দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫: কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনে সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে বুধবার সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। ভোটাররা সকালেই ভোট কেন্দ্রে এসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। শীতের কারণে সকালে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ভোটারদের লাইন দীর্ঘ হয়ে কেন্দ্রের মাঠ ছাড়িয়ে পাশের রাস্তায় পৌছে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে তেমন কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রায় ৭ বছর পর এ পৌরসভার ভোটাররা বুধবার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে ভোট প্রদান করেছে। কয়েকটি বিশৃঙ্খল ঘটনা বাদে এ পৌরসভার ২২টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় প্রত্যেক কেন্দ্রেই ভোটারের উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক।
দু’দলের মেয়র প্রার্থীর ভোট প্রদানঃ বুধবার সকালে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আনিছুর রহমান তুলা গবেষনা স্কুল কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেছেন এবং বিএনপি প্রার্থী শহীদুল্লাহ শহীদ মাওনা চৌরাস্তা মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। ভোট দেয়ার পর উভয় প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাসদ মনোনীত ৩জন এবং স্বতন্ত্র ১জনসহ মোট ৪ জন প্রার্থী মেয়র পদে, ৯টি ওয়ার্ডে ৪৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১১ জন নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। এখানে ভোটার রয়েছে ৫৮ হাজার ৭০ জন।এদিকে সরেজমিন পরিদর্শন কালে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় ভোর থেকেই রাস্তায় রাস্তায় র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠে ছিল নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। ভোট গ্রহনের শুরু থেকেই বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপি তথা ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না। কয়েকটি কেন্দ্রে এজেন্ট থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাও চলে যায়।
ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়াঃ এদিকে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহন চলাকালে দুপুর আড়াইটার দিকে ৮নং ওয়ার্ডের মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছাত্রলীগ কর্মী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ২০ মিনিটের মতো এ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল জলিল জানান, একটু সমস্যার কারণে ২০/২২ মিনিটের মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। তবে পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এছাড়াও কেওয়া পশ্চিম খন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (বর্ধিত) কেন্দ্রে দু’কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কিছু সময়ের জন্য ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিলে ভোট গ্রহণ আবারো শুরু হয়।
কাউন্সিলর প্রার্থী লাঞ্চিতঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে পৌর নির্বাচনে ৮ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম (ব্রিজ)কে লাঞ্চিত করেছে প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা।এব্যাপারে প্রার্থী নজরুল ইসলাম জানান, দুপুরে জাল ভোট দেয়ার সংবাদে কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করতে চাইলে এসময় আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন তাকে মারপিট করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। এনিয়ে দু’পক্ষের কর্মী সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।জাল ভোটের অভিযোগে ৪৫টি ভোট বাতিলঃ গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের মুড়িতে ভোট কর্মকর্তার স্বাক্ষরবিহীন ৪৫টি ব্যালট (ভোট) বাতিল করেছেন গাজীপুর জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মোঃ শহীদুল্লাহ্ শহিদ অভিযোগ করেন মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়-২ (মুক্তিযোদ্ধা একাডেমিক ভবন নীচতলা কেওয়া পশ্চিম খন্ড) কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়া হচ্ছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের মুড়ি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় ব্যালট পেপারের ৪৫টি (ব্যালট নং-৪৭৯৫৫-৪৮০০০) মুড়ির অংশে পোলিং অফিসারের স্বাক্ষর নেই। ভোটারদেরও স্বাক্ষর ও টিপসই ছিলো না। ফলে ব্যালট বাক্সের ভেতর ফেলানো হলেও ওই ৪৫টি ব্যালট তথা ভোট গণনার সময় বাতিল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ, ওইগুলো গণনার আওতায় আনা হবে না।এব্যাপারে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোঃ খালেকুজ্জামান জানান, পোলিং অফিসারদের ভুলের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন। তবে কীভাবে ঘটনাটি ঘটলো সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।
প্রার্থীর বক্তব্যঃ বিকেলে শ্রীপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী মোঃ আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনমতের প্রতি তার পূর্ন শ্রদ্ধা রয়েছে। শ্রীপুরে নির্বাচনী পরিবেশ অত্যান্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছিল বলে দাবি করেন তিনি।অপর বিএনপির প্রার্থী শহিদুল্লাহ শহিদ জানান, আওয়ামীলীগের লোকজন সকাল থেকেই কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে কারচুপির নির্বাচন উপহার দিয়েছে যেখানে জাল ভোটের পরিমান ছিল উল্লেখযোগ্য।
রিটার্নিং অফিসারের বক্তব্যঃ শ্রীপুর পৌর র্নিবাচনের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার নির্বাচনে বুধবার সকাল ৮টা থেকে ২২টি কেন্দ্রে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্র এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিল। এটা শ্রীপুর পৌরসভার তৃতীয় নির্বাচন। এবার এ পৌরসভায় মোট ৫৮ হাজার ৭০ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৯ হাজার ২৬২ জন এবং নারী ভোটার ২৮ হাজার ৮০৮ জন।