দৈনিকবার্তা-চট্রগ্রাম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশ সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, দায়িত্বপালনে সব সময় সজাগ থেকে নিজেদের দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। সেনাবাহিনীর প্রধান ও অগ্রগন্য ব্রত হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। তিনি চট্রগ্রামের ভাটিয়ারীতে ৭৩তম বিএমএ লং কোর্স ও ৪৩তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের ক্যাডেটদের কমিশন প্রদান উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট প্যারেডে ভাষণকালে এ আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী নতুন ক্যাডেটদের বলেন, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৃহৎ কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আপনাদের উপর ন্যাস্ত হতে যাচ্ছে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আপনাদের সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুত থাকতে হবে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে আপনাদের জীবনের একমাত্র ব্রত।
নতুন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও পেশাগত সততা অক্ষুন্ন রেখে দেশ ও জনগণের সেবায় ব্রতী হতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান।তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির জন্য এক গর্ব ও অহংকারের প্রতিষ্ঠান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে সেনাবাহিনী আজ দেশে-বিদেশে সুনাম ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিক ও নতুন কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাটেডদের অভিভাবকগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মাদ শফিউল হক, বিএমএ কমান্ড্যান্ড মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এম শফিকুর রহমান তাঁকে স্বাগত জানান।
প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সুসজ্জিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও দৃষ্টিনন্দন মার্চ পাস্টের অভিনন্দন গ্রহণ করেন। একাডেমীতে কৃতিত্বের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ ক্যাডেটদের পদক প্রদান করেন। চলতি বছর শ্রীলংকার ১ জন ও নেপালের ১ জনসহ মোট ১৯৪ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। এর মধ্যে ৮ জন মহিলাসহ ১৮৯ জন ক্যাডেট ৭৩তম বিএমএ লং কোর্স এবং ৫ জন হচ্ছেন বিএমএ স্পেশাল কোর্সের।ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. আহসান উল্লাহ সর্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সোর্ড অব অনার এবং কোম্পানী সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. রুহানী রাব্বি হামজা সামরিক বিষয়ে পারদর্শিতার জন্য স্বর্ণ পদক লাভ করেন।ক্যাডেটবৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী তাদের র্যাঙ্ক ব্যাজ পরিয়ে দেন।
ড্রাম, বাদ্যযন্ত্রের উদ্দীপক ধ্বনি এবং দেশাত্মকবোধক সঙ্গীতের সুরে মুগ্ধ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ঘণ্টাব্যাপী এই কুচকাওয়াজ ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশিষ্ট সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সামরিক ও প্রতিরকক্ষা অ্যাটাসেবৃন্দ, স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ক্যাডেটদের অভিভাবকবৃন্দ আকর্ষণীয় ও বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।স্মার্ট, কর্মদক্ষ ও আধুনিক সশন্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ সেবার অঙ্গীকার নিয়ে আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছেন। আজ আপনারা পেশাজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন এবং পেশাগত জীবনে আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনারা ও সাধারণ জনগণের অভিভাজ্য অংশ। আমি আশা করি আপনারাও তাদের সুখ ও দুঃখের অংশীদার হবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি দেশ ও জনগণের জন্য আপনারা নিঃস্বার্থ ও আন্তরিকভাবে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একাডেমীতে পরিণত করেছি। এখানে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এই কমপ্লেক্স বিএমএ’র প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডে নতুন গতির সঞ্চার করেছে। এই একাডেমীতে ইতোমধ্যেই ৪ বছর মেয়াদি অনার্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি চালু করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সেনাবাহিনীর উন্নত প্রশিক্ষণ, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ও আধুনিকায়নে এ উদ্যোগ যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। শেখ হাসিনা বলেন, গত ৭ বছরে আমাদের সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি গতিশীল, চৌকস এবং যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে আমরা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বের বুকে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরা। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রতিশ্র“তিশীল দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের দেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। আমাদের সেনাবাহিনী দেশে ও বিদেশে অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বীয় দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সুনাম অক্ষুণœ রেখে সেনাবাহিনীকে উত্তরোত্তর উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,‘বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষ শান্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানবে এটিই আমার প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও আমাদের জাতীয় উন্নয়নে বেসাময়িক প্রশাসনকে সহায়তা করার কাজেও সশন্ত্রবাহিনীর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, সেনাবাহিনীর সদস্যদের ত্যাগ ও সাহসী ভূমিকার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ শান্তি বিরাজ করছে এবং সেখানে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের আগে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সমৃদ্ধ উন্নত দেশে উন্নীত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন ক্যাডেটরা জনগণের সঙ্গে একত্রে কাজ করে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করবেন।