Rajib_971909737

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫: ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার দায়ে দু’জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আট আসামির বাকি ৫ জন পেয়েছেন বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্লগার হত্যার প্রথম এ রায় দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ।ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ঢাকার খিলক্ষেত চৌধুরীপাড়ার মো. ফয়সাল বিন নাঈম দ্বীপ (২২) ও ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার জয়লস্করের রেদোয়ানুল আজাদ রানা (৩০)। তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থানার ধলেশ্বর গ্রামের মাকসুদুল হাসান অনিককে (২৩)। তাকেও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানিকে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ২ হাজার টাকা জরিমানা ও জরিমানা অনাদায়ে ২ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার পোড়াপাড়া গ্রামের মো. এহসান রেজা রুম্মান (২৩), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কলেজপাড়ার নাঈম ইরাদ (১৯) ও চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া গ্রামের নাফিজ ইমতিয়াজকে (২২) দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ১০ বছর কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও জরিমানা অনাদায়ে প্রত্যেককে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ও ঢাকার কলাবাগান থানার ভুতের গলির সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে (২০) দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় ৩ বছর কারাদণ্ড, ২ হাজার টাকা জরিমানা ও জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।জসীমউদ্দিন রাহমানি ছাড়া সবাই ঢাকার বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ছাত্র।আসামিদের মধ্যে রাজীব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত রেদোয়ানুল আজাদ রানা পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া অন্য সাতজন আসামিকে রায় শোনাতে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

মামলাটিতে ৫৫ জন সাক্ষীর মধ্যে রাজীবের ছোটভাই স্থপতি নেওয়াজ মর্তুজা হায়দারসহ ৩৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।এ রায়ের মধ্যে দিয়ে দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্লগার ও লেখক-প্রকাশকসহ মুক্তমতের মানুষের ওপর হামলা-হত্যার ঘটনায় প্রথম রায় এলো।ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার আট আসামির মধ্যে জসীমউদ্দিন রাহমানী ছাড়া বাকিরা সবাই নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।এদের মধ্যে মাকসুদুল হাসান অনিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।বাকি পাঁচজনের মধ্যে এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীকে ৫ বছরের কারাদণ্ডসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে আরও দুমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আর সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে ৩ বছরের কারাদণ্ডসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।তিন বছর আগে দায়ের হওয়া এ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত সোমবার বিচারক রায়ের দিন ঠিক করে দেন।২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্র“য়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।এঘটনায় রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিনের করা মামলার তদন্তে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে উঠে আসে।মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ ওই আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। আর এবছরের ১৮ মার্চ তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।মামলার অভিযুক্ত আটজনের মধ্যে প্রধান আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানা ছাড়া সবাই কারাগারে আছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়।জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা নাস্তিক ব্লগারদের খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানকে ওই হত্যাকাণ্ডে উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পেশায় স্থপতি রাজীব ব্লগ লিখতেন থাবা বাবা নামে, যেখানে ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে লিখতেন তিনি।আসামিদের মধ্যে জসীমকে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয় তার আগে মার্চ থেকে অগাস্টের মধ্যে।

মুফতি জসীমের উসকানিমূলক খুতবার বিষয়টি ছাত্রদের জবানবন্দিতেও উঠে এসেছে।রাজীব হত্যার পর গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক মিলে ছয় জনকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।এর আগে এ ধরনের হামলার শুরু হয় ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি; লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে দিয়ে, যিনি পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।গত ১১ বছরের এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে প্রথম কোনো ঘটনার বিচারের রায় হলো। এদিকে,গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন।আলোচিত এ মামলার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আমি ন্যায়বিচার পাইনি। আমি হতাশ।২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্র“য়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে। পেশায় স্থপতি রাজীব ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে ব্লগে লিখতেন।