দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫: গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণে একটি নীতিমালা সোমবার অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদনদেওয়া হয়।পরে এ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা আজ মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। এই নীতির মূল কথা গৃহ শ্রমিকদের জন্য শোভন কাজ, নিরাপদ বিশ্রাম, বিনোদন ছুটি ও মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা। জেনেভা কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই নীতিমালা অনুমোদন করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ আইনের আলোকে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে গৃহকর্মীর বয়স হবে ন্যূনতম ১৪ বছর। ১৪ থেকে ১৮ বছরের শ্রমিকেরা হালকা কাজ করতে পারবে। আর ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা হালকা ও ভারী কাজ করতে পারবেন।মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, মালিক ও গৃহ শ্রমিকের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ করা হবে। গৃহ শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি হবে ১৬ সপ্তাহ। আর অন্যান্য ছুটি আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক করা হবে। কোনো গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হলে এর বিচার হবে প্রচলিত আইনে। গৃহ শ্রমিকদের জন্য হেল্পলাইন চালু করা হবে বলেও তিনি জানান।গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণে একটি নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।এর ফলে গৃহকর্ম শ্রম হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এবং সবেতনে চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছাড়াও অন্য ছুটি ভোগ করতে পারবেন গৃহকর্মীরা।মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই নীতিমালা অনুমোদন পাওয়ায় শ্রম আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
তিনি বলেন, সর্বনিম্ন ১৪ বছরের কাউকে গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া যাবে। গৃহকর্মীদের শ্রমঘণ্টা এবং বেতন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।এই নীতিমালা অনুমোদনের ফলে গৃহকর্ম শ্রম হিসেবে স্বীকৃত পাবে এবং চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন গৃহকর্মীরা।নীতিমালায় গৃহকর্মীদের বিশ্রামের পাশাপাশি বিনোদনের সময় দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।গৃহকর্মী নির্যাতনের বহু অভিযোগের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্যাতন করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নেবে। বৈঠকে জাতীয় সংসদে ২০১৬ সালের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ডকে একীভূত হওয়ায় ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়ায়ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।১৯৫৭ সালে প্রণিত বালাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন আইনটিকে বাংলায় অনুবাদ করে সেটির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভায়।এছাড়া সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক আইনের খসড়ায়ও নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান শফিউল আলম।শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালার আলোকে পরে আইন করা হবে।২০১০ সালের এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজধানীতে তখন ২০ লাখ গৃহকর্মী ছিল। তবে এখন এই সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।সারাদেশে কতজন গৃহকর্মী রয়েছেন, সেই তথ্য সরকারের কাছে নেই বলে স্বীকার করেন প্রতিমন্ত্রী।
নীতিমালায় যা আছে : গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালার একটি অনুলিপি হাতে পেয়েছে ।এতে বলা হয়েছে, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গৃহকর্মীর মজুরি নির্ধারিত হবে। পূর্ণকালীন গৃহকর্মীর মজুরি যাতে তার পরিবারসহ সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের উপযোগী হয় নিয়োগকারীকে তা নিশ্চিত করতে হবে।তবে গৃহকর্মীর ভরণ- পোষণ,পোশাক-পরিচ্ছদ দেওয়া হলে তা মজুরির অতিরিক্ত বলে গণ্য হবে।গৃহকর্মী নিয়োগে শ্রম আইনের বিধান অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কমপক্ষে ১৪ বছর বয়সের কাউকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে।তবে ১২ বছর বয়সের কাউকে গৃহকর্মী রাখতে হলে তার আইনানুগ অভিভাবকের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষের উপস্থিতিতে নিয়োগকারীকে আলোচনা করতে হবে।
তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে এই আলোচনা, চুক্তি, সমঝোতা বা ঐকমত্যের সময় নিয়োগের ধরন, তারিখ, মজুরি, বিশ্রামের সময় ও ছুটি, কাজের ধরন, থাকা-খাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং গৃহকর্মীর বাধ্যবাধকতা- এসব বিষয়ের উল্লেখ রাখতে বলা হয়েছে।নীতিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক গৃহকর্মীর কর্মঘণ্টা এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে যাতে তিনি পর্যপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন ও প্রয়োজনীয় ছুটির সুযোগ পান।গৃহকর্মীর ঘুম ও বিশ্রামের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্থানও নিশ্চিত করতে বলেছে সরকার।নীতিমালা অনুযায়ী,অসুস্থ অবস্থায় কোনো গৃহকর্মীকে দিয়ে কাজ করানো যাবে না। নিয়োগকারীকেই নিজের অর্থে গৃহকর্মীর চিকিৎসা করাতে হবে। এছাড়া গৃহকর্মীকে তার নিজের ধর্ম পালনের সুযোগ দিতে হবে।
