দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০২ জানুয়ারি ২০১৬: ভারতের পাঞ্জাবে একটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা।এতে নিহত হয়েছেন অন্তত সাতজন।পাকিস্তান সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে শনিবার ভোরে এ হামলা হয় বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।এদিকে,ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে বিমানবাহিনীর পাঠানকোট ঘাঁটিতে আবার গুলির শব্দ শোনা গেছে। একই সঙ্গে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। এনডিটিভির খবরে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চিরুনি অভিযান শুরু হওয়ার পর এই শব্দ শোনা যায়। সেখানে আরও সন্ত্রাসী লুকিয়ে আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অশনিবার ভোরে ওই ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা হয়।নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা গোলাগুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে চারজন সন্ত্রাসী ও তিনজন বিমান সেনা।পাকিস্তানের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদ এই হামলা চালিয়েছে বলে ভারত সন্দেহ করছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে জানানো হয়,পাঞ্জাব পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এইচএস ধীলন বলেছেন, শনিবার সকাল আটটার দিকে বিমানঘাঁটিতে গোলাগুলি শেষ হয়েছে। তবে চিরুনি অভিযান চলছে। তাঁর এই বক্তব্যের পরেই আবার ঘাঁটিতে গুলির শব্দ শোনা যায়। সূত্র বলছে, সেখানে আবার গোলাগুলি শুরু হয়েছে ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটেছে।জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ হামলার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, পাঞ্জাবের সন্ত্রাসী হামলা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাকিস্তান সফরকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলল। তিনি বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) বুঝতে হবে যে সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। এ ধরনের হামলা ভারত-পাকিস্তানের আলোচনা বা সমঝোতাকে ক্ষুন্ন করল।
এনডিটিভি জানিয়েছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের মুখোমুখি সংঘর্ষে চার সন্ত্রাসী এবং তিন সেনা সদস্য মারা গেছেন। টেলিভিশনটির খবরে বলা হয়েছে, চার থেকে ছয়জন সন্ত্রাসী এই হামলায় অংশ নেয়। তারা সেনাবাহিনীর পোশাকে এসেছিলেন। তাদের নিষ্ক্রিয় করতে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ।প্রথম দফায় ছয় ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর পুলিশ ও সেনাসদস্যরা অভিযান শেষের ঘোষণা দেয়।এরপর ঘাঁটিতে থাকা জঙ্গি সদস্যদের ধরতে চিরুনি অভিযান চালানোর সময় নতুন করে গুলি ও গ্রেনডের শব্দ পাওয়া যায় বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।ঘাঁটিতে থাকা মিগ-২৯ ও অন্যান্য আধুনিক বিমান নিরাপদে রয়েছে বলে ভারতের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এনডিটিভিকে নিশ্চিত করেছেন।ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লাহোরে সারপ্রাইজ’ সফরের কয়েকদিনের মাথায় এই সন্ত্রাসী হামলা ঘটল।হামলাকারীরা জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই মোহাম্মদের সদস্য এবং তারা পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর থেকে এসেছে বলে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাঠানকোটের এই বিমান ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে।এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতেই দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, বিমান বাহিনীর প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা এক জরুরি বৈঠক করে। গোয়েন্দা সতর্কতার পরপরই পাঠানকোট বিমানবন্দরে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড মোতায়েন করা হয়; অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে জম্মু ও কাশ্মিরের পুলিশকে প্রস্তুত থাকতে’ নির্দেশ দেওয়া হয়।শনিবার ভোর ৪টার দিকে বিমান ঘাঁটির নিকটবর্তী একটি গ্রাম থেকে বন্দুকধারীরা প্রথম গুলি চালায় বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়।হামলার সময় সন্ত্রাসীরা গুরুদাসপুরের সাবেক পুলিশ সুপার সালভিন্দর সিং এর একটি গাড়ি ব্যবহার করে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।শুক্রবার রাতে পাঠানকোট-জম্মু সড়ক থেকে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা জঙ্গিরা সালভিন্দর ও তার দ্ইু সহযোগীসহ গাড়িটি অপহরণ করে। পরে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সালভিন্দরের মোবাইল ফোন ও গাড়িটি জঙ্গিরা রেখে দেয়।
সালভিন্দরের ফোন দিয়েই হামলাকারীরা পাকিস্তানে তাদের ‘নিয়ন্ত্রণকারী’র সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া।ওই ফোনে পাঠানকোট বিমানবন্দরের যতটা সম্ভব ক্ষতি করা’র নির্দেশ দেওয়া হয়।ছয় মাস আগে গুরুদাসপুরে এক সন্ত্রাসী হামলায় চার পুলিশ ও তিনজন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার পর এটাই সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা।ওই হামলায় তিন জঙ্গি অংশ নিয়েছিল এবং পরে পুলিশের সঙ্গে ১২ ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলিতে তাদের প্রত্যেকেই নিহত হয়েছিল।