JBM-RAB-doinikbarta

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫: গাজীপুরে রবিবার দিবাগত রাতে জেএমবি’র ‘জঙ্গী আস্তানায়’ র‌্যাবের অভিযানে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এসময় জঙ্গীদের নিক্ষিপ্ত বোমায় র‌্যাবের দু’সদস্য আহত হয়েছে। র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চারটি অবিস্ফোরিত হাতে তৈরি গ্রেনেড (ইমপ্রোভাইসড এক্সপেল্টাসিভ ডিভাইস-আইইডি), ৫ রাউন্ড গুলি ও একটি পিস্তল, বেশ কিছু বিস্ফোরক, ডেটোনেটরসহ গ্রেনেড তৈরির উপকরণ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিচয় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

র‌্যাব সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ যোগীতলা এলাকায় ঢাকা বাইপাস সড়কের পাশে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বেশ কিছু (২৬ শতাংশ) জমি রয়েছে। ওই জমির উত্তর পূর্ব কোনায় ইটের তৈরি পরিত্যক্ত ছোট একটি ঘর আছে। পরিত্যক্ত ওই ঘরে জঙ্গিরা সভা করতো। রবিবার দিবাগত রাতে জঙ্গীরা সেখানে জড়ো হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল- এমন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা সেখানে অভিযান চালাতে যায়। র‌্যাব সদস্যরা জায়গাটি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করে। এসময় পরিত্যাক্ত বাড়িটির ভেতর থেকে জঙ্গীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। জবাবে র‌্যাবও পাল্টা র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়ে। এতে র‌্যাবের দু’সদস্য আহত হয়। পরে র‌্যাব সদস্যরা তল্লাশী চালিয়ে ওই বাড়ি থেকে দু’যুবকের লাশ উদ্ধার করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে হাতে তৈরি চারটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড (ইমপ্রোভাইসড এক্সপেল্টাসিভ ডিভাইস-আইইডি), ৫ রাউন্ড গুলি ও একটি পিস্তল, জঙ্গিদের কাছে থাকা একটি ব্যাগ থেকে বেশ কিছু বিস্ফোরক, ডেটোনেটরসহ গ্রেনেড তৈরির উপকরণ, জেএমবি’র প্রচারপত্র ও বেশ কিছু জিহাদী বইসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের বোমা বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত হাতে তৈরি চারটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড (আইইডি) নিক্রিয় করে। পরে নিহতদের লাশ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে র‌্যাব সদস্যরা। বিকেল ৪টার দিকে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন লাশের সুরতহাল করেন। পরে পৌণে ৫টার দিকে তাদের ময়নাতদন্ত করা হয়। আনুমানিক ৩৫ ও ৩০ বছর বয়সের নিহত ওই দু’জনের পরিচয় সোমবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এমনকি সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতদের খোঁজে কেউ ঘটনাস্থল বা হাসপাতালে আসেনি। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিত্যাক্ত ওই ঘরের মেঝেতে এক জোড়া জুতো ও ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

যোগীতলা এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ঘটনার (রবিবার দিবাগত) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শোনা যায়। ওই বিকট শব্দের পর পরই বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এঘটনার পর ওই এলাকায় র‌্যাবের উপস্থিতি দেখতে পায় এলাকাবাসী।

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুস সালাম সরকার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নিহতদের মধ্যে এক যুবকের (৩০) বাম কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাথার ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে। তার মাথার পেছনে গুলিবিদ্ধের চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্তকালে তার মাথার ভিতর থেকে গুলি পাওয়া যায়। অপর যুবকের (৩৫) ডান চোয়াল, ডান উরু ও ডান পা গুলি বিদ্ধ হয়। তিনটি গুলিই এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে বোরিয়ে গেছে। তার পেটের ভূঁড়ির আংশিক বেরিয়ে গেছে। তার বুকে ও হাতে থেতলানো চিহ্ন রয়েছে। নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান রাতেই তাৎক্ষণিক আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করে জানান, বাড়িটি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র একটি আস্তানা। নিহতরা জেএমবির সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে হাতে তৈরি চারটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড (ইমপ্রোভাইসড এক্সপেল্টাসিভ ডিভাইস-আইইডি), জঙ্গিদের কাছে থাকা একটি ব্যাগ থেকে বেশ কিছু বিস্ফোরক, ডেটোনেটরসহ গ্রেনেড তৈরির উপকরণ, জেএমবি’র প্রচারপত্র ও বেশ কিছু জিহাদী বইসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত হাতে তৈরি চারটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড (আইইডি) নিক্রিয় করা হয়েছে।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার রেজাউল হাসান বলেন, এ ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। এমনকি সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতদের খোঁজে কেউ ঘটনাস্থল বা থানায় আসেনি।

এদিকে নিহতদের নাম পরিচয় নিয়ে সোমবার দিনভর এলাকায় নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। এতে তথ্য সংগ্রহের জন্য সংবাদ কর্মীরা গলদঘর্ম হয়ে ছুটোছুটি করেছেন। তারা জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রবিবার দুপুরে জামিনে মুক্তি প্রাপ্ত জঙ্গী বগুড়ার শেরপুর থানার কামারখন্দ এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে হাফেজ মিনহাজুল (২৫) ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব এনায়েতপুর এলাকার মাহবুবুল আলমকে (৩০) কারা ফটক থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় র‌্যাব সদস্যরা। রাতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে যোগীতলার ওই বাড়িতে নিহত হয় তারা- এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লেও তার সত্যতা মেলেনি। তবে কারাগার থেকে মুক্তি প্রাপ্ত মাহবুব জানায়, রবিবার জেল গেইট থেকে নিয়ে এ দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব।