দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫: দুদকের সার্বিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করলে দেখতে পাই, দুদকের অব্যাহতির তালিকায় বিরোধী দলের সংখ্যা খুব কম।’আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। বুধবার দুপুরে দুদক কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে গোলাম সারওয়ার বলেন, বর্তমান কমিশনের সময় অনেক হাই-প্রোফাইল মন্ত্রী ও আমলাকে দুদক কার্যালয়ে হাজির করা হয়েছে; এটা সত্যি। কিন্তু শুধু হাজির করাই যথেষ্ট নয়। তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যত কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, গণমাধ্যম আমাদের ভালো কাজগুলো প্রচার করে না। তারা কেবল আমাদের সমালোচনা করে। দুদক কাউকে দায়মুক্তি দেয় না।
আমরা কেবল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই অনুসন্ধান ও তদন্তকাজ এগিয়ে নেই।সাবেক এই জেলা জজ বলেন, সরকার বা বিরোধী দল সবাই আমাদের কাছে সমান। আমরা ব্যক্তি না দেখে ব্যক্তির অপরাধ দেখি। মুক্তিযুদ্ধের সনদ জালিয়াতিতে আমরা অত্যন্ত হাই-প্রোফাইল ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ওই অনুসন্ধানের সময় অনেকেই বলেছেন, দুদক কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু আমরা তা করে দেখিয়েছি। গোলাম সারওয়ার বলেন, দুর্নীতিতে রাজা-মহারাজা খ্যাত অনেক দুর্নীতিবাজ দুদক থেকে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন। আমরা এও জানি যে তথ্য-প্রমাণ ছাড়া দুদকেরও কিছু করার নেই। তবে সর্বজন স্বীকৃত দুর্নীতিবাজরা ছাড়া পেলে মানুষের মাঝে দুদক সম্পর্কে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, জিরো টলারেন্স বলা সহজ, তবে করা কঠিন। দুর্নীতির শিকল ভেঙে ফেলা কঠিন কাজ। এটি করতে হলে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে দুদকের মূল স্লোগান ভেঙে ফেলো দুর্নীতির শিকল’ এর প্রসঙ্গ তুলে জ্যেষ্ঠ এ সাংবাদিক বলেন, বাস্তবে এটা একটি অত্যন্ত দুরূহ কাজ। দুদক সেই দুরূহ কাজটি করছে। এই কাজ করতে গিয়ে দুদককে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। সেটাই স্বাভাবিক।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, দুদকের সমালোচনা হচ্ছে, হবেই। এর মানে দুদক কাজ করছে। আর কাজ করলে সমালোচনা হবে। তবে সব মিডিয়াকে বলব, আপনারা গঠনমূলক সমালোচনা করুন। এর আগে সকালে সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি কাকরাইল মোড়, বিজয়নগর, তোপখানা রোড হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে যায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পর মৎস্য ভবন হয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে সেটি শেষ হয়।
মানববন্ধনে দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিকে একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে সবার সহযোগিতা চান। দেশপ্রেমের শপথ নিয়ে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। আমরা চাই এ কাজে সাধারণ জনগণ, সুশীল সমাজ সবাই আমাদের সঙ্গে থাকুক। আমরা এভাবেই নিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই।
শোভাযাত্রায় দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন, কমিশনার (অনুসন্ধান) নাসিরউদ্দীন আহমেদসহ কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দুদকের প্যানেল আইনজীবী, দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) সদস্যরাসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ যোগ দেন। ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশ জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষরের করার পর থেকে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্যাপন করে আসছে কমিশন।