কর্মরত অবস্থায় কোনো গৃহকর্মী দুর্ঘটনার শিকার হলে চিকিৎসাসহ দুর্ঘটনা ও ক্ষতির ধরন অনুযায়ী নিয়োগকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।গৃহকর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, দৈহিক বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, গৃহকর্মীর উপর কোনো হয়রানি ও নির্যাতন হলে বিচারের দায়িত্ব সরকারের।এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র, শ্রম, মহিলা ও শিশু এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ও সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী দেবে।কোনো গৃহকর্মী নিয়োগকারী, তার পরিবারের সদস্য বা অতিথিদের দ্বারা শারীরিক, মানসিক বা যৌন হয়বানির শিকার হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহকর্মী নির্যাতন বা হয়বানির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানা যেন দ্রুত ও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দাপ্তরিক নির্দেশনা জারি করতে হবে।কোনো গৃহকর্মী যৌন হয়রানি, যৌন নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করলে সরকারি খরচে সেই মামলা পরিচালিত হবে।
গৃহকর্মী যদি কর্মরত পরিবারের শিশু, অসুস্থ ও বৃদ্ধ ব্যক্তিসহ কোনো সদস্যের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বা পীড়াদায়ক আচরণ করেন তাবে নিয়োগকারী তার নিয়োগ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।কাউকে না জানিয়ে গৃহকর্মী চলে গেলে নিয়োগকারী সংশ্লিষ্ট থানার জিডি করতে পারবেন। তবে অর্থ বা মালামাল নিয়ে গৃহকর্মী ভাগলে সেক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন নিয়োগকারী।নিয়োগকারী পূর্ণকালীন গৃহকর্মী নিয়োগ দিয়ে তার ছবিসহ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করতে পারবেন।স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ করতে হলে এক মাস আগে জানাতে হবে। গৃহকর্মীও যদি চাকরি ছাড়তে চান তবে নিয়োগকারীকে তা এক মাস আগে জানাতে হবে।তবে তাৎক্ষণিকভাবে কেউ গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দিলে এক মাসের মজুরি দিতে বিদায় করতে হবে।এই নীতিমালা বাস্তবায়নে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি তদারকি সেল থাকবে।
এছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় আঞ্চলিক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা-উপজেলায় যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।এদিকে, দশম জাতীয় সংসদে ২০১৬ সালের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদেয় ভাষণের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সেইসঙ্গে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট আইন ২০১৫, ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন আইন, ক্যাপিটাল সাবসক্রিবশন এবং পেইড ইন অংশে অর্থ পরিশোধের প্রস্তাবের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সংসদে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসরা মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। তবে, কিছু ধারা সংযোজন বিয়োজনের প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে দুই থেকে তিন দিন সময় দেয়া হয়েছ। তাদের সংশোধনী যোগ করার পর এটি চূড়ান্ত অনুমোদন করা হবে।মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-২০১৫ এর আইন চূড়ান্ত করেছে। এ সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এবং বিনিয়োগ বোর্ড একত্রিত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন করা হয়েছে। এবং এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এদিকে এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট আইন-২০১৫ এর খসরার নীতিগত অনুমোদন ও ক্যাপিটাল সাবসক্রিবশন এবং পেইড ইন অংশে অর্থ পরিশোধের প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া বাংলাদেশ ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন আইন ২০১৫ এর খসরা চূড়ান্ত অনুমোদন কার হয়েছে। এ আইনটি ১৯৫৭ সালে প্রণীত হয়েছিল। বর্তমানে এটি বাংলায় অনুবাদ করে আপডেট করে পেশ করলে মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করে।ঢাকা : দশম জাতীয় সংসদে ২০১৬ সালের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদেয় ভাষণের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সেইসঙ্গে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট আইন ২০১৫, ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন আইন, ক্যাপিটাল সাবসক্রিবশন এবং পেইড ইন অংশে অর্থ পরিশোধের প্রস্তাবের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সংসদে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসরা মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। তবে, কিছু ধারা সংযোজন বিয়োজনের প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে দুই থেকে তিন দিন সময় দেয়া হয়েছ। তাদের সংশোধনী যোগ করার পর এটি চূড়ান্ত অনুমোদন করা হবে।মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-২০১৫ এর আইন চূড়ান্ত করেছে। এ সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এবং বিনিয়োগ বোর্ড একত্রিত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন করা হয়েছে। এবং এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
এদিকে এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট আইন-২০১৫ এর খসরার নীতিগত অনুমোদন ও ক্যাপিটাল সাবসক্রিবশন এবং পেইড ইন অংশে অর্থ পরিশোধের প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া বাংলাদেশ ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন আইন ২০১৫ এর খসরা চূড়ান্ত অনুমোদন কার হয়েছে। এ আইনটি ১৯৫৭ সালে প্রণীত হয়েছিল। বর্তমানে এটি বাংলায় অনুবাদ করে আপডেট করে পেশ করলে মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করে।