62056_tofayel20151218191611

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, কয়েকটি পত্রিকায় ৩০ লাখ পোশাকশ্রমিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, তা সর্বৈব মিথ্যা। যে সংগঠনের নামে এটা প্রকাশ করা হয়েছে, তিনি জীবনেও সেটির নাম শোনেননি।সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধায় শতকরা ৭৫ ভাগ আউটসোর্সিং সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। গার্মেন্টস, কেমিকেল, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিতে পাবে সিঙ্গল ট্রান্সফর্মেশন সুবিধা। সেবাখাতের জনশক্তি রপ্তানিও বেশ সুবিধা পাওয়া যাবে।

১৫-১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের বিভিন্ন তথ্য জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তির যে সমস্যা হয়েছিল, আস্তে আস্তে তা কেটে গেছে। এখন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স ( পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে বিদেশি ক্রেতাদের দুই জোট) আমাদের সার্টিফিকেট দিচ্ছে যে পোশাক খাতে তেমন ঝুঁকি নেই। তারা সন্তুষ্ট। ঠিক এ মুহূর্তে এ ধরনের সংবাদ করায় আমি দুঃখিত ও খুবই ব্যথিত। বাণিজ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে দেশের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানান।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ডব্লিউটিও সম্মেলনে উৎসবিধি (রুলস অব অরিজিন) ও সেবা খাতের বাণিজ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধেরক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব-সংক্রান্ত অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়টিও সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এতে দরিদ্র মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে ওষুধ পাওয়া নিশ্চিত হবে।বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে এসেছেন বলে জানালেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।তিনি বলেন, আত্মসম্মানবোধের কারণে মন্ত্রী পর্যায়ের ওই সম্মেলনে জিএসপি সুবিধার প্রসঙ্গ তিনি তুলেননি।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ধরেন, হংকংয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ৯৭ শতাংশ ট্যারিফ নির্ধারণ করে ডিউটি ফ্রি দেওয়ার কথা ছিল। পৃথিবীর অনেক দেশ করেছে; আমরা নাম নিলাম না।সিঙ্গাপুরে বাজার সুবিধাপ্র্রস্তাব আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে করেছিলাম। যারা সেদিন বিরোধিতা করেছিল, তারা ঘোষণপত্রে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলে। সেই সব দেশ, পৃথিবীর বহু দেশ আমাদেরকে বাজার প্রবেশাধিকার দিয়েছে।

তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) এর আবেদনে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়।তার আগে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেসের (জিএসপি) আওতায় বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারত।চলতি বছরের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১২২টি দেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) নবায়ন করা হলেও সেই তালিকায় আসেনি বাংলাদেশ।

সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব দেওয়া তোফায়েল আহমেদ সম্মেলনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের সন্তান হিসাবে আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভবিষ্যতেও দাঁড়াব। আমরা অন্যের দ্বারস্থ হব না। সেই কারণেই আমরা বাংলাদেশ বাংলাদেশ করি নাই।জিএসপি সুবিধা না দেওয়া বা স্থগিতের কথা সম্মেলনে তুলেননি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কারণ আমি মন্ত্রী হিসাবে সম্মানিত একটা জাতির প্রতিনিধিত্ব করি। আছে না, দেখা হলেই বলে, আমাদেরকে এটা দেবেন না? আর কতদিন আটকাইয়া রাখবেন?বরং আমি বলেছি, আমাদের অর্থনীতি ভালো হচ্ছে। তোমাদের দেশেও আমরা বেশি পণ্য রপ্তানি করছি। এই বছর এটা ছয় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তোমাদের দেশে আমাদের সবেচেয়ে বেশি পণ্য যায়।

ওষুধ শিল্প নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ফার্মাসি নিয়ে আজ কথা হল, কেনিয়াতে একটা ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে; ওই একটাই মনে হয়।যে কোনো স্বল্পোন্নত দেশ থেকেই বাংলাদেশের অবস্থান ভিন্ন।বাংলাদেশের অবস্থা এই মুহূর্তে পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে ভালো দাবি করে তোফায়েল বলেন, ভানুয়াতুর লোক সংখ্যা হয়তো এক লাখ হবে। মালদ্বীপ, লোকসংখ্যা ৫ লাখও হবে না।আবার আফ্রিকান দেশ নাইজেরিয়া। তাদের এক মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা রপ্তানি কত? বললেন, আমাদের রপ্তানি ৯০ মিলিয়ন ডলার ছিল। তেলের দামের কারণে এখন চল্লিশে নেমে এসেছে। আমরাও তো কাছাকাছি। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) সভাপতি মাহবুবুর রহমানসহ ডব্লিউটিও সম্মেলনে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।