দৈনিকবার্তা-সিলেট, ২১ জানুয়ারি ২০১৬: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিগগিরই শতভাগ সাক্ষরতা অর্জনে তাঁর দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেছেন, একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সরকারের বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপের ফলশ্রুতিতে দেশে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা আশা করি শিগগিরই সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি সাক্ষরতার হার শতভাগ অর্জনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আরো উন্নয়নে সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলে এখানে মদনমোহন কলেজের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণদারকালে এ কথা বলেন।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী ও কলেজের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন এবং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য শুখেন্দু বিকাশ দাস বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে হীরক জয়ন্তী বক্তৃতা দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. হারুন-অর রশিদ। অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য এডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমেদ, কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও প্রাক্তন ছাত্র বিজিত চৌধুরী, কলেজ স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আসাদুদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। কলেজের অধ্যক্ষ এবং হীরক জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রফেসর আবুল ফজল স্বাগত বক্তব্য রাখেন।প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাখাতের অধিকতর উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এজন্য দেশের শিক।সা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সবার জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক।ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। আমাদের সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়।শেখ হাসিনা বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও অনুরূপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ৭টি বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের পরিকল্পনার ভিত্তিতে সিলেটেও অনুরূপ একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে।
পিতার নামে মদনমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী মদনমোহনের যোগ্য সন্তানদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে এই বিভাগীয় শহরের সব মহলের দাবির প্রেক্ষিতে কলেজটি সরকারিকরণের ইঙ্গিত দেন।তিনি বলেন, সবারই একটি দাবি, আর তা হচ্ছে কলেজটি সরকারিকরণ করা এবং অর্থমন্ত্রীর এ ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমি মনে করি যেখানে অর্থমন্ত্রী আছেন সেখানে কলেজটি সরকারিকরণে কোন সমস্যা হবে না।
৭৫ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান সিলেটের মদন মোহন কলেজকে সরকারি করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রায় সব বক্তাই কলেজটির সরকারিকরণের প্রতিশ্র“তি চান শেখ হাসিনার কাছে।প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়ার সময় মঞ্চে সভাপতির আসনে বসা অর্থমন্ত্রীকে দেখিয়ে বলেন, আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রীর এখানে বিরাট ভূমিকা রয়েছে।কাজেই অর্থমন্ত্রী যেখানে আছেন, সেখানে সরকারিকরণে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা না। যেহেতু অর্থমন্ত্রী সাথে আছেন, সেহেতু সরকারি আমরা করে দিতে পারব।আবুল মাল আবদুল মুহিত মদন মোহন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি।কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও মদন মোহন কলেজের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুপুর ১২টার দিকে হেলিকপ্টারে করে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন প্রধানমন্ত্রী।এরপর হযরত শাহজালাল ও শাহপরানের মাজারে যান শেখ হাসিনা।দুপুরে রিকাবিবাজারে মদন মহন কলেজের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে কলেজের ‘হীরক জয়ন্তী’ উৎসবে যোগ দেন তিনি।
তার সরকার শিক্ষাকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে একটি শিক্ষিত জাতি একান্তভাবে দরকার। তাই যারা শিক্ষানুরাগী আছেন, বিত্তবান আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন উন্নয়ন হয় সেদিকেও দৃষ্টি দেবেন।প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা পায় সেটা নিশ্চিত করতে চাই।বিজ্ঞান ও কারিগরিসহ যুগোপযোগী শিক্ষার ওপর সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
সিলেট অঞ্চলে শিক্ষা-দীক্ষা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,সিলেটেও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখায় প্রবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশে ফেরার ক্ষেত্রেও প্রবাসীদের ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।অনুষ্ঠানে বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।মদন মোহন কলেজের অনুষ্ঠান শেষে সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের আয়োজনে এক জনসভায় ভাষণ দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।জনসভা শুরুর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মাদ্রাসা মাঠেই বিভিন্ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন প্রধানমন্ত্রী।
এই অনুষ্ঠানে ফলক উন্মোচন করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবন, আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স, জৈন্তাপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, এপিবিএন ব্যারাক ভবন, ওসমানীনগর থানা ভবন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত হোস্টেল ভবন, ৩০ শয্যাবিশিষ্ট খাদিমপাড়া হাসপাতাল, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালে রূপান্তর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।এছাড়া সিলেট আউটার স্টেডিয়াম, খসরুপুর বাজার জিসি- পৈলনপুর-বালাগঞ্জ জিসি সড়ক উন্নয়ন, হরিপুর জিসি-গাছবাড়ী জিসি সড়ক (কানাইঘাট অংশ) উন্নয়ন, মৈয়াখালী বাজার-আর অ্যান্ড সুইচ (বারোহাল ইউপি অফিস) ভায়া হাটুবিল মাদ্রাসা সড়ক উন্নয়ন, নারী পুলিশ ডরমেটরি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, শাহপরাণ থানা ভবন নির্মাণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিভাগীয় ও জেলা অফিস নির্মাণ, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা এনএসআই কার্যালয় ভবন নির্মাণ, তামাবিল স্থলবন্দর নির্মাণ, হযরত গাজী বোরহান উদ্দিন মাজার, তিন তলা ভিত্তি বিশিষ্ট মসজিদ, মহিলা এবাদতখানা ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) সিলেট বিভাগ এবং সিভিল সার্জন সিলেট এর কার্যালয় ভবন নির্মাণ ও সিলেট ইলেকট্রনিক সিটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এই সফর ঘিরে পুরো সিলেট নগরীকে সাজানো হয়ে মনোরম সাজে।
নগরীর বিভিন্ন সড়কে সংস্কার কাজ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার সড়কদ্বীপে হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে লাগানো হয়েছে শোভাবর্ধনকারী ফুল গাছ।এর আগে ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে যোগ দিতে সিলেট এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।