দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ জানুয়ারি ২০১৬: নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশে আসছে না অস্ট্রেলিয়া যুব ক্রিকেট দল। একই কারণে গত সেপ্টেম্বরে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাতিলের পর এবার যুব ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ থেকেও নাম প্রত্যাহার করে নিল দলটি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছেন। আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১৪ ফেব্র“য়ারি ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই টুর্নামেন্ট। এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশ নিতে আয়ারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন।এর আগে একইদিনে নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাতে বাংলাদেশে আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠেয় যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় অস্ট্রেলিয়া।বাংলাদেশে দুটি টেস্ট খেলার জন্য গত সেপ্টেম্বরে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের। তবে হঠাৎ করেই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে সেই সফর বাতিল করেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। যদিও নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাত তোলা সত্ত্বেও গত নভেম্বরে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের একটি ম্যাচ খেলে গেছে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ফুটবল দল। তখন তাদের অজুহাত ছিল দীর্ঘমেয়াদী সফরে ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই সময় সংক্ষিপ্ত করে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় ঢাকায় অবস্থান করে ফিরে গিয়েছিল সকারুরা।
গত সপ্তাহে আইসিসির নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিলেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রদান সিন ক্যারল। তার ফিরে যাওয়ার পর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে তারা বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব-১৯ দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানায়। সাদারল্যান্ড বলেন, আমরা সবসময় অস্ট্রেলিয়া দল ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবার উপরে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তাই আমরা বেশ কয়েকদিন আইসিসির নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কাজ করেছি। সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের অভিভাবকদের পাঠানোর আগে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছি।তবে দেশটির সরকার থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পরই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানান সাদারল্যান্ড।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ানদের ভ্রমণে ঝুঁকি এখনো সর্বোচ্চ পর্যায়েই আছে। গত বছর যখন আমরা টেস্ট টিমের সফর করি পরিস্থিতি এখনো সেই পর্যায়েই রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বোচ্চ হুমকি এখনো বাংলাদেশে বিরাজ করছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের আরেকটি প্রতিনিধি দলের সফরের পর তারা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছে। সব তথ্য ও পরামর্শ আমরা পেয়েছি। সবশেষ আমাদের মনে হয়েছে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া আমাদের সামনে কোনো পথ নেই।তবে এমন সিদ্ধান্তে টুর্নামেন্টের আয়োজক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে ক্ষমা চেয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। যুব বিশ্বকাপে চার গ্র“পে বিভক্ত হয়ে ১৬টি দল অংশ নেবে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া আছে বি গ্র“পে। যেখানে তাদের সঙ্গে রয়েছে ভারত, নেপাল ও নিউজিল্যান্ড।
এদিকে,নিরাপত্তা অজুহাতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার না আসাটাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। তবে ইভেন্ট যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি), তাই এ নিয়ে ভাবনাটা তাদের হাতেই ছেড়ে দিতে চায় বিসিবি।নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, অস্ট্রেলিয়ার না আসাটা সত্যি খুবই দুঃখজনক। একটি দল না আসলেও আইসিসির এই টুর্নামেন্ট সফলভাবে আয়োজনের ব্যাপারে আমরা দৃঢ়ভাবে আত্মবিশ্বাসী। তবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেয়া হলেও তাদের না আসাটা সত্যি দুঃখজনক ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি নিজামউদ্দিন চৌধুরী। অন্যদিকে, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। যদিও মঙ্গলবার নিরাপত্তা অজুহাতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাদের দল বাংলাদেশে না পাঠানোর কথা জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া না আসলেও টুর্নামেন্ট যে বাংলাদেশেই হবে তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন।
আইসিসি তাদের অবস্থানের পক্ষে ব্যাখ্যাও দিয়েছে। সংস্থাটির সিকিউরিটি ম্যানেজার বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে নিয়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা নিরাপত্তা পরিকল্পনায় সন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রক্রিয়া আইসিসি অব্যাহত রাখবে বলেও জানান ডেভ রিচার্ডসন। একইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে বাছাইপর্বে রানার্সআপ আয়ারল্যান্ড দলকে খেলার আমন্ত্রণ জানিয়েছে আইসিসি। যারা অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে ডি গ্র“পে ভারত, নিউজিল্যান্ড ও নেপালের সঙ্গে যোগ দেবে।রিাচর্ডসন বলেন, আইসিসি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান জেনেছে এবং তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে। যা তারা অস্ট্রেলিয়ার সরকারের কাছ থেকে পরামর্শের ভিত্তিতে নিয়েছে। আমরা অবশ্যই এমন সিদ্ধান্তে হতাশ। আইসিসি ইভেন্ট হিসেবে এই টুর্নামেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্ব আইসিসির। বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইসিসি এই টুর্নামেন্ট নির্ধারিত সূচিতেই অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত অব্যাহত রাখছে।