ভাগ্নে মাহফুজই খুন করেছে ৫ জনকে, আদালতে স্বীকারোক্তি

দৈনিকবার্তা-নারায়ণগঞ্জ, ২১ জানুয়ারি ২০১৬: হত্যাকান্ডের পাঁচদিন পর নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৫ খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। শফিকুলের ভাগিনা গ্রেফতারকৃত মাহফুজ পুলিশের কাছে খুনের বিষয়ে জানিয়েছে সে একাই ৫টি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। বাড়ির পাটার জন্য ব্যবহৃত পুঁতো দিয়ে আঘাত করে একের পর এক পাঁচজনকে হত্যা করেছে বলে সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন। এদিকে পাঁচ খুনের ঘটনায় দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতারকৃত আসামী মাহফুজ। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন তার কার্য্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, মামী লামিয়ার সঙ্গে ভাগ্নে মাহফুজের অনৈতিক সর্ম্পক ছিল। এই সর্ম্পকের কারণে মামা শরীফ ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ভাড়া বাড়িতে চলে আসেন। গত ১৬ জানুয়ারী তাসলিমার বাড়িতে এসে তার জা লামিয়ার খাটের নিচে ভাগ্নে মাহফুজ খাটের নীচে লুকিয়ে থাকলে তাসলিমার ভাই মোশারফ হোসেন দেখে ফেলেন এবং তাকে বকাঝকা করেন। এর আগে হত্যাকান্ডের ১৬ দিন আগে লামিয়ার সঙ্গে মাহফুজের অনৈতিক সর্ম্পকের কারণে পারিবারিক সালিশে তাকে জুতাপেটা করা হয়। এই ঘটনায় ক্ষোভ থেকে ওই দিন রাত তিনটার দিকে প্রথমে ঘুমন্ত অবস্থায় তাসলিমার খালাতো ভাই মোশারফ ওরফে মোর্শেদকে রান্নাঘরের শিল পাটার পুতোঁ দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে একে একে পুঁতো দিয়ে মামী তাসলিমা, মামী লামিয়া ও মামাতো বোন সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়। সকাল সোয়া ৭টার দিকে স্কুল থেকে মামাতো ভাই শান্ত ফেরত আসলে দেয়ালে ঠেকিয়ে তার মাথায় আঘাত করে এবং শ্বাসরোধে একইভাবে হত্যা করে মাহফুজ। পরে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সবাইকে শ্বাসরোধ করে। হত্যাকান্ড শেষে ঘরের দরজায় বাইরে থেকে থাকা তালা দিয়ে পালিয়ে যায় মাহফুজ।

পুলিশ সুপার জানান, ১৫ জানুয়ারী রাত তিনটা থেকে পরদিন ১৬ জানুয়ারী সকাল সাতটা পর্যন্ত চালানো হয় এই নৃশংস হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ডের পর মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হত্যাকান্ডের বিষয়ে পুলিশের পাঁচটি টীম পৃথকভাবে তদন্ত করেছে। দুইজনকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য নেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, পুলিশ ওই বাড়ির পানির ট্যাংকির নীচ থেকে দরজায় লাগানো তালার চাবি উদ্ধার করেছে। এছাড়া যে পুঁতো দিয়ে আঘাত করে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে সেই পুঁতো, মাহফুজের ভেজা কাপড় ও চাদর বাড়ির কার্ণিশ থেকে উদ্ধার হয়েছে। মাহফুজ তার ব্যবহৃত রক্তমাথা চাদরটি কেরোসিন তেল দিয়ে আগুন লাগিয়ে পুঁড়িয়ে আলামত নষ্ট করতে চেষ্টা করেছিল। গ্রেফতারের পর মাহফুজকে পুলিশ ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলে সে পুলিশের কাছে সব স্বীকার করে এবং আলামতগুলো নিজ হাতে দেখিয়ে দেয়।

এদিকে পাঁচ খুনের ঘটনায় নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতারকৃত আসামী মাহফুজ। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সাঈদুজ্জামান শরীফের আদালতে তার এ জবানবন্দি রেকর্ড করা করা হয়। এর আগে কঠোর গোপনীয়তা ও কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মাহফুজকে আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি শেষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো: ফজলুর রহমান জানান, মামী লামিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে মাহফুজ এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। একথা সে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে। গত ১৬ জানুয়ারী রাত নয়টায় শহরের ২ নং বাবুরাইল এলাকায় একটি ৬ তলা বাড়ির নীচতলার ফ্ল্যাটে দুই শিশুসহ পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হচ্ছে তাছলিমা, তাছলিমা’র ছেলে শান্ত, মেয়ে সুমাইয়া, তাছলিমা’র ভাই মোরশেদুল ও তাছলিমা’র জা লামিয়া। এই ঘটনায় নিহত তাছলিমার স্বামী শফিকুল নারায়গঞ্জ সদর থানায় বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে। হত্যাকান্ডের বিষয়ে পুলিশের কাছে সন্দেহভাজন হিসেবে তিনি ভাগ্নে মাহফুজ, নাজমা বেগম ও শাহজাদা নামের তিনজনের নাম প্রকাশ করেন। ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। ১৮ জানুয়ারি বিকেলে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আাদালতে তোলা হলে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দোষ স্বীকার করে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেয়। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারী রাতে শরীয়তপর জেলার ডামুড্যা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন সকালে তাকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নাজমা বেগম এখনো পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে। তবে পুলিশ এই হত্যাকান্ডে নাজমা বেগমের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি।