university

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ জানুয়ারি ২০১৬: এক সপ্তাহের বেশি সময় পর আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিরে এসেছে শিক্ষক-শিক্ষর্থীদের পুরনো ব্যস্ততা। বুধবার সকাল থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস রুম, একাডেমিক ভবনের করিডোর, টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন- সবখানেই শিক্ষার্থীদের সরব পদচারণা। ক্লাস শেষে কিংবা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীদের আড্ডায় সরব পুরো ক্যাম্পাস।

বেতন ও মর্যাদার প্রশ্নে আন্দোলনের দশম দিনে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাসে ফিরেছেন শিক্ষকরা।এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল বেশ ভালো, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারেও পড়াশোনায় ব্যস্ত ছিলেন অনেকেই।বেতন কাঠামোর বৈষম্য’ দূর করার দাবিতে আন্দোলনরত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরেছেন; যার মধ্য দিয়ে উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠগুলোতে নয় দিন ধরে চলা অচলাবস্থার অবসান হলো।তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শীতের ছুটি চলছে। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেরা বৈঠক করে ক্লাসে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে মঙ্গলবার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। সে অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখর হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ বলেন, ফেডারেশনের সভায় আজ থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত ছিল। সে অনুযায়ী আজ সকালে নির্ধারিত সময়েই ক্লাস শুরু হয়েছে।এক সপ্তাহ ধরে চলা কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে তা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, মোকাররম ভবন, কলাভবন ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ঘুরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে দেখা যায়।কার্জন হলে মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অলক ঘোষ জানান, নতুন বছরে এটাই তাদের প্রথম ক্লাস হচ্ছে।ক্লাস শুরু করায় শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি বিভিন্ন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও সকাল থেকে রুটিনমাফিক ক্লাস চলছে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম আবদুল্লাহ জানান, তারা বেলা ১১ টায় সাধারণ সভা করে ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ শামসুল আলম জানান, সেখানে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্লাস শুরু হয়েছে বলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খসরুল আলম কুদ্দুসী জানিয়েছেন।সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ট্রেন ও বাস সময় মেনেই ক্যাম্পাসে এসেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে ক্যাম্পাসে।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খবির উদ্দিন জানিয়েছেন, ২৬ জানুয়ারি শীতের ছুটি শেষে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে। বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনের দাবিতে গত ১১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরই কর্মসূচি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা আলোচনায় বসেন। সোয়া এক ঘণ্টার আলোচনা শেষে কর্মবিরতি কর্মসূচির ‘আপাতত’ ইতি টেনে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।গত মাসে অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর আন্দোলন জোরদার করেন আগে থেকে এনিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করার বিরোধিতা করছিলেন তারা। পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ সচিবদের সমান গ্রেডে উন্নীত হওয়ার সুযোগ না থাকাকে মর্যাদাহানি হিসেবে দেখছিলেন তারা।শিক্ষকরা আপত্তি তোলার পর তাদের দাবি পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেন। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিলেও ১০ দিন পর প্রকাশিত গেজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি, অভিযোগ শিক্ষকদের।এরপর ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করে ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।