দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ জানুয়ারি ২০১৬: বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের নির্বাচনস্থল কলাবাগান ক্রিকেট মাঠে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে ব্যালট পেপার, ভোটার তালিকার ছেঁড়া অংশ।এর আগে নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়।বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল ও কলাবাগান ক্রিকেট মাঠে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে নির্বাচনস্থল কলাবাগান মাঠে এবং এর জের ধরে তেজগাঁও এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় তেজগাঁও টার্মিনালে অবস্থিত ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন শ্রমিকেরা।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ।এর আগে সকাল ৭টায় রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ট্রাকস্ট্যান্ড শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে রশিদ তালুকদার ও হুমায়ুন প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। শুক্রবার ছিল বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে কয়েক দিন ধরেই তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় চলছিল জোর প্রচারণা, মিছিল-সভা।সকাল আটটায় কলাবাগান ক্রিকেট মাঠে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।সংঘর্ষের বিষয়ে হুমায়ুন প্যানেলের সদস্য মামুন বলেন, সকালে আমাদের প্যানেলের লোকজন ভোট দিতে গিয়ে রশিদ তালুদকদার প্যানেলের লোকজনের বাধার মুখে ভোট দিতে পারেননি। পরে তারা বাংলাদেশে ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ডাইভার্স ইউনিয়নের অফিসের সামনে এসে অফিসের কিছু আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে।
তালুকদার গ্র“পের শ্রমিক সালাম বলেন, নির্বাচন চলাকালীন অবস্থায় একদল সন্ত্রাসী তেজগাঁও সংগঠনের অফিসের সামনে এসে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, বেলা দশটার দিকে নির্বাচনের দুটি প্যানেলের লোকজন প্রতিটি বুথে ঢুকে পড়েন। তাঁরা নিজেদের প্রার্থীর ব্যালটে ভোট দিতে থাকেন। জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হেলালউদ্দিন বলেন, দুই পক্ষ নিজেরা সংঘর্ষের জড়িয়ে পড়ে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সবাইকে কলাবাগান মাঠ থেকে বের করে দিয়ে আবার পরিচয়পত্র দেখে দেখে ঢোকানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কলাবাগান মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠের মাঝে বানানো নির্বাচনী বুথগুলোর সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ব্যালট পেপার, ভোটার তালিকার ছেঁড়া অংশ। বুথের লোকজন অলস সময় কাটাচ্ছেন। কয়েকজন ভোটার ভোট দিতে এসে দেখলেন ব্যালট পেপার নেই। মাঠে আসা লোকজন বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।তিনটি বুথের দায়িত্বরত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকেই সব ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়ে গেছে। প্রতিটি বুথের ব্যালট বক্স কানায় কানায় ভরা। নাম না প্রকাশের শর্তে এসব লোকজন বলেন, এমন নির্বাচন করার কোনো মানেই নাই। যার যা মন চাইল এসে সিল মেরে চলে গেল।অবশ্য জাল ভোটের বিষয়টি অস্বীকার করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সামছুল হক। তিনি বলেন, সামান্য বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। চারটা পর্যন্ত সবাই যার যার ভোট দিতে পেরেছেন।
এদিকে কলাবাগান মাঠে সংঘর্ষের খবরে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল এলাকাতেও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ড্রাইভার্স ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ের কক্ষগুলোতে ভাঙচুর চালানো হয়। কক্ষের ভেতরে থাকা চেয়ার-টেবিল বাইরে এনে আগুন দেওয়া হয়।ড্রাইভার্স ইউনিয়নের নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে ১৮টি পদে মোট ৩০ জন নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৫৫ জন। সারা দেশে অবস্থিত ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি শাখার সদস্যরা নির্বাচনে ভোট দেবেন। সারা দেশের প্রায় ২১ হাজার ড্রাইভার ও সহকারীরা ভোটের মাধ্যমে তাঁদের নেতা নির্বাচন করবেন।নির্বাচনে সভাপতি পদে গরুর গাড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন তালুকদার মো. মনির। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হুমায়ুন কবির মজুমদারের প্রতীক দেয়াল ঘড়ি। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মাহমুদুল আলমের প্রতীক খেজুর গাছ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হাবিবুর রহমান লড়েছেন মাইক প্রতীক নিয়ে। কার্যকরী সভাপতি পদে প্রার্থী দুজন। রফিকুল ইসলামের প্রতীক মই আর নুর মোহাম্মদের প্রতীক মাছ।