Hanif

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫: আন্দোলনের নামে পেট্রোল বোমা হামলা করে মানুষ পুড়িয়ে মারায় এবং বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করায় পৌরসভা নির্বাচনে জনগণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে এ মন্তব্য করেন তিনি। পৌরসভা নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলন করার পর এ সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ।হানিফ বলেন, এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বৈধতা দিয়েছে। কারণ তারা এতোদিন সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে মানতো না।খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক তুলে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ায় জনগণ পৌরসভা নির্বাচনে তার দলের প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।

হানিফ বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়া যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তা জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কটাক্ষ করে বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে পাকিস্তানি হিসেবে প্রমাণ করেছে।সাধারণ জনগণ পাকিস্তানি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আর কাউকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই এই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী খালেদা এবং তার দলকে আবারও এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ।অনিয়ম ও সংঘর্ষের কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্যে বুধবার প্রথমবারের মতো দেশে দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচন হয়। ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে এ পর্যন্ত ২২৭টি মেয়র পদের বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়েছে।এতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক জিতেছে ১৭৭টিতে, বিএনপির প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছেন ২৩টিতে।আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ বলেন, দেশের মানুষ বোমাবাজ, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী জামায়াতে ইসলামের পাশে না গিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার পাশেই রায় দিয়েছে। পেট্রোল বোমা দিয়ে ১৪৭ জনকে পুড়িয়ে মারার প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনে।বিএনপির পক্ষ থেকে ভোট কারচুপির অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, বিএনপি এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করেছে- এটা একটি বৈধ সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করতে তারা বাধ্য।

নির্বাচনে দু’একটি ছোটখাট বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা বলেন, নির্বাচনী ইতিহাস ঘাঁটলে এর চেয়ে বেশি সহিংসতার খবর দেখা যায়। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একজন নিহত হয়েছেন। তিনি কিন্তু দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। বিএনপি এ ধরনের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জড়িয়ে রং দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কী হয়েছে জনগণ তা দেখেছে।নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া অবস্থানের প্রশংসা করে হানিফ বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল। তাদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে আমাদের কিছু নেতাকর্মীও আহত হয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছে বিধায় তারা প্রশংসা পেতে পারে।

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যাচার উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, কিছু কিছু জায়গায় আমাদের দলের প্রার্থীরা মাত্র ১৩-১৪ ভোটে হেরেছেন। ভোটে কারচুপি হলে আমাদের প্রার্থীরা এ অল্প ব্যবধানে হারতেন না, জিতে জেতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ফল যা হয়েছে, তা-ই মেনে নিয়েছে।তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুলের সমালোচনা করে বলেন, নির্বাচন নিয়ে তার কথা শুনে মনে হয়েছে, তিনি কি বাংলাদেশে বাস করেন, নাকি আসমান থেকে এসেছেন। ইতিহাস ঘাঁটলে এর চেয়ে বেশি সহিংসতাও দেখা যায়। বিএনপির আমলের নির্বাচনের কথা না হয় বাদই দিলাম।

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, এর আগে জনগণ তাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, এই শিক্ষার কথা যদি তাদের মনে থাকে, তাহলে আর আন্দোলনের কথা বলবে না। তাছাড়া বিএনপির আন্দোলনের শক্তি নেই। তারা এখন মেরুদণ্ডহীন দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপি এখন একটি মাজা ভাঙা দল।আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যারা বিজয়ী হয়েছে তাদের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে হানিফ বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের সময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আছে, সেটাই করা হবে। দলের সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করেছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, উপ-প্রচার সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, সদস্য এসএম কামাল হোসেন, এনামুল হক শামীম প্রমুখ।