31-12-15-PM_PEC_JSC Results_Gonobhaban-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫: দেশের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার ‘বিশেষ অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফল হস্তান্তর এবং নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে তিনি এ অনুরোধ করেন। চলতি বছরেরর প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং সমমানের অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফল হস্তান্তর করেন।একই অনুষ্ঠানস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে পাঠ্য বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও একটি মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের সংশ্লিষ্ট বোর্ডের জেএসসি ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর করেন।শেখ হাসিনা দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আগামীকাল উদযাপিত পাঠ্যবই উৎসব জনগণের জন্য নতুন বছরের উপহার।মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি ‘উত্তরীয়’ পরিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব হুমায়ুন খালিদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র পাল এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। ইংলিশ মিডিয়ামে ইংরেজি যে বইগুলো সেখানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা তুলে ধরা দরকার, বলে বিশেষ অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।বাংলা মাধ্যমের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের বিজয়, এটা আমাদের গর্বের বিষয়। আমরা বাঙালি জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। ৯৬ হাজার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের কাছে স্যারেন্ডার করেছে।নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে আমরা বিজয়ী জাতি- এই আত্মমর্যাদাবোধটা শিশুকাল থেকে থাকতে হবে।তাহলে, তাদের আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে।তারা দেশকে ভালোবাসবে, দেশের জন্য কাজ করতে পারবে।এসময় শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ উদ্যোগে তহবিল গঠনের আহ্বান শেখ হাসিনা।এজন্য প্রতিটি এলাকার বিত্তশালী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাবেক শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের এক কোটি ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে শিক্ষা নিতে হবে।সে সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের মেধা রয়েছে। তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।সরকার শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা প্রত্যেক ছেলে-মেয়েকেই নিতে হবে। সে সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। দারিদ্র্যের কারণে কেউ যেন ঝরে না পড়ে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা চেয়েছেন বাঙালি জাতি উন্নত, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত হবে। তার স্বপ্নপূরণে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ছেলে-মেয়েদের বই দেওয়ার ভার আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ে নিয়েছে। শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে আমরা বিভিন্ন রকমের উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিয়েছি।তিনি বলেন, দারিদ্র্যের কারণে কেউ যেন শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছে সরকার।এসময় প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে কিছু পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সাবেক শিক্ষার্থী ও এলাকার দানশীলদের নিয়ে গঠিত ফান্ড ও এলামনাই ট্রাস্ট নিয়ে চলতে পারে।

তারা টিফিনের ব্যবস্থা করতে পারে। এতে দরিদ্র শিশুরা স্কুলমুখী হবে। ওই প্রতিষ্ঠানকেও কারও মুখাপেক্ষী হতে হবে না। এটাই জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন।শিক্ষার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা পদক্ষেপের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তার সরকার ১ কোটি ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা তহবিলে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অটিস্টিক ছেলে-মেয়েদেরও যেন স্কুলে পাঠানো হয়, তাদের সুচিকিৎসার জন্যও তার সরকার বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছে।এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের বর্বরতা-নৃশংসতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্মরণ করেন, মুক্তিযুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা দেশ গড়তে মনোনিবেশ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেন। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত গড়ে দিতে নানামুখী পদক্ষেপ নেন।

সেই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।প্রধানমন্ত্রী ইংরেজি মাধ্যমের পড়াশোনায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্তর্ভূক্ত করার কথাও বলেন এসময়। তিনি বলেন, বাংলা মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আছে, ইংরেজি মাধ্যমে সেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের বিজয় আমাদের জন্য গর্বের। কারণ বাঙালি যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে। এই বিজয়ের ইতিহাস পড়লে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠবে। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। তাই তাদের আত্মবিশ্বাসী হওয়াও প্রয়োজন।

পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এবার জ্বালাও- পোড়াওয়ে না গিয়ে নির্বাচনে এসেছে, নির্বাচনমুখী হয়েছে। এজন্য তাদের সাধুবাদ।তবে তিনি উল্লেখ করেন, দেশবাসীর ২০১৫ সাল শুরু হয়েছে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে। বিএনপি-জামায়াত জেটের জ্বালাও- পোড়াও, গাড়িতে আগুন দেওয়া, মানুষ পুড়িয়ে মারা, নানা ধরনের কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের দিন কাটাতে হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। তিনি বলেন, আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা শান্তিতে লেখা-পড়া করতে পারবে, পরীক্ষা দিতে পারবে। ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হবে এটাই আমরা চাই।