সিঙ্গাপুর ফেরত ১৪ জন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অনুসারী

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ জানুয়ারি ২০১৬: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরত পাঠানো ২৬ জনের মধ্যে ১৪ জন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অনুসারী। তাদের কেউই আইএস কিংবা আল-কায়েদা সদস্য নয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। মনিরুল ইসলাম জানান, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাদের ব্ল্যাক লিস্ট করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছিল সিঙ্গাপুর। তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিবি পুলিশ এদের মধ্যে ১৪ জনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। তারা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান জসীমউদ্দিন রাহমানিয়ার অনুসারী।সিঙ্গাপুরের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে হামলার পরিকল্পনা ছিল ওই জঙ্গিদের। এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোন হামলার তথ্য পাওয়া যায়নি। যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে সবাই শ্রমিক ছিল। তারা সিঙ্গাপুরের একটি মসজিদে সংগঠিত হয়ে বয়ান শুনতো। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের কয়েকজনের মোবাইল ফোন থেকে জসীমউদ্দিন রাহমানিয়ার বইয়ের সফট কপি পাওয়া গেছে। ১৪ জনের বিরুদ্ধে গত ২১ ডিসেম্বর সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বাকি ১২ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন- জাফর ইকবাল, গোলাম জিলানী, সাইফুল ইসলাম, নুরুল আমিন, মাহমুদুল হাসান, আমিনুর, আব্দুল আলীম, শাহ্ আলম, আকরাম হোসেন, আলম মাহাবুব, আবদুল আলী, পারভেজ ডলার, মো. জসিম ও আশরাফুল।

সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ১৪ জনই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অনুসারী দাবি করে পুলিশ বলেছে, তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।সিঙ্গাপুর সরকার ওই বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত অভিযোগ প্রকাশ করার পর বৃহস্পতিবার ঢাকায় পুলিশের তদন্তে পাওয়া তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।তিনি বলেন, তারা প্রায় সকলেই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অনুসারী। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি পুলিশ।অনুসারী হলেও এ ১৪ জন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

বুধবার সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৭ বাংলাদেশিকে তারা গ্রেপ্তার করে যারা, সে দেশে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে ২৬ জনকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুর সরকারের ভাষ্য, ওই বাংলাদেশিরা আল কায়েদা ও আইএস-এর মতো জঙ্গি সংগঠনের সশস্ত্র জিহাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সিঙ্গাপুরে বসে বাংলাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনায় ছিলেন। জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তারা আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন।

সিঙ্গাপুর সরকার ২৬ জনকে ফেরত পাঠানোর পর গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরার এক বাসা থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। পরে উত্তরা পূর্ব থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে ১৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের কারাগারে পাঠানোর জন্য আদালতে তোলা হলে ২৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বিষয়টি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসে। তবে ঠিক কী কারণে কবে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তা স্পষ্ট হয় বুধবার সিঙ্গাপুর সরকারের বিবৃতি পাওয়ার পর।ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে মনিরুল সাংবাদিকদের বলেন, কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ১৪ জনকে কারাগারে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে বাকি ১২ জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুলিশ তাদের ওপর নজর রাখছে।ওই ২৬ বাংলাদেশি শ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুর গিয়ে দুই থেকে আট বছর সেখানে ছিলেন বলে জানান মনিরুল। সিঙ্গাপুরের মোস্তফা সেন্টারের কাছে একটি মসজিদে নামাজ পড়তেন তারা। সেখানে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অন্য সদস্যদের বয়ানে অনুপ্রাণিত হয়ে তারাও আস্তে আস্তে অনুসারী হয়।এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে এদের প্রায় কেউই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে জামায়াতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন কয়েকজন আছেন।সিঙ্গাপুরে তারা কোনো জঙ্গি প্রশিক্ষণ পেয়েছেন কিনা- সে তথ্য বাংলাদেশের পুলিশের কাছে নেই। তবে ওই বাংলাদেশিরা সিঙ্গাপুর থেকে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে টাকা পাঠিয়েছেন বলে জানান মনিরুল।