Rana-plaza

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫: রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক ২৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আগামী ২৭ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারক হাকিম আল আমিন এ আদেশ দেন।সরকারি কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবির বলেন, গত ১ জুন রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ ৪১ জনের বিরুদ্ধে আদালতেঅভিযোগপত্র দেয়। সেই অভিযোগপত্র আজ আদালত গ্রহণ করে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

এই মামলায় ১৬ আসামি জামিনে আছেন। মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা কারাগারে।চলতি বছরের ১ জুন হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আসামির মধ্যে ২৪ জন পলাতক আছেন।২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়ে সহস্রাধিক পোশাকশ্রমিক প্রাণ হারান। ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৫ এপ্রিল সাভার থানায় দুটি মামলা করা হয়।

বিচারক মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২৭ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, ওই দিন পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারির পাশাপাশি তাদের মালামাল জব্দ করতেও বিচারক আদেশ দেন বলে তিনি জানান।এদের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া ৫ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করায় মামলাটির বিচার উচ্চ আদালতে গিয়ে ঝুলে যেতে পারে বলে মনে করেন ফৌজদারি মামলায় অভিজ্ঞ আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো।

পলাতক আসামিরা হলেন- সাভার পৌরসভার সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, পৌর নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সাবেক উপ-প্রধান পরিদর্শক মো. আব্দুস সামাদ, উপ-প্রধান পরিদর্শক (সাধারণ, ঢাকা বিভাগ ) মো. জামশেদুর রহমান, উপ-প্রধান পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগের পরিদর্শক (প্রকৌশল) মো. ইউসুফ আলী, ঢাকা বিভাগের পরিদর্শক (প্রকৌশল) মো. সহিদুল ইসলাম, রাজউকের ইমারত পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেন, ইতার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, মো. শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, মো. আতাউর রহমান, মো.আব্দুস সালাম, বিদ্যুৎ মিয়া, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, রেজাউল ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাকটার, মো. আব্দুল হামিদ, আব্দুল মজিদ, মো. আমিনুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, মো. ইউসুফ আলী ও তসলিম।

এদের মধ্যে আব্দুস সামাদ, জামশেদুর রহমান, বেলায়েত হোসেন, ইউসুফ আলী ও সহিদুল ইসলাম সরকারি কর্মকর্তা।পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর পাঁচজনের বিষয়ে মঞ্জুরি আদেশ চাওয়া হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তারা জড়িত নয়’ মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দেয়।কিন্তু আদালতের কাছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় মঞ্জুরি আদেশ ছাড়াই চার্জশিট গ্রহণ করেছেন।

পলাতক ২৩ জনের বাইরে অভিযোগপত্রভুক্ত ১৮ আসামির মধ্যে শুধু ভবন মালিক সোহেল রানা ছাড়া বাকিরা জামিনে আছেন।এরা হলেন- রানার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক, মা মর্জিনা বেগম, রেফাত উল্লাহ, মোহাম্মাদ আলী খান, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান রাসেল, বজলুস সামাদ আদনান, মাহমুদুর রহমান তাপস, আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, মো, সারোয়ার কামাল, উত্তম কুমার রায়, অনিল দাস, শাহ আলম, আবুল হাসান, মোহাম্মদ আলী খান ও রাকিবুল হাসান।২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আট তলা রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও হাজারখানেক শ্রমিক, যারা ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

এঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুই মামলায় চলতি বছরের ১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ( সিআইডি) সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম ৪২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।এরপর ৮ জুলাই ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক ছয় আসামির বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও হত্যামামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ৫ সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে মঞ্জুরি আদেশ না থাকায় একাধিকবার শুনানি পেছানো হয়।দুই মামলার মধ্যে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে রানা, তার মা ও বাবাসহ ১৭ জন দুই মামলাতেই আসামি হওয়ায় মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ জন।হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে ৫৯৪ জন এবং ইমারত আইনের মামলায় ১৩০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।