে তাদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।আমাদের ভবিষ্যৎ হচ্ছ তোমরা। তোমাদের হাতেই দেশকে রেখে যাব। তোমাদের হাতেই দিয়ে যাব। তোমরা সেইভাবে উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে। দেশকে ভালবাসবে, মানুষকে ভালবাসবে, মানুষের জন্য কাজ করবে। মানুষের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে সবসময় প্রস্তুত থাকবে। তবেই দেখবে এই দেশ উন্নত হবে সমৃদ্ধশালী হবে, পরামর্শ দেন সরকার প্রধান।মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী জাতি হিসেবে সবসময় মাথা উঁচু করে চলতে তরুণ প্রজন্মকে বলেন তিনি। একইসঙ্গে সৎ, চরিত্রবান ও দৃঢ়চেতা হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।ভবিষ্যতে তোমরাই তো কর্ণধার, তোমরাই তো বড় হবে। সমাজের বিভিন্ন জায়গায় তোমরা তোমাদের স্থান করে নেবে।তোমরাই দেশকে উন্নত করবে, সমৃদ্ধশালী করবে।তোমাদের মধ্য থেকেই কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, কেউ মন্ত্রী হবে। তোমরাই এদেশের ভবিষ্যৎ।সবাইকে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চরিত্রবান হতে হবে, সৎ হতে হবে। দৃঢ়চেতা হতে হবে। যে কোনো কাজে সবসময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হয়ে সব কিছু জয় করতে হবে।আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জনকারী জাতি।
বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আমাদের কেউ ‘দাবায়ে’ রাখতে পারবে না। বিজয়ী জাতি সবসময় মাথা উঁচু করে চলে। আমাদের এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এখন থেকে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। আমরা কখনো পিছু হটবো না। পিছু হটা আমাদের চরিত্রে নেই।ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যতটুকু পারি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আগামী দিনে যারা জাতির কর্ণধার হবে, তাদের ওপর দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে যাবো। সোনার বাংলা গড়ার সোনার ছেলেমেয়ে হিসেবেই নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে স্কাউটস আন্দোলন জোরদার করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাবিং সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ‘হিউম্যান রিসোর্স ভেডেলপমেন্ট থ্রু স্কাউটিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।কিন্তু বাংলাদেশ স্কাউটিং সম্প্রসারণ ও স্কাউট শতাব্দি ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করতে দেরি হওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।প্রকল্পটা এখনও আমাদের কাছে আসে নাই। এলে অবশ্যই অনুমোদন করা হবে। আমি চাচ্ছি এ প্রকল্পটা একটু তাড়াতাড়ি আসুক। কেন দেরি হচ্ছে জানি না। এত দেরি হওয়া উচিৎ হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৌচাক স্কাউটস প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অষ্টম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় ভিডিও কনফারেন্সে কয়েকজন কাব স্কাউটের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।গণভবনে ২০১৩ ২০১৪ সালে শাপলা কাব পুরস্কার পাওয়া ৮৫১ জন বিজয়ীর কয়েকজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা।মৌচাক ও গণভবনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কমিশনার স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেলন হক খান।