দৈনিকবার্তা-টাঙ্গাইল, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫: পৌরসভা নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাবেদ আলী। সোমবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে টাঙ্গাইলের ৮টি পৌরসভা নির্বচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা জানান। এ সময় তিনি বলেন, সকল প্রার্থীই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে যা যা করা প্রয়োজন সকলের সহযোগিতায় তার সবই করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জে. মোহাম্মদ জাবেদ আলী বলেন, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের প্রবেশে আলাদা কোনো নীতিমালা করা হয়নি। তবে ভোটার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের লক্ষ্য রাখতে হবে।তিনি বলেন, পৌর নির্বাচনের পরিবেশ এখনো অনেক ভালো রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে কমিশনের যা যা করণীয় তাই করা হবে। পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় প্রস্তুত রয়েছে। আশা করি আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারব।তিনি আরো বলেন, কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাসের জেল হতে পারে তার।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাসের জেল হতে পারে। ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের প্রবেশে আলাদা কোনো নীতিমালা করা হয়নি। তবে ভোটার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের লক্ষ্য রাখতে হবে। জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার হোসেন, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ মো. খুরশিদ আনোয়ার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তাজুল ইসলামসহ পৌর নির্বাচনের মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, পৌর ভোটের আর আর নয় দিন বাকি। ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়র প্রার্থীদের ব্যালট পেপার ছাপানো শেষ করার কর্মপরিকল্পনা ছিল নির্বাচন কমিশনের।গত ৫ ও ৬ ডিসেম্বর মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদে বাছাইয়ে ঋণখেলাপি, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য, সমর্থন তালিকার স্বাক্ষরে ভুলসহ নানা ত্র“টিতে হাজার খানেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল, যাদের অনেকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়।
রোববার পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে প্রায় দুইশ’ প্রার্থীর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া সংক্রান্ত আদালতের আদেশ পৌঁছেছে; যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে ব্যালট পেপার ছাপাতে হচ্ছে ইসিকে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে ১৪ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর মেয়র প্রার্থীদের ব্যালট পেপার ছাপানো শুরু হয়। ২৩৪ পৌরসভার সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের বেশিরভাগ ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে গেছে। মেয়র পদের নাম ও প্রতীক দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো চলছে। তবে বৈধ প্রার্থী হিসেবে আদালতের আদেশ পাওয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকায় কিছু পৌরসভার ব্যালট পেপার ছাপানো বন্ধ রয়েছে, বলেন ব্যালট পেপার মুদ্রণের তদারকির দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদে এ মুহূর্তে প্রার্থী বাড়লে জটিলতা কিছুটা কম, তবে মেয়র পদে প্রার্থী এলে নতুন ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে।ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. শাহজাহান বলেন, এ পর্যন্ত ১৯৪ জনের বিষয়ে আদেশ পেয়েছেন তারা। আদালতের আদেশ মেনে সংশ্লিষ্টদের বৈধ প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতীক দিতে হবে।ব্যালট পেপার ছাপানোর পর এই ধরনের প্রার্থী নতুন যোগ হওয়াটা সমস্যা মনে করছেন কি না- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ব্যালট পেপার ছাপানো হলেও কিছু করার নেই। আদালতের আদেশ মানতে হবে।
ইসির একজন উপ সচিব জানান, কাউন্সিলর পদে কমন ব্যালট পেপার থাকায় প্রার্থী বাড়লেও সমস্যা নেই। ইতোমধ্যে কাউন্সিলরদের সব ও মেয়র পদে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। অতিরিক্ত প্রতীকে করতে গেলে সমস্যা হবে না।তবে মেয়র পদে প্রার্থী বাড়লেই ছাপানো ব্যালট নষ্ট করতে হবে, নতুন প্রার্থীকে নিয়ে নতুন করে ছাপাতে হবে ব্যালট পেপার।৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে হবে, বলেন তিনি । মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদের জন্য ভোটার সংখ্যার তিন গুণ হিসেবে ২ কোটি ১০ লাখের বেশি ব্যালট পেপার ছাপবে ইসি। পৌরসভায় তিনটি পদে ২৩৪ পৌরসভায় ১৩ হাজারারেও বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড়ায় ১২ হাজার ৪৩ জন।বাদ পড়াদের মধ্যে মেয়র পদে দেড় শতাধিক জন রয়েছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন ১৬২ জন। বাকিগুলোর মধ্যে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বাদ পড়েছে পাঁচ শতাধিক।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, সময় হাতে রয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের আগের দিন ব্যালট পেপার পৌঁছাতে হবে। এতো আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করাও সম্ভব না।তবে মেয়র পদে বাছাই করে কয়েকটি ক্ষেত্রে আপিল করা হতে পারে বলে জানান তিনি।১৭ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে শীতকালীন অবকাশ রয়েছে। তবে জরুরি বিষয় নিষ্পত্তিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ থাকছে। আদালতে ছুটি থাকায় গত সপ্তাহের মতো আর বেশি প্রার্থিতা ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।