ফেনীর মুহুরী প্রজেক্ট

দৈনিকবার্তা-ফেনী, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫: সাগরস্নাত ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত হোটেল মোটেল না থাকায় পর্যটকেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে ফিরে চলে যান আবাসস্থলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এ এলাকার চিত্তাকর্ষক নৈসর্গিক শোভা ও মনোমুগ্ধকর অসংখ্য দৃশ্য বিদ্যমান। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৮৭ সালে নির্মিত মুহুরী সেচ প্রকল্পের ৪০ গেট বিশিষ্ট রেগুলেটর ও ক্লোজার ড্যামটি দেখতেও আকর্ষনীয়। এছাড়া নদীর পাডে সবুজ বনানী ঘেরা মায়াবী পরিবেশ। শীতকালে অতিথি পাখির আগমন ও তাদের কলকাকলী যে কাউকে মুগ্ধ করবে। নদীতে নৌকার সারি মাছ ধরা ও নৌকা ভ্রমনের দৃশ্য ভ্রমন পিয়াসী মানুষদের আকৃষ্ট করে। প্রতিবছর শীতের মওসুমে বহু দেশী-বিদেশী পর্যটক ও পিকনিক পার্টির আগমন ঘটে এখানে। এখানকার মৎস্য খামারগুলোও দেখার মতো। সোনাগাজী ও চট্টগ্রামের সাথে দ্বিমুখী সড়ক যোগাযোগ ভৌগলিক অবস্থান, পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে দারুন দর্শনীয় স্থান।

মুহুরী সেচ প্রকল্প ছাড়াও পর্যটকদেরকে বেশী আকৃষ্ট করছে দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। যার নয়নাভিরাম সৌন্দয্যে পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। উত্তাল সাগরের জোয়ার-ভাটাতো আছেই। সারি সারি গাছের নির্জনতা আর অতিথি পাখিদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো প্রকল্প এলাকা। ইঞ্জিন চালিত বোর্ড আর নৌকায় করে থৈ থৈ নদীর পানিতে ভেসে ভেসে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেন উৎপুল্ল পর্যটকরা। প্রতিনিয়ত পর্যটকদের আগমনে মুখরীত হওয়া ওই আনন্দ উপভোগ করতে শত ব্যস্ততার মাঝে স্থানীয়রা ছুটে যান ওই প্রকল্প এলাকায়। ধুম পড়ে যায় দোকান পাটে বেচা বিক্রি। হাজার হাজার লোকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের পর্যটন মন্ত্রনালয় কর্তৃক মুহুরী সেচ প্রকল্পকে একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে ঘোষনা প্রদান করলেও দীর্ঘদিন অবহেলিত। ফলে বেসরকারীভাবে আজো ওই স্থানে কোন হোটেল-মোটেল নির্মান হয়নি।

কুমিল্লা থেকে আসা কলেজ ছাত্রী উম্মে হানী জানান, পর্যটনের জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও এখানে কোন ভাল হোটেল রেস্তোরা নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় পর্যটকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শুরুতে সরকারীভাবে দ্বিতল একটি ভবন নির্মান করে ডাকবাংলা ঘোষণা দিলে ও তার অবস্থা এখন একেবারে নাজুক। সংস্কারের অভাবে ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। এছাড়া সোনাগাজীর দর্শনীয় স্থানের মাঝে রয়েছে ইরি বোরো ধানের ওপর গবেষনার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান সোনাগাজী ধান গবেষনাগার। এখানে কর্মরত রয়েছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ। সোনাগাজী বাজার সংলগ্ন স্থানে রয়েছে হাঁস নিয়ে দেশের একমাত্র গবেষনাগার আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার। পাশে রয়েছে মেষের লোম দিয়ে হাতের তৈরি উন্নত ধরনের কার্পেট বুনন শিল্প।এসব দেখার জন্য সারা বছরই ভিড় করছে দর্শনার্থীরা। এর পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে করে ফেনীর পর্যটন শিল্প থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করা সম্ভব।সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম বলেন, সোনাগাজীবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকাকে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা ।