2015_07_08_06_11_09_lGYOKixepYQiV1E9VqGVdOjLQtU44I_original

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ জানুয়ারি ২০১৬: শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও মহাসচিবের বৈঠক শেষ হয়েছে। তবে বৈঠকে কোনো সমাধান হয়নি। দুই পক্ষই আশা করছেন সমস্যার একটা সমাধান হবে। তবে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। অষ্টম বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘মর্যাদা বাড়ানোর’র দাবিতে দেশের ৩৭টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন আজ। সোমবার তাঁরা এই আন্দোলন শুরু করেছেন। এই আন্দোলনের মধ্যেই আজ বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে দুই শিক্ষকনেতা সাংবাদিকদের বলেন, তাদের আন্দোলন চলবে। তবে তাঁরা আশাবাদী সমস্যার সমাধান হবে।বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।

সিলেকশন গ্রেড বহাল, গ্রেড সমস্যা নিরসন ও পৃথক বেতন স্কেলের দাবিতে গত আট মাস ধরে আন্দোলনের পর গতকাল থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষকেরা। এই কর্মবিরতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আজও কোনো ক্লাস হয়নি।সকালে এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আজও সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মবিরতি কর্মসূচি চলছে। এবার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্জন হল এলাকায় অবস্থিত প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের একজনশিক্ষক বলেন, গতকালের মতো আজও তাঁদের বিভাগে কোনো ক্লাস হচ্ছে না।দেশের ৩৭টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতিতে বছরের শুরুতেই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে উচ্চশিক্ষা। গতকাল থেকে শিক্ষকেরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড বহাল, গ্রেড সমস্যা নিরসন ও পৃথক বেতন স্কেলের দাবিতে শিক্ষকেরা কঠোর অবস্থানে গেলেও সোমবার পর্যন্ত অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে এ বিষয়ে তৎপরতা দেখা যায়নি। অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে বেতন গ্রেড নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবারও ঢাকা ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠত হয়নি। শিক্ষকরা অব্যাহত রেখেছেন তাদের পূর্ণ কর্মবিরতি।
এর আগে সকালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অসন্তোষ তলিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকা লাগাতার কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ফেডারেশন ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের একথা বলেন।

অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বেতন বাড়লেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কেন অসন্তোষ- জানতে চাইলে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের বিষয়ে কেউ হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছে বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সঠিক তথ্য নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি তিনি শিক্ষকদের অসন্তোষের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যা সমাধানেরও আহ্বান জানান ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন। ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল জানিয়েছেন, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবলমাত্র সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হলেও অন্যান্য পরীক্ষা হচ্ছে না।এদিকে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেওয়া প্রতিশ্র“তি পূরণ ও অন্যান্য অসঙ্গতি দূর করার দাবিতে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মত কর্মবিরতি পালন করছেন দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

জবি :সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জবি শিক্ষক সমিতির সাত-আটজন নেতাকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। অধিকাংশ শিক্ষককে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।বাংলা বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী লাতিফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকরা কর্মসূচিরে নামে ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত রেখে ছুটি কাটাচ্ছেন।জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, বৈষম্যমূলক অষ্টম পে-স্কেল শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সোমবার (১১ জানুয়ারি) থেকে কর্মবিরতি পালন করছে।

ইবি : বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত এ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকবৃন্দও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন মঙ্গলবারও (১২ জানুয়ারি) অব্যাহত রয়েছে।এদিনও কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসেই আসেননি। এছাড়া প্রশাসনিক ভবনের কার্যক্রমেও রয়েছে স্থবিরতা। হিসাব, জনসংযোগসহ কয়েকটি বিভাগে কার্যক্রম চললেও অধিকাংশ বিভাগে তেমন কোনো কার্যক্রম চলছে না বলে জানা গেছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়ার কাজে প্রতিদিন কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও শৈলকুপা থেকে ৫৫টি গাড়ি যাতায়াত করে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে এসব পরিবহন স্ব স্ব রুট থেকে নিয়মিত যাত্রীশূন্য যাতায়াত করছে। আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় ক্যাম্পাসে আসছেন না অধিকাংশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, জাহাঙ্গীরনগর সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট চলছে। হচ্ছে না কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা। এ পরিস্থিতিতে অচল হয়ে পড়েছে দেশের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম।