দৈনিকবার্তা-বাগমারা(রাজশাহী), ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে অজ্ঞাত এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কয়েকজন মুসল্লি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের সময় এ ঘটনা ঘটে। এসময় আরও ১০ জন আহত হন। এদের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটে।পরে পুলিশ মসজিদটি ঘিরে রাখে।ওই মসজিদে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন নামাজ পড়েন বলে জানা গেছে।মসজিদের কয়েকজন মুসল্লির ভাষ্য, বাগমারার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের মচমইল সৈয়দপুর বকপাড়া আহমদিয়া জামে মসজিদে দুপুর দেড়টার দিকে জুমার নামাজ শুরু হয়। প্রথম রাকাতের নামাজ শেষ হওয়ার পরই এক যুবক তাঁর কাছে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। বিস্ফোরণে ওই যুবকেরই মৃত্যু হয়। এ সময় বোমার আঘাতে বেশ কয়েকজন মুসল্লি আহত হন।আহত মুসল্লিদের উদ্ধার করে রাজশাহী, বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো ওই যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
মতিয়ার রহমান বলেন,এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশের স্বতন্ত্র বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (পিবিআই) পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বেলা দুইটার পরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,মসজিদের ভেতর ছোপ ছোপ রক্ত। মসজিদের ভেতরে অজ্ঞাত হামলাকারীর লাশ পড়ে আছে। সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। বোমা বিস্ফোরণকারী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ওই যুবকের গায়ে কালো রঙের জ্যাকেট রয়েছে।স্থানীয় লোকজন জানান, ২০০০ সালে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছেন।রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর চকপাড়া আহমেদিয়া জামে মসজিদে আত্মঘাতীবোমায় মারা গেছেন হামলাকারী।মসজিদের মুসল্লিদের বরাত দিয়ে রাজশাহীর বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে জানান,জুমার নামাজ শুরুর পর প্রথম রাকাত আদায় হয়। দ্বিতীয় রাকাতে যাওয়ার সময় একজন দুষ্কৃতকারী তার কোমরে থাকা বোমা বের করতে গেলে তা বিস্ফোরিত হয়। এতে হামলাকারী ঘটনাস্থলেই মারা যান।তবে স্থানীয়রা তাকে শনাক্ত করতে না পারায় প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বাইরে থেকে গিয়ে এ হামলা চালানো হয়েছে। ওই সময় তার সঙ্গে আরও একজন ছিলো।
তবে ঘটনার পর তাকে আর সেখানে পাওয়া যায়নি।খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং মসজিদ এলাকা ঘিরে ফেলে। বর্তমানে আশপাশের এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে।রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।
স্থানীয়রা বলছেন, মচমইল সৈয়দপুর চকপাড়া আহমদিয়া মুসলিম জামাতের ওই মসজিদে দুপুর দেড়টার দিকে জুমার নামাজ শুরুর পর দ্বিতীয় রাকাতে এক যুবক পোশাকের নিচ থেকে বোমা বের করে বিস্ফোরণ ঘটান।ওসি মতিয়ার রহমান জানান, বিস্ফোরণে হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় জানা যায়নি। আহতদের মধ্যে ময়েজ উদ্দিন, সায়েব আলী এবং নয়ন নামে ১২ বছর বয়সী এক বালককে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনই ওই মসজিদে নামাজ পড়তেন। বিস্ফোরণের পর পুলিশ মসজিদটি ঘিরে রেখেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে
কারা এ হামলা চালিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ২০০৩-০৪ সালে এই বাগমারা এলাকাতেই জেএমবির শুরা কমিটির প্রধান সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি নামে একটি জঙ্গি দল সক্রিয় হয়ে ওঠে। সম্প্রতি রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা এবং দিনাজপুরে মন্দিরে হামলা ও ইতালীয় পাদ্রী হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন ঘটনায় জেএমবির জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মুসলমানদের একটি মসজিদে ঢুকে নামাজরতদের ওপর গুলি চালানো হলে মুয়াজ্জিন নিহত এবং তিনজন আহত হন।তার একমাস আগে গত ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে বোমা হামলায় দুইজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন।
এরপর ১০ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার দারুস সালামে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বাণী ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ভাই নামে একজন নিহত হলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিহত ওই যুবক ছিলেন জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন।মাহফুজের আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ ছিল এবং তিনি হোসাইনী দালানে বোমা হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন বলেও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে একটি মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। তবে কারা ওই হামলা চালিয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায় এর আগেও বিভিন্ন সময়ে উগ্রপন্থি হামলার শিকার হয়েছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এরকম বহু হামলার ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। ২০১৩ সালে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও আহমদিয়াদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি তোলে।