দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫: জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ( জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ( জেডিসি) সারা দেশে পাস করেছে ২০ লাখ ৯৮ হাজার ৮২ জন। ৮টি সাধারণ ও মাদরাসা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ২২ লাখ ৭২ হাজার ২৮৯ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৩, যা গত বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৩ শিক্ষার্থী।বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জেএসসি ও জেডিসির ফল প্রকাশ করে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জুনিয়ার স্কুল ও দাখিল পরীক্ষায় ৮টি সাধারণ ও মাদরাসা বোর্ডের অধীনে মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৫৪৭। গতবারের চাইতে বেড়েছে ৬৮৪টি। এবারে মোট কেন্দ্র ছিল ২ হাজার ৬২৭টি।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮ হাজার ৫৮৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৮৮৯। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৩টি। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ৪৯। গত বছরের তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থী বেড়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৮১৮জন।জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ( জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন গত বছরের তুলনায় এবারের পরীক্ষায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে পরীক্ষার্থী সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ-৫ এর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জেডিসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১০ হাজারেরও বেশি। কেন এ সংখ্যা কমলো তা খতিয়ে দেখা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, ৮টি সাধারণ বোর্ডে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ৯৯জন পরীক্ষাথী অংশ নেয়। যা গত বছর ছিল ১৭ লাখ ২৯ হাজার ৯৩১ জন। পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৮জন। জেএসসি পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৭৭০ জন পাস করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন,‘গত বছরের তুলনায় এবার এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৪৩। এতে শতকরা পাসের হার দাঁড়ায় ৯২ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বেড়েছে ২ দশমিক ৪৬।তিনি বলেন, এ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০২ জন। গত বছরের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ হাজার ৫৫৭জন। মন্ত্রী জানান, এবারের জেএসিসি- জেডিসি ছাত্র ছিল ১০ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৬ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৯ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ২৪। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৪ হাজার ৯৬০। ছাত্রী ছিল ১২ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ১১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৩ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ৪২। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৩০৩জন। প্রতিবছরের মতো এবারও বিদেশি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসেছিল জিএসসি শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রী জানান, বিদেশি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৫৮ জন। পাস করেছে ৫৪৮জন। পাসের ৯৮ দশমিক ২১। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১১জন। কেন্দ্র ছিল মোট ৮টি।
এদিকে জেডিসির ফলাফল সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এ পরীক্ষায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩১২জন পাস করেছে। গত বছরের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬ হাজার ৭ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৬। গত বছর এ হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫০। কমেছে ১ দশমিক ০৪। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৭৬১। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ২৯০। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমেছে ১০ হাজার ৫২৯জন। এ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৩ হাজার ১৯০ জন। গত বছর ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৫৪০জন। বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১ হাজার ৬৫০ জন।মাদরাসায় জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার কারণ কি?- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো বিষয়টি বিশ্লেষণ করিনি। বিশ্লেষণ করে কোনো অংশে ত্রুটি থাকলে তা সমাধান করা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে ১ দশমিক ৯২। মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর হারও কমেছে। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এ তথ্যগুলো খুবই ইতিবাচক।সবশেষে তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। গত বছরের মতো এবারও সম্পূর্ণ পেপারলেস ফল প্রকাশ করেছি। বোর্ড কর্তৃক সরবরাহকৃত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ই- মেইল ঠিকানায় নির্ধারিত সময়ে ফল পৌঁছে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রয়োজনে ফল ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে পারবে। ২০১৫ সালের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০২ জন শিক্ষার্থী। যা গত বছরের চেয়ে ৫০ হাজার ৫৫৭ জন বেশি। এরমধ্যে ছাত্র ৮০ হাজার ৭৪৬ জন, ছাত্রী ১ লাখ ৬৭৫৬ জন।২০১৪ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪৫ জন। বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে কম পেয়েছে সিলেট বোর্ড।ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি জিপিএ ৫ পাওয়া ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ১০জন। পর্যায়ক্রমে পরের অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বোর্ডের জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৮৩ জন, কুমিল্লা ২০ হাজার ৭৪৭ জন, দিনাজপুর ১৯ হাজার ১৪৩ জন, যশোর ১৭ হাজার ৮৩১ জন, বরিশাল ১৩ হাজার ৪৬৪ জন, চট্টগ্রাম ১২ হাজার ২৬৮ জন, সিলেট ৪ হাজার ৯৫৬ জন।
জেডিসিতে জিপিএ ৫ কম পেয়েছে ১০ হাজার ৫২৯ জন। এবছর পেয়েছে ৮ হাজার ৭৬১ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৫৪৭জন, ছাত্রী ৪ হাজার ২১৪জন। ২০১৪ সালে জেডিসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১৯ হাজার ২৯০ জন।অন্যদিকে, জেএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২২ লাখ ৭২ হাজার ২৮৯ জনের মধ্যে পাস করেছে ২০ লাখ ৯৮ হাজার ৮২ জন। অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় এবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর হারও কমেছে। কমেছে শূন্য পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।
ফল প্রকাশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড মিলিয়ে এবার শূন্য পাশ করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ৬টি।গত বছর জেএসসি ও জেডিসি মিলিয়ে সারাদেশে শূন্য পাশ করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪৯টি। ৬টি কমে এবছর শূন্য পাশ করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪৩-এ। এর মধ্যে জেএসসি’তে ২৩টি এবং জেডিসি’তে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাশের হার শূন্য।মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এবার অনুত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২০৭ জন পরীক্ষার্থী। এছাড়া বিদেশে অনুত্তীর্ণ হয়েছে আরও ১০ পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবার বেশি হলেও গত বছরের তুলনায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর হার কমেছে ২১ হাজার ৫৩২। গত বছর ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৩৯ পরীক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ হয়েছিল।
এ বছর জেএসসি’তে অনুত্তীর্ণ ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩২৯ পরীক্ষার্থী এবং জেডিসি’তে অনুত্তীর্ণ হয়েছে ২৫ হাজার ৮৭৮ পরীক্ষার্থী।অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি, উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর হার বৃদ্ধিসহ প্রাপ্ত ফলাফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় পাশের হার ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জেএসসি-জেডিসি মিলিয়ে এবার ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে ৮টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে ৯২ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে ৯২ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।এদিকে, প্রাথমিক-ইবতেদায়ি সমাপনীতে এ বছর গড় পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে বিভাগ ভিত্তিক এ ফলে সবার চাইতে এগিয়ে আছে রাজশাহী। এ বিভাগের ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থীই পাস করেছে। সবচেয়ে কম সিলেটে ৯৬ দশমিক ৭৯। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য জানান।তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার রাজশাহীতে ৯৯ শতাংশ, ঢাকায় ৯৮.৭৪ শতাংশ, খুলনায় ৯৮.৯৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ, বরিশালে ৯৮.৩০ শতাংশ, সিলেটে ৯৬.৭৯ শতাংশ ও রংপুরে ৯৮.৫৬ শতাংশ।অন্যদিকে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার ঢাকায় ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ, রাজশাহীতে ৯৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ, খুলনায় ৯৬ দশমিক ২২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বরিশালে ৯৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ, সিলেটে ৯০ দশমিক ০১ শতাংশ ও রংপুরে ৯৭ দশমিক ২১ শতাংশ। এবার প্রাথমিকে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮০ জন শিক্ষার্থী এবং ইবতেদায়িতে ৫ হাজার ৪৭৩ জন শিক্ষার্থী।