JatriBG_425963166

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ জানুয়ারি ২০১৬: গত এক বছরে বাংলাদেশে সাড়ে ৬ হাজরেরও বেশি ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৪২ যাত্রী। হাত-পাসহ অন্যান্য অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ১ হাজার ৩শ’র বেশি মানুষ।বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার উপর একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে এসব তথ্য দেয়া হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সব ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনটি।সমিতির পক্ষে প্রতিবেদন পড়ে শোনান মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫’র জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে সারাদেশে ৬ হাজার ৫৮১টি ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে সর্বমোট ৩০ হাজার ৪৯৭ জন যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬৪২ জন। আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। এর মধ্যে হাত-পা বা অন্যান্য অঙ্গ হানির কারণে পঙ্গু হয়েছেন ১ হাজার ৩০৫ জন।

এসময়ে ১ হাজার ১শ ৮৫টি বাস, ১ হাজার ৬৫৬টি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান, ৮শ ৭২টি হিউম্যান হলার ৮শ’ ৫২টি জিপ-কার ও মাইক্রোবাস, ১ হাজার ৬৭৮টি অটোরিক্শা, ১ হাজার ৭৭১টি মোটর সাইকেল, ১ হাজার ৭১টি ব্যাটারি চালিত রিক্শা, ১ হাজার ৩৩টি নসিমন-করিমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।১ হাজার ৮০জন ছাত্র-ছাত্রী, ৩০৫জন শিক্ষক, ১৩৩ সাংবাদিক, ১০৯ পুলিশ- সেনা, বিজিবি ও আনসার সদস্য, ৮০১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ২ হাজার ২৪১জন পথাচারি, ২৬১ জন সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারি, ১ হাজার ৬৭৭জন নারী এবং ১ হাজার ১২২জন শিশু এসব দুর্ঘটনার শিকার হয়। গত বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ মারা গেছে বলে নতুন একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।

শনিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এই সংখ্যা জানানো হয়, যা এক সপ্তাহ আগে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সংখ্যার চেয়ে সাড়ে তিন হাজার বেশি।নিরাপদ সড়ক চাই’ এর মতো যাত্রী কল্যাণ সমিতিও সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০১৫ সালে সারাদেশে ৬ হাজার ৫৮১টি ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৮ হাজার ৬৪২ জন নিহত হন; আহত হন ২১ হাজার ৮৫৫ জন।গত ৩১ ডিসেম্বর নিরাপদ সড়ক চাই হিসাব দেখিয়েছিল, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৩ জন নিহত হয়, যা ২০১৪ সালের চেয়ে দেড় হাজার কম। মোজাম্মেল হক জানান, ২০১৫ সালে যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিক মিলে ৩০ হাজার ৪৯৭ জন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন।সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

এগুলো হলো- ট্রাফিক আইন ও মোটরযান আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, গীর্জা ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারে ব্যবস্থা করা।জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা। রোডসাইন ও জেব্রা ক্রসিং আঁকা। চালকদের পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; তাদের বিশ্রাম ও কর্মবিরতির সুযোগ দেওয়া। বিদ্যমান মোটরযান আইন যুগোপযোগী করা ও গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়ার পদ্ধতি ডিজিটাল করা। মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।এছাড়া সরকারকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ভরণ- পোষণের দায়িত্ব নিতে এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত ট্রমা সেন্টারগুলো দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।