দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬: ঢাকা ও চট্টগ্রামে এক রাতের অভিযানে ২৮ লাখ ইয়াবা উদ্ধারের খবর দিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব।এই অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন মাদক চোরাচালান চক্রটির প্রধান বলে র্যাবের দাবি। বাংলাদেশে এর আগে একই দিনে ইয়াবার এতো বড় চালান আর কখনো ধরা পড়েনি।র্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মাকসুদুল আলম জানান, রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত দুই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজনের নাম আলী আহমেদ। তাকেই চোরাচালান চক্রটির হোতা বলে দাবি করছে র্যাব। বাকি দুজনের নাম এখনও জানানো হয়নি।মাকসুদুল আলম বলেন, যে ইয়াবা এই অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে, তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় চালান।মাদক চোরাকারবারিরা দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমার থেকে সাগরপথে বাংলাদেশে ইয়াবা আনছে। পরে তা চট্টগ্রাম থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
এর আগে গতবছর ফেব্র“য়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে একটি ট্রলার থেকে ১৫ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে নৌবাহিনী। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকার পথে বিভিন্ন স্থানে আটক করা হয়েছে ইয়াবার বেশ কয়েকটি বড় চালান। সমুদ্রপথে ইয়াবা চোরাচালানকারীদের গডফাদারকে চিহ্নিত করা গেছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।তিনি জানান, সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা চোরাচালানকারীদের গডফাদারকে আমরা ট্রেস করতে পেরেছি। তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। খুলনা, বরিশালসহ সমুদ্রপথের এলাকাগুলোতে ইয়াবা চোরাচালানের ব্যাপক বিস্তার রয়েছে। সেখানেও কড়া নজরদারি রাখছে র্যাব।শিগগিরই গডফাদারসহ এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন র্যাবের মহাপরিচালক।
সোমবার দুপুরে র্যাবের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানিয়েছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২৮ লাখ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা চোরাচালানকারী চক্রের ৩ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- চোরাচালানকারী চক্রের মূল হোতা আলী আহমদ (৫২), হামিদ উল্লাহ (৩২) ও মো. মহিউদ্দিন (৩৫)। বেনজির আহমেদ জানান,প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জানা গেছে, মূলত বমংক নামের এক বার্মিজ নাগরিক সমুদ্রপথে এসব ইয়াবা পাঠান। সমুদ্রের মাঝপথ থেকে এগুলো সংগ্রহ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতেন আয়াতুল্লাহ নামের আরেক চোরাচালানকারী।
বেনজির আহমেদ আরো জানান,আলী আহমেদ একুশে প্রোপার্টিজ নামক একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক। কোম্পানির আড়ালে তিনি ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করতেন। চোরাচালান কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন কোম্পানির চাটার্ট অ্যাকাউন্টেন্ট মো. মহিউদ্দিন ও অফিস সহকারী হামিদ উল্লাহ।তিনি জানান, মায়ানমার থেকে আয়াতুল্লাহ আলী সিন্ডিকেটের বাংলাদেশে পাচার করা ইয়াবার মধ্যে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে কোস্টগার্ড ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে। একই বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ ইয়াবা পাচারকারী মাজেদ ও ইসমাইলকে (সিরাজের চাচা) চট্টগ্রামে বায়েজীদ এলাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। এরপর র্যাব-৪ একটি গাড়িসহ সিরাজকে গ্রেফতার করে।পাচারে ব্যবহৃত ট্রলারটির নাম মুছে ফেলা হলেও আমরা জানতে পারি, আলী আহমদের মামাতো ভাই নুরুন নবী এ ট্রলারের মূল মালিক। ট্রলারটি ইয়াবা পাচারের কাজেই ব্যবহৃত হতো বলেও জানান তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে র্যাব-৭’র একটি দল সমুদ্রসীমায় ব্যাপক তৎপরতা চালায়। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দু’টি নাম পরিচয়হীন ট্রলারের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।এরপর গভীর সমুদ্রগামী জলযান নিয়ে শনাক্তকৃত ট্রলার দু’টিকে ধাওয়া করলে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলার দু’টি দু’দিকে দ্রুতগতিতে পালিয়ে যেতে থাকে। র্যাব একটি ট্রলারকে ধাওয়া করে রোববার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে পতেঙ্গা উপকূলের কাছে পৌঁছালে দুই জন ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ ওই ট্রলারটি আটক করে। এ সময় অপর সহযোগীরা চলন্ত ট্রলার থেকে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে পালিয়ে যান।আটকের পর ট্রলারটি তল্লাশি করে ২৭ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ চোরাচালান চক্রের হোতা আলী আহমদ ও হামিদ উল্লাহকে আটক করা হয়।অভিযান পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গভীর সমুদ্রে যাতায়াতের উপযোগী (জঙটএঐ অছটঅঞওঈ ঝঊঅ ঝঊঅজঈঐ ্ জঊঝঈটঊ (ঝঅজ)) একটি জলযান দিয়েছিলো বলেও জানান র্যাবের মহাপরিচালক।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ চক্রের অপর সহযোগী মোঃ মহিউদ্দিনকে সোমবার সকাল ৮টায় রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়।সারাদেশেই মাদকের বিরুদ্ধে র্যাবের সাঁড়াশি অভিযান চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৯২ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে র্যাব। এর পাশাপাশি ১৯ কেজি ৫৪০ গ্রাম হেরোইন, ৪২৮ গ্রাম কোকেন, এক লাখ ৪৭ হাজার ৯২৪ বোতল ফেনসিডিল, ৭ হাজার ৯৩৩ কেজি গাঁজা, ১২ হাজার ৯৭১ বোতল বিদেশি মদ এবং ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৮ লিটার দেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে র্যাব-৭ এর ব্যাটালিয়ন (চট্টগ্রাম) উদ্ধার করেছে ৭০ লাখ ৮০ হাজার ৯২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট।