11399-electionamar-sangbad

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব আর আচরণবিধি লঙ্ঘন বড় অন্তরায় বলে মনে করেন তারা।শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে তাদের গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে সংগঠনটি।সুজন সম্পাদক বলেন, ফেনীতে অধিকাংশ পৌর সভায়ই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে প্রার্থীরা। এমনকি অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছ।এ অবস্থায় জনগণ যেন তাদের ভোটাধিকার সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টিরও তাগিদ দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক।

নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের আধিক্য স্থানীয় পর্যায়ে কর্তৃত্ব বাড়াবে উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন, হলফনামার তথ্য নিয়ে এবার যথেচ্ছাচার হয়েছে। যে যা পেরেছে তথ্য দিয়েছে। যেন কেউ নেই, এগুলো খতিয়ে দেখার। প্রার্থীর মধ্যে ব্যবসায়ীর অনুপাত কম দেখা যায়, কিন্তু যাঁরা নির্বাচিত হবেন, দেখা যাবে তাদের ৮০ শতাংশই ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু সব ব্যবসায়ীই যদি হয় তবে শুধু ব্যবসায়ীর স্বার্থই তো সেখানে সমন্বিত হবে।আসন্ন পৌর নির্বাচনে ৯০৪ জন মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে হত্যামামলা রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭ জন, বিএনপির ১৫ জন এবং অন্যান্য দলের ১৪ জন রয়েছেন।সুজনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপির প্রার্থীদের মামলা বেশি। বর্তমানে মোট ৯০৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ২১৯ জন অর্থাৎ ২৪.২২ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মোট ৬৭৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী ৩৩, বিএনপির ৯৬ এবং অন্যান্য ৯০ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

অতীতে মোট প্রার্থীর মধ্যে ৩২১ জন অর্থাৎ ৩৫.৫০ শতাংশের বিরুদ্ধে ৯৫০টি মামলা ছিল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১০২ জনের বিরুদ্ধে, বিএনপির ১০৯ জন ও অন্যান্য ১১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ছিল।সুজন আরো জানায়, অতীতে মোট ৬১ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যামামলা ছিল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২২ জন, বিএনপির ১৯ জন এবং অন্যান্য দলের ২০ জন। আর উভয় সময়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা ছিল বা আছে।আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মোট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ২২৪ জনই স্কুলের গণ্ডি পেরুতে পারেনি। নিরক্ষর বা স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থীর শতকরা হার আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপিতেই বেশি।

প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩৪১ জনের (৩৭.৭২%) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। আওয়ামী লীগের ২২১ প্রার্থীর মধ্যে এই সংখ্যা ৯০ অর্থাৎ ৪০.৭২ শতাংশ, আর বিএনপির ২০৬ প্রার্থীর মধ্যে ৮৩ জন (৪০.২৯%)। ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ২২৪ জন (২৪.৭৭%) বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরুতে পারেননি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪০ জন (১৮.১%) এবং বিএনপিরও ৪০ জন (১৯.৪২%)। তবে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় শতকরা হারে বিএনপিতেই বেশি।

বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থা প্রায় একই রকম হলেও, নিরক্ষর বা স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থীর শতকরা হার বিএনপিতেই বেশি। প্রার্থীদের পেশা সম্পর্কে দিলীপ কুমার বলেন, ৯০৪ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৬৫২ জনই (৭২.১২%) ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের ২২১ প্রার্থীর মধ্যে এ সংখ্যা ১৬৫ জন (৭৪.৬৬%), বিএনপির ২০৬ প্রার্থীর মধ্যে ১৬২ জন (৭৮.৬৪%)। অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার প্রায় ৪% বেশি।লিখিত বক্তব্যে প্রার্থীদের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন দলভিত্তিক এবং দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই দেশবাসীর বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে এই নির্বাচনকে ঘিরে। তবে নির্বাচনটি কেমন হবে, তা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। ইতোমধ্যেই ঘটে যাওয়া কিছু কিছু ঘটনা এই সন্দেহ ও সংশয়কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুজন নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।