file

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫: নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভা নির্বাচনে একটি কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিতের পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।এ ঘটনায় পৌরসভার ১২ কেন্দ্রের সবগুলোর ভোট স্থগিত করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।বুধবার সকাল ১০টার দিকে মাধবদী পৌরসভার ফজলুল করিম কিন্ডারগার্টেন স্কুল কেন্দ্রে এ ঘটনায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী হাজী মোশাররফ হোসেন এবং কাউন্সিলর প্রার্থী ওবায়দুর রহমান টিটুর সমর্থকরা কেন্দ্র দখলে নিয়ে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরার চেষ্টা করেন। পরে তারাই সেখানে হামলা ও ভাংচুর চালায়। ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণার পর নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যেভাবে হামলা হলো- আমি তো মরেই যাইতাম।ফজলুল হক কিন্ডারগার্টেন স্কুলের একজন কর্মচারী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আইয়া নিজের হাতে সিল মারছে। এইটা নিয়ে মারামারি লাগছে।বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রে জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ হাসান ও পুলিশ সুপার আমেনা বেগমের পাঁচ গজের মধ্যে দুটি ককটেল ছোড়া হয়, যার মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়।এরপর বেলা পৌনে ১২টার দিকে দুই কর্মকর্তা সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার সময় ৫০ গজ দূরে আরও দু’টি ককটেল ফাটানো হয়।এ পৌরসভার বেলা ১২টার দিকে মাধবদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দক্ষিণ গেইটের ভেতরে দুটি অবিস্ফোরিত হাতবোমা পড়ে থাকতে দেখা যায়।কলাপসিবল গেইটে ভেতর থেকে তালা দিয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের ওই কলেজর নতুন ভবনের ভেতরে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায় সে সময়। এমনকি অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্যদেরও ভেতরে অবস্থান করতে দেখা যায়।প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে গেইট খোলার অনুরোধ করার দশ মিনিট পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এসে বলেন, তার স্যার ব্যস্ত আছেন।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষের গ্রিলের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি কী করছেন দেখার চেষ্টা করলে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।আরও দশ মিনিট সেখানে অপেক্ষা করলেও ভবনের কলাপসিবল গেইট বা ওই কর্মকর্তার কক্ষের দরজা আর খোলেনি।পরে বিকালে মাধবদী পৌরসভার সব কেন্দ্রের ভোট স্থগিতের কথা জানান কমিশনার আবু হাফিজ। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী সচিব রাজীব আহসান বলেন, সব কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে। এই ভোট গণনার সুযোগ নেই। ভোটের নতুন তারিখ কমিশন পরে জানিয়ে দেবে।নরসিংদী পৌরসভার বেশ কিছু কেন্দ্রে সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট চলতে দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উত্তেজনা।সকালে সাটিরপাড়া কেকে ইনস্টিটিউটে প্রথম শ্রেণী পড়ুয়া নাতি সূর্য্য আহমেদ অনিককে নিয়ে ভোট দিতে আসেন নরসিংদীর একটি সিনেমা হলের মালিক মো. হেলাল হোসেন।ভোটকক্ষ থেকে দাদার সঙ্গে হাতে কালি দিয়ে বের হন অনিকও। বের হয়ে উচ্ছ্বসিত অনিক দাবি করে, ভোটটা সেই দিয়েছে। তার বন্ধুদের মধ্যে আর কেউ ভোট দিতে পারেনি।সুন্দরভাবে ভোট চলার কথা জানান অনিকের দাদা হেলালও।

একই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা এক সময়ের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমিরে হোসেন এ নির্বাচনকে জীবনে দেখা ভালো ভোটগুলো একটি হিসাবে আখ্যা দেন।পুত্রবধূকে সঙ্গে করে নরসিংদী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসা ফাতেমা বেগম (৬০) নামের এক নারীর সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়।তিনি বলেন, ভোট ভালো হইতেসে। ভোট দিয়া আইলাম, কোনো সমস্যা নাই।তবে বেলা গড়াতেই ১০০ গজের ব্যবধানে অবস্থিত এ দুই কেন্দ্রের মাঝামাঝি জায়গায় শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। সেখানে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের হাতে বিদ্রোহী প্রার্থীর এক সমর্থককে পিটুনি খেতে দেখা যায়।পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক মাহবুবুল হক অনন্য জানান, তিনিসহ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তৌফিক কায়কোবাদ টেনি এবং মোবাইল প্রতীকের প্রার্থীর ছোট ভাই রাসেল হামলায় আহত হয়েছেন।

অবশ্য মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরুজ্জামন এবং ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী এস এম কাইয়ুম- দুজনেই পরস্পরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি’ দেখানোর অভিযোগ এনেছেন। মোবাইল ফোন প্রতীকের প্রার্থী কাইয়ুম বলেন, কামরুজ্জামানের লোকজন গতকাল রাত ১০টার দিকে ভেলানগর কেন্দ্রের বাইরে আমার প্রধান এজেন্ট রানা ভান্ডারিকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছে। ব্রাহ্মন্ডি বয়েজ স্কুল কেন্দ্রে পোস্টার লাগানোর সময় রিপন নামে আমার আরেক কর্মীকে হুমকি দিয়েছে। প্রচুর অস্ত্রধারী লোকজন কামরুজ্জামানের পক্ষে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমার সমর্থকদের ভয় দেখাচ্ছে। পাল্টা অভিযোগ করে কামরুজ্জামান বলেন, যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হয়েছে তা নির্জলা মিথ্যাচার। উল্টো আমার লোকজনকে ভয় দেখানোর জন্য কাইয়ুম শহরের বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে বিভিন্ন স্থানে রেখে ব্যাবহার করছে। ভোট কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন, “ভোটের কথা আর কি বলব! ভেলানগর ও মহিলা কলেজ কেন্দ্রে সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকজন ব্যালট পেপারে সিল মারছে।পৌর নির্বাচন প্রভাবিত করতে সন্ত্রাসী আনার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জেলার পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, বাইরের কিছু লোকজন এসেছিল। আমরা ওদের নোটিশ দিয়েছি। ইতোমধ্যে তারা চলে গেছে। তাদের আবার দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